মার্কিন কংগ্রেসে প্রস্তাবনা: ইসরায়েলকে গণহত্যাকারী বলা হোক

গাজায় গণহত্যা
ওয়াশিংটনে এক ট্রাম্পবিরোধী সমাবেশে আইনপ্রণেতা রাশিদা তায়েব। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র ও সামরিক সহায়তা দেওয়া দেশ যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন ৬৯ হাজারের বেশি মানুষ। তাদের অধিকাংশ শিশু ও নারী। ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলায় পুরো উপত্যকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।

এই যুদ্ধে মার্কিন সরকার ইসরায়েলকে ক্রমাগত সামরিক সহায়তা দিয়ে গেছে। যুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র প্রধান মিত্র ইসরায়েলকে চুক্তিবদ্ধ সহায়তা ছাড়াও অতিরিক্ত ২১ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে। মার্কিন অস্ত্র নিয়ে ইসরায়েল বিনা বাধায় গণহত্যা চালিয়েছে গাজায়।

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যাকে কংগ্রেসে স্বীকৃতির জন্য প্রস্তাবনা এনেছেন ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত মার্কিন আইনপ্রণেতা রাশিদা তায়েব। গত শুক্রবার উপস্থাপন করা তার এই প্রস্তাবনায় সমর্থন দিয়েছেন আরও ২০ ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা ছাড়াও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা মারজোরি টেইলর গ্রিন ও স্বতন্ত্র আইনপ্রণেতা বার্নি স্যান্ডার্স ইসরায়েলকে গণহত্যার অভিযোগ অভিযুক্ত করেছেন।

এতে আরও বলা হয়, প্রগতিশীল আইনপ্রণেতা আলেক্সান্ড্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ, সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী রো খান্না ও আলোচিত জেন-জি আইনপ্রণেতা ম্যাক্সওয়েল আলেজান্দ্রো ফ্রস্ট ইসরায়েলি গণহত্যার স্বীকৃতি-প্রস্তাবনায় সমর্থন দিয়েছেন।

প্রতিবেদন অনুসারে, রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ কংগ্রেসে আইনপ্রণেতা রাশিদা তায়েবের তোলা প্রস্তাবনা পাস হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে তার প্রস্তাবের মাধ্যমে এটি উঠে আসে যে মার্কিন রাজনীতিতে ইসরায়েল ক্রমশ সমালোচিত হচ্ছে।

প্রস্তাবনাটি পাস হলে তা গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাবে। এর ফলে ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্রের চালান বন্ধের ব্যবস্থাও করা যাবে। এসব অস্ত্র গাজা গণহত্যায় ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ঘটনার তদন্ত ও যথাযথ ব্যবস্থার পাশাপাশি ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথাও প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়—যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে ১০ বছরের সমঝোতা চুক্তি অনুসারে ইসরায়েলকে প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দেয়। এই চুক্তি আগামী বছর শেষ হয়ে যাওয়া কথা। একদিকে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এই চুক্তিতে আরও নতুন নতুন সুবিধা যোগ করার চেষ্টা করছেন; অন্যদিকে, এই চুক্তি নিয়ে বিতর্ক জোরালো হচ্ছে।

যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েল বিধ্বস্ত গাজাকে চারদিক থেকে অবরুদ্ধ করে রাখে। সেখানে চাহিদামতো খাদ্যসামগ্রী পৌঁছাতে না পারায় গাজাবাসীকে দুর্ভিক্ষে পড়তে হয়।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইসরায়েল গাজাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তেল আবিব সেখানে খাদ্যপণ্য প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। এ ছাড়াও, ইসরায়েল ক্রমাগত গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই সেখানে হত্যাযজ্ঞ চলছে।

ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত মার্কিন আইনপ্রণেতা রাশিদা তায়েব বলছেন যে, গাজায় এখনো গণহত্যা চলছে। গত শুক্রবার এক বার্তায় এই আইনপ্রণেতা বলেন, 'তথাকথিত যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ইসরায়েল ফিলিস্তিনদের প্রতিদিন হত্যা করছে।'

জাতিসংঘের পাশাপাশি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও ইসরায়েলি বেসরকারি সংস্থা বি'টিসেলেমের তদন্তে গাজায় ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা বলা হয়েছে।

Comments