যে কারণে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে চায় সৌদি আরব

ছবি: রয়টার্স

দীর্ঘ সাত বছর পর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছেন। দেখা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে। অংশ নিয়েছেন হোয়াইট হাউসে আয়োজিত ডিনারে।

এরই মধ্যে সফরটির অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে সৌদি আরবের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি। কেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এই যুদ্ধবিমান কিনতে চায় দেশটি, এর বিশেষত্ব কী—তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা।

২০১৮ সালের পর এটি সৌদি যুবরাজের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর। এই সফরকে সৌদি আরব ও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সৌদি আরবের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তির কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। এর সঙ্গে পারমাণবিক প্রকল্প সংক্রান্ত চুক্তির বিষয়টিও নিশ্চিত করেছে।

সৌদি আরব বহু বছর ধরে এই চুক্তি করতে চাচ্ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আগের প্রেসিডেন্টরা এতে অনুমোদন দেননি। বিশ্লেষকদের মতে, চুক্তি অনুমোদনের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের উদ্বেগ একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে।

সফরের আগেই বলা হচ্ছিলো, সৌদি ও মার্কিন নেতাদের মধ্যে আলোচনা ও চুক্তি সম্ভব হলে এটি মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ও কৌশলগত সমীকরণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।

সৌদি আরব কেন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে এত আগ্রহী? আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই বা কেন এই যুদ্ধবিমান বিক্রির ব্যাপারে অবস্থান পরিবর্তন করলো? এফ-৩৫ এর বিশেষত্ব কী?

এফ-৩৫ রাডারকে ফাঁকি দিতে সক্ষম 'স্টেলথ স্ট্রাইক ফাইটারস' প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান। মার্কিন কোম্পানি লকহিড মার্টিন এসব যুদ্ধবিমান তৈরি করে। এর পুরো নাম 'এফ-৩৫ লাইটনিং ২'। কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে, এটি বিশ্বের 'সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধবিমান'।

এফ-৩৫ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারদের মধ্যে আছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইতালি, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে ও যুক্তরাজ্য।

এফ-৩৫ এর যত সংস্করণ

এই যুদ্ধবিমানের বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে এফ-৩৫ 'এ' সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মডেল। এর জন্য বিশেষ কোনো রানওয়ে দরকার হয় না।

এফ-৩৫ 'আদির' হলো 'এ' মডেলের ইসরায়েলি সংস্করণ। এতে স্টেলথ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ইসরায়েলি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। যেমন- জ্যামিং ও ডিকয় সিস্টেম। দীর্ঘ মিশনের জন্য বাইরের দিকে বাড়তি জ্বালানি ট্যাঙ্কও থাকে। এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি নিয়ে বিমানটির মূল অপারেটিং সিস্টেমে ইসরায়েল নিজস্ব অস্ত্র বসাতে পারে।

ইতালি, জাপান, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র এফ-৩৫ 'বি' মডেলটি ব্যবহার করে। এটি হেলিকপ্টারের মতো অবতরণ করতে পারে এবং খুব ছোট রানওয়ে থেকেও উড্ডয়ন করতে সক্ষম। এটি আকারে কিছুটা ছোট হলেও ওজনে ভারী। এর জ্বালানি ও অস্ত্র ধারণক্ষমতা কিছুটা কম।

এফ-৩৫ 'সি' হলো সুপারসনিক ক্ষমতার মার্কিন নৌবাহিনীর বিমান, যা দীর্ঘ দূরত্বের স্টেলথ মিশনের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি যুদ্ধবিমান বহনকারী যুদ্ধজাহাজে ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে তৈরি।

লকহিড মার্টিনের দাবি, এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিধ্বংসী ও টেকসই যুদ্ধবিমান। আগের প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের তুলনায় এর তথ্য সংগ্রহ ক্ষমতা বেশি। এর ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা ও অন্যান্য সেন্সরের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য সরাসরি পাইলটের কাছে পৌঁছে যায়।

কোন কোন দেশের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান আছে?

২০টির মতো দেশে মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান আছে। দেশটির কাছে এ মডেলের এক হাজার ৭৬৩টি, বি মডেলের ২৮০টি এবং সি মডেলের ৪১৩টি এফ-৩৫ আছে।

যুক্তরাজ্যের কাছে রয়েছে বি মডেলের ১৩৮টি এফ-৩৫। অস্ট্রেলিয়ার কাছে এ মডেলের ১০০টি, আর জাপানের একই মডেলের ১০৫টি এবং বি মডেলের ৪২টি এফ-৩৫ আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদার ইতালি, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ডেনমার্কের কাছেও এই যুদ্ধবিমান রয়েছে। ইসরায়েলের কাছে ৭৫টি কাস্টম মডেলের এফ-৩৫ রয়েছে। এর বাইরে ফিনল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, গ্রিস এবং সিঙ্গাপুরের কাছেও আছে এই যুদ্ধবিমান।

সৌদি আরব কেন এফ-৩৫ চাইছে?

সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিন অস্ত্রের বড় ক্রেতা। কিন্তু এ পর্যন্ত তারা এফ-৩৫ কেনার সুযোগ পায়নি।

এফ-৩৫ পেলে সৌদি আরব তার বিমানবাহিনীর আধুনিকায়ন করতে পারবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে নিজের কৌশলগত অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে পারবে।

যদিও বর্তমানে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক মোটামুটি ভালো, তবে এর আগে তারা সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল এবং একে অপরকে হুমকি হিসেবে দেখেছিল।

সৌদি আরব ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গেও যুদ্ধে জড়িয়েছে। সেই সংঘাত এখনও পুরোপুরি সমাধান হয়নি। বর্তমানে যদিও পরিস্থিতি শান্ত, আগামী কয়েক বছরে তা আবার উত্তপ্ত হতে পারে।

মূলত এসব কারণে এফ-৩৫ কিনতে আগ্রহী রিয়াদ।

যুক্তরাষ্ট্র কি সৌদি আরবকে এফ-৩৫ দেবে?

মার্কিন কংগ্রেস চাইলে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন আটকে দিতে পারে, এমনকি প্রেসিডেন্ট অনুমোদন দিলেও। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কংগ্রেসই নিতে পারে।

তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউসও এফ-৩৫ বিক্রি নিয়ে চুক্তির বিষয়ে জানিয়েছে।

সৌদি আরব ও যুবরাজকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সমালোচনা ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড। এই ঘটনা বহু বছর দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল, বিশেষ করে জো বাইডেন প্রশাসনের সময়। অবশ্য ট্রাম্প সেসবকে পাত্তা দিচ্ছেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত 'কোয়ালিটেটিভ মিলিটারি এজ' নীতিতেও গুরুত্ব না দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। এই নীতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য সব দেশের চেয়ে উন্নত থাকতে হবে।

ট্রাম্প বলেছেন, সৌদি আরবও ইসরায়েলের মতো একই ধরনের এফ-৩৫ পাবে—যা দীর্ঘদিনের মার্কিন নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অথচ রিয়াদ এখনো আব্রাহাম অ্যাকর্ডসে সই করেনি এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনেও রাজি হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

India summons Bangladesh envoy over Indian mission security

Draws particular attention to the activities of some “extremist elements”

18m ago