কেন কমছে বিটকয়েনের দাম, ক্রিপ্টোকারেন্সির ভবিষ্যৎ কী?

বিশ্বজুড়ে আলোচিত ডিজিটাল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের দামে বড় ধস নেমেছে। গত অক্টোবরের শুরুতেও যে বিটকয়েনের দাম ১ লাখ ২৬ হাজার ডলারের ওপরে ছিল, গত মঙ্গলবার তা কমে ৯০ হাজার ডলারের নিচে নেমে এসেছে।

কিন্তু কেন হঠাৎ বিটকয়েনের দামে এই ধস? এএফপির এক প্রতিবেদনে এর পেছনের কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিটকয়েনের দাম হু হু করে বাড়ছিল। নির্বাচনের আগে ও পরে ট্রাম্প ক্রিপ্টোকারেন্সির পক্ষে জোরালো অবস্থান নেওয়ায় বিনিয়োগকারীরা আশান্বিত হয়েছিলেন। গত মে মাসে বিটকয়েন ১ লাখ ডলার পেরিয়ে যায়। গত মাসে এর দাম রেকর্ড ১ লাখ ২৬ হাজার ২৫১ ডলারে পৌঁছায়।

তবে ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় বিনিয়োগকারীরা আস্থাহীনতায় ভুগছেন। বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ ডিজিটাল মুদ্রা ছেড়ে নিরাপদ বিনিয়োগের (যেমন সোনা বা বন্ড) দিকে ঝুঁকছেন। যারা ভেবেছিলেন বিটকয়েনের দাম আরও বাড়বে, তারা এখন বড় অঙ্কের লোকসান গুনছেন। ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার বিশ্লেষক র‍্যাচেল লুকাসের মতে, এই অস্থিরতায় প্রায় ২ হাজার কোটি (২০ বিলিয়ন) ডলার মূল্যের বিটকয়েন হাতবদল হয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা ও শাটডাউন বিটকয়েনের দাম কমার পেছনে ভূমিকা রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কার্যক্রম দীর্ঘ সময় স্থবির হয়ে থাকায় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

বিনিয়োগকারীরা তাকিয়ে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের দিকে। ধারণা করা হচ্ছিল, ডিসেম্বরে সুদের হার কমানো হবে। কিন্তু পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে এবং ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তাদের কথায় মনে হচ্ছে, ডিসেম্বরে সুদের হার না-ও কমতে পারে। সুদের হার না কমলে ডলার শক্তিশালী হবে। ডলার শক্তিশালী হলে সাধারণত বিটকয়েন বা শেয়ারবাজারের দাম কমে যায়।

বিটকয়েন আসলে কী?

সহজ কথায়, বিটকয়েন হলো একধরনের ডিজিটাল মুদ্রা। এটি টাকা বা ডলারের মতো পকেটে রাখা যায় না, এটি থাকে অনলাইনে। কোনো দেশের সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি নিয়ন্ত্রণ করে না। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের পর সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামে এক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এটি চালু করেন। এর লক্ষ্য ছিল ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে সরাসরি লেনদেন করা।

বাজার বিশ্লেষক সাইমন পিটার্স এএফপিকে বলেন, 'যদি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির কোনো ভালো খবর আসে এবং ডিসেম্বরে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়, তবে বিটকয়েনের দাম আবারও দ্রুত বাড়তে পারে।'

তবে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রাইভেট ব্যাংক সাইট জেসশনের বিনিয়োগ কৌশলবিদ জন প্লাসার্ড মনে করেন, বিটকয়েনের এই ব্যাপক ওঠানামা সাধারণ মানুষের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। ক্রিপ্টো বিশ্লেষক প্রোবস্টের মতে, এই অস্থিরতাই বিটকয়েনকে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করার পথে বড় বাধা।

উরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইতিমধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণে আইন করেছে। যুক্তরাজ্যও ২০২৬ সালের মধ্যে নিজস্ব নীতিমালা তৈরির পরিকল্পনা করছে। এভাবে আইনি কাঠামোর মধ্যে এলে ভবিষ্যতে ক্রিপ্টোকারেন্সির ওপর মানুষের আস্থা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s body taken to Parliament Complex ahead of janaza

Janaza will be held at Manik Mia Avenue at 2pm

2h ago