অরুণাচলের এক নারীর ট্রানজিট ঘিরে চীন-ভারত সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা

ছবি: এক্স থেকে নেওয়া

বিমানবন্দরে ১৮ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে হয়রানি করা হয়েছে—ভারতীয় পাসপোর্টধারী এক নারী যাত্রীর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। ওই নারীর জন্মস্থান অরুণাচল।

অরুণাচলে ১৩ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। অঞ্চলটি ভারতের প্রশাসনের অধীন। এখানকার মানুষ ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। তবে চীন দাবি করে, এই অঞ্চল দক্ষিণ তিব্বতের অংশ এবং তারা এটিকে 'জাংনান' বলে ডাকে।

পেম ওয়াং থংডক নামে ওই নারী ১৪ বছর ধরে ব্রিটেনে থাকছেন। লন্ডন থেকে সাংহাই হয়ে জাপানের ওসাকায় যাচ্ছিলেন তিনি। ট্রানজিটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেই একজন চীনা কর্মকর্তা তাকে আলাদা করে ডাকেন।

তার অভিযোগ, ওই কর্মকর্তা বারবার তাকে বলছিলেন— 'অরুণাচল ভারত নয়, চীনের, চীনের। আপনার ভিসা চলবে না।' থংডকের ভাষায়, তাকে আরও বলা হয়—তার পাসপোর্টও 'অবৈধ'।

থংডক বলেন, তাকে ব্যঙ্গ করে বলা হয়— 'তোমার চীনা পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা উচিত।' এটি ছিল 'খুবই বিভ্রান্তিকর মুহূর্ত,' তিনি যোগ করেন।

তিনি এক্স হ্যান্ডলে রোববার জানান, তাকে বিমানবন্দরে ১৮ ঘণ্টার বেশি ধরে আটকে রাখা হয়েছিল।

চীন ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ভিসামুক্ত ট্রানজিটের অনুমতি দেয়। আর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা সেখানে ১০ দিন পর্যন্ত ভিসামুক্ত ট্রানজিট সুবিধা পান।

এই ঘটনা নিয়ে ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। প্রাণঘাতী সীমান্ত সংঘর্ষের পর গত কয়েক মাসে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যকার টানাপোড়েন কিছুটা কমেছিল। তবে এখন তা আগের অবস্থায় ফেরার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চীনের কঠোর সমালোচনা করার আহ্বান জানিয়ে এক্সে লিখেছে, দেশের 'সম্মান, মর্যাদা এবং জাতীয়তাকে কখনোই বিদেশের মাটিতে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না।'

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল মঙ্গলবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেন, চীনা কর্তৃপক্ষ এখনও তাদের কর্মকাণ্ড ব্যাখ্যা করতে পারেনি, যা আন্তর্জাতিক বিমানযাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী একাধিক চুক্তির লঙ্ঘন। এ ঘটনায় ভারত অত্যন্ত জোরালোভাবে আপত্তি তুলেছে।

একইদিন চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং জানান, সীমান্ত তদারকি কর্তৃপক্ষ আইন ও নিয়ম অনুযায়ী যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে, ন্যায্য ও শালীনভাবে আইন প্রয়োগ করেছে, এবং সংশ্লিষ্ট ওই যাত্রীর বৈধ অধিকার ও স্বার্থ সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করেছে।

তিনি ব্রিফিংয়ে বলেন, তাদের দেশ কখনোই 'অরুণাচল প্রদেশ' নামে পরিচিত অঞ্চলকে স্বীকৃতি দেয় না। তিনি দাবি করেন, এটি 'ভারতের অবৈধভাবে তৈরি করা' এলাকা।

তিনি আরও বলেন, সীমান্ত কর্তৃপক্ষ 'আইন ও নিয়ম মেনে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে এবং ন্যায্যভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে।' তার কথায়, 'কোনো জোরপূর্বক ব্যবস্থা, আটক বা হয়রানির প্রশ্নই নেই।'

গত আগস্টে মোদি সাত বছর পর প্রথমবার চীন সফর করেন এবং সাংহাইয়ে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রায় একই সময়ে দুই দেশ পর্যটন ভিসা এবং সরাসরি ফ্লাইটও পুনরায় চালু করে।

বেলজিয়ামে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীন দোথি বলেন, 'নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের মধ্যে সাম্প্রতিক সম্পর্ক উন্নতির পরও এই ঘটনা স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয় যে চীন-ভারত সীমান্ত বিরোধ কতটা জটিল।'

Comments

The Daily Star  | English
 Editors Council

‘We have witnessed such practices in the past’

Editors' Council condemns arrest of journalist Anis Alamgir

23m ago