শ্রীলঙ্কায় মেয়াদোত্তীর্ণ ত্রাণ পাঠিয়ে সমালোচিত পাকিস্তান
ঘূর্ণিঝড় ডিতওয়াহর প্রভাবে শ্রীলঙ্কায় বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ৪৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এখনো ৩৬৬ জন নিখোঁজ এবং সারা দেশে প্রায় ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার এই সংকটময় মুহূর্তে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে প্রতিবেশী ও বন্ধুভাবাপন্ন দেশগুলো। মানবিক ত্রাণ, চিকিৎসা সামগ্রী ও আর্থিক সহায়তা—কোন কিছুরই কমতি নেই।
কিন্তু এরই মধ্যে এক অভাবনীয় কাণ্ড করে বসেছে ইসলামাবাদ! মেয়াদোত্তীর্ণ ত্রাণ পাঠিয়ে কলম্বোর বিরাগভাজন হয়েছে শেহবাজ শরীফের সরকার।
এএফপি ও সিএনএনের সহযোগী সংবাদ মাধ্যম নিউজ ১৮ এর প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
পাকিস্তান থেকে আসা মানবিক ত্রাণের চালানে চিকিৎসা উপকরণ, ওষুধ, খাবারের প্যাকেট ও অন্যান্য নিত্য পণ্য ছিল।
তবে ইসলামাবাদ থেকে ত্রাণ হিসেবে পাঠানো কিছু পণ্যের মেয়াদ ইতোমধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে বলে কলম্বোর কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
বন্যা ও ভূমিধসের প্রেক্ষাপটে জরুরি সহায়তা হিসেবে আসা ত্রাণ উপকরণগুলো পরীক্ষা করে বেশ কয়েকটি কার্টনে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী পণ্য চিহ্নিত করেন কর্মকর্তারা।
এ বিষয়টিকে 'অত্যন্ত উদ্বেগজনক' আখ্যা দেয় শ্রীলঙ্কার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পররাষ্ট্র দপ্তর।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনের এক্স হ্যান্ডল থেকে পোস্ট করা একটি পোস্ট ও ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে দেখা যায় একটি ত্রাণের প্যাকেটের গায়ে মেয়াদোত্তীর্ণের বছর হিসেবে ২০২৪ উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এই প্রতিবেদন লেখার সময় এক্স হ্যান্ডেলে ওই পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ইতোমধ্যে ইসলামাবাদের কাছে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কূটনীতিক চ্যানেলে এ বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে কলম্বো।
বিশ্লেষকদের মতে, এ বিষয়টি পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। বিশেষত, এমন সময় ঘটনাটি ঘটল, যখন দেশটি ভারত মহাসাগরে তাদের উপস্থিতিকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।
শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তারা বলছেন, পাকিস্তানের কাছ থেকে আসা মানবিক সহায়তার গুণগত মান এবং এ বিষয়টিকে তারা ঠিক কতখানি গুরুত্ব দেয়, তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
পাকিস্তানের 'ত্রাণ কূটনীতি' আগেও সমালোচিত হয়েছে। ২০১৫ সালে নেপালে ভূমিকম্পের সময় হিন্দু অধ্যুষিত নেপালে গরুর মাংস দিয়ে তৈরি খাবার পাঠিয়ে ব্যাপক জনরোষ ও নিন্দার মুখে পড়েছিল ইসলামাবাদ।
সর্বশেষ এই ঘটনা শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ তৈরি করেছে।
অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টিকে 'অপমান' ও 'ত্রাণ কূটনীতির নামে রসিকতা' আখ্যা দেন।
কেউ কেউ সরকারকে পাকিস্তানের কাছে জবাব চাওয়ারও আহ্বান জানান।
কলম্বোর কর্মকর্তারা জানান, এই ঘটনার পর ত্রাণ পরীক্ষার বিধি আরও কঠোর করা হয়েছে। বিশেষত, যেসব দেশ থেকে নিম্নমানের ত্রাণ আসার নজির আছে, তাদের ক্ষেত্রে।
শ্রীলঙ্কায় দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট অনুঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। তিনি একে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে অভিহিত করেন।


Comments