ভেনেজুয়েলার ওপর নজর রাখতে ত্রিনিদাদে রাডার বসাল যুক্তরাষ্ট্র
সাম্প্রতিক সময়ে ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য বিরোধে মিত্র হিসেবে দেখা গেছে ক্যারিবীয় দেশ ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোকে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী কমলা প্রসাদ বিসেসার গতকাল বুধবার জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার দেশে একটি রাডার স্থাপন করেছে। ভেনেজুয়েলার মাদক পাচার কার্যক্রমে ও 'নিষিদ্ধ ঘোষিত' তেল রপ্তানিতে রাশ টেনে ধরার জন্যই মূলত ট্রাম্প প্রশাসন এই উদ্যোগ নিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার এএফপির প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার মাত্রা অনেক বাড়িয়েছে ওয়াশিংটন। ভেনেজুয়েলার উপকূল থেকে সামান্য দূরত্বে অবস্থান ওই দ্বীপ রাষ্ট্রের।
কার্যত, ভেনেজুয়েলার ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছেন ট্রাম্প। উপকূলের একেবারে কাছে মোতায়েন করেছেন বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধজাহাজ। গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার জাহাজের মহড়াকে কারাকাস উসকানিমূলক আখ্যা দিয়েছে।
তাদের অভিযোগ, ওয়াশিংটন দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার চক্রান্তে মেতেছে।
ট্রাম্পের অধীনে ওয়াশিংটন মাদুরোর সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়েছে।
ইতোমধ্যে মাদুরো সরকারকে 'মাদক-চক্র' হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে তালিকাভুক্ত করেছে ওয়াশিংটন। মাদুরোর শাসনকেও 'বেআইনি' বলে রায় দিয়েছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের কড়া সমর্থক কমলা। ২৭ নভেম্বর তিনি টিভিতে প্রচারিত অনুষ্ঠানে নিশ্চিত করেন, নতুন বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্র ওই নজরদারি রাডারটি স্থাপন করবে।
গতকাল তিনি জানান, ইতোমধ্যে সেই রাডারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ওয়াশিংটন এর আগেই ভেনেজুয়েলা থেকে তেল রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। সেই নিষেধাজ্ঞা ঠিক মতো পালন করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়টি এই রাডারের মাধ্যমে নজর রাখা হবে।
প্রধানমন্ত্রী কমলা তার বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, 'নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে ভেনেজুয়েলা অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করছে কি না, সেটার ওপর নজর রাখবে এই নতুন রাডার। পাশাপাশি, মাদক পাচারকারীদের মাধ্যমে ভেনেজুয়েলা থেকে আমাদের দেশে আগ্নেয়াস্ত্র, মাদক, গোলাবারুদ ও অবৈধ অভিবাসীদের প্রবাহ ঠেকাতেও এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।'
২০১৯ সালে ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদের ওই সিদ্ধান্ত দ্বিতীয় মেয়াদেও বজায় রেখেছেন রিপাবলিকান নেতা।
কমলা আরও জানান, 'নতুন এই সামরিক উপকরণ আমাদের নজরদারি সক্ষমতার সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে এবং নজিরবিহীন, উন্নতমানের সুরক্ষা দিচ্ছে।'
মাদুরো সরকারকে উৎখাতের মার্কিন চক্রান্তে কমলাও জড়িত—এমন অভিযোগ তুলেছে কারাকাস।
তবে এ ধরনের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ক্যারিবীয় দ্বীপ রাষ্ট্রটির নেতা। এমন কী, তার দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলা হামলা হতে পারে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিয়েছেন কমলা।
গত আগস্ট থেকে ক্যারিবীয় অঞ্চলে বেশ কিছু যুদ্ধজাহাজ এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক রণতরী মোতায়েন করেছেন ট্রাম্প সরকার। পাশাপাশি, অন্তত ২২টি জাহাজের ওপর প্রাণঘাতী হামলাও চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব হামলায় অন্তত ৮৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে 'মাদক পাচার' প্রতিহত করার যুক্তি দিয়েছেন ট্রাম্প।
তবে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের হামলা 'সম্ভবত' অবৈধ এবং এর মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে।


Comments