গ্রেপ্তারের সময় মারধরের ফলে হাসপাতালে ইরানের নার্গিস মোহাম্মদী

নার্গিস মোহাম্মদী। ছবি: রয়টার্স

শান্তিতে নোবেলজয়ী মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদীকে গত সপ্তাহে গ্রেপ্তারের সময় মারধর করার ফলে তাকে দুবার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

পরিবারের সঙ্গে গত রোববার এক ফোনালাপে ৫৩ বছর বয়সী এই মানবাধিকারকর্মী এ কথা জানান।

নার্গিস ফাউন্ডেশন এক বিবৃতিতে জানায়, সাদা পোশাকধারী এজেন্টরা তাকে গ্রেপ্তারের সময় মাথা ও ঘাড়ে লাঠি দিয়ে অনবরত জোরে আঘাত করে। এর পর দুবার তাকে জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।

ইরানি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তারা বলেছে, গত শুক্রবার মাশহাদ শহরে একটি স্মরণসভায় 'উসকানিমূলক বক্তব্য' দেওয়ার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নোবেল কমিটি ও পুরস্কারজয়ী ইরানি চলচ্চিত্র নির্মাতা জাফর পানাহিসহ অনেকে নার্গিস মোহাম্মদীর মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

ইরানে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকার জন্য ২০২৩ সালে নার্গিস মোহাম্মদীকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। তিনি ইরানের 'ডিফেন্ডার্স অব হিউম্যান রাইটস সেন্টার'-এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট।

তিনি জীবনের ১০ বছরেরও বেশি সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। ২০২১ সাল থেকে তিনি 'রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা' ও 'রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের' অভিযোগে ১৩ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। যদিও এসব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে চিকিৎসাজনিত কারণে তাকে তেহরানের কুখ্যাত এভিন কারাগার থেকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়। চিকিৎসা চলাকালেও তিনি তার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

শুক্রবার তিনি মাশহাদে মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী খোসরো আলিকোরদির স্মরণসভায় বক্তব্য দেন। আলিকোরদিকে চলতি মাসের শুরুতে নিজ কার্যালয়ে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, যাকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো 'সন্দেহজনক' বলছেন।

নার্গিস ফাউন্ডেশনের বরাতে তার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন—স্মরণসভায় প্রায় ১৫ জন সাদা পোশাকধারী এজেন্ট তার ওপর হামলা চালায়। কেউ কেউ তার চুল টেনে ধরেন, আবার কেউ লাঠি ও ব্যাটন দিয়ে মারধর করেন।

রোববার সন্ধ্যায় পরিবারের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত ফোনালাপে নার্গিস মোহাম্মদি বলেন, 'আঘাতগুলো এতটাই তীব্র, জোরালো ও বারবার ছিল যে আমাকে দুবার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিতে হয়েছে।'

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তিনি জোর দিয়ে জানিয়েছেন—বর্তমানে কোন নিরাপত্তা সংস্থা তাকে আটক করে রেখেছে, তা তিনি জানেন না। এ বিষয়ে তাকে কোনো ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি।

নার্গিস ফাউন্ডেশনের দাবি অনুযায়ী, নার্গিস মোহাম্মদি বলেছেন—তার বিরুদ্ধে 'ইসরায়েলি সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার' অভিযোগ আনা হয়েছে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্মরণসভায় আটক হওয়া আরও দুই কর্মী—সেপিদেহ ঘোলিয়ান ও পৌরান নাজেমিকেও সাদা পোশাকধারী এজেন্টরা মারধর করেছেন।

মাশহাদের প্রসিকিউটর হাসান হেমাতিফার শনিবার সাংবাদিকদের জানান, ওই ঘটনায় মোট ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেখানে তারা 'স্বৈরাচারের মৃত্যু হোক' এবং 'ইরান অমর হোক' স্লোগান দেন।

নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি শুক্রবার নার্গিস মোহাম্মদীর 'সহিংস' গ্রেপ্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং ইরানি কর্তৃপক্ষকে তার 'নিরাপত্তা ও শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত' করার পাশাপাশি 'শর্তহীন মুক্তি' দেওয়ার আহ্বান জানায়।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh to boost LNG imports on lower global prices

Falling spot prices and weak demand in Asia prompt Dhaka to look beyond its initial import plan for this year

11h ago