গাজায় বিয়ের অনুষ্ঠানে ইসরায়েলের বোমা হামলা

গত ১৫ ডিসেম্বর গাজা সিটিতে প্লাবিত একটি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যান এক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি পুরুষ। ফাইল ছবি: রয়টার্স

গাজায় নড়বড়ে যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করতে মিসর ও তুরস্কের শীর্ষ কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। এর মধ্যেই ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা সিটিতে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে।  

গতকাল শুক্রবার গাজা সিটির তুফাহ এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ছয়জন ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং আরও কয়েকজন আহত হন।

স্থানীয় সূত্র আল জাজিরাকে জানায়, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে জড়ো হন। তখন ওই আশ্রয়কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় ইসরায়েলি ট্যাংকের গোলা আঘাত হানে।

গাজা সরকারের মিডিয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী, গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর থেকে সংঘটিত শত শত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের সর্বশেষ ঘটনা ছিল এই হামলা।

গাজার চুক্তির পরবর্তী ধাপে কীভাবে পৌঁছানো যায়—সে বিষয়ে আলোচনা শুরুর প্রস্তুতি চলছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মায়ামিতে। সেখানে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বৈঠকে বসার কথা ছিল। এই প্রেক্ষাপটেই হামলার এই ঘটনা ঘটল।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, কাতার, তুরস্ক, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এই আলোচনা হচ্ছে। তিনি জানান, প্রয়োজনে তিনি নিজেও পরে আলোচনায় যোগ দিতে পারেন।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার হলো যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ সম্পূর্ণ করা। এর মধ্যে রয়েছে—গাজা শাসনে সহায়তার জন্য একটি ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাট কমিটি গঠন, বিদেশি নেতৃত্বাধীন 'বোর্ড অব পিস' প্রতিষ্ঠা এবং ওই ভূখণ্ডে একটি আন্তর্জাতিক পুলিশি বাহিনী মোতায়েন।

স্টেট ডিপার্টমেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের রুবিও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়—এ নিয়ে কারও কোনো দ্বিমত নেই, আবার এটিকে কাঙ্ক্ষিতও বলা যায় না। সে কারণেই প্রথম ধাপটি পুরোপুরি সম্পন্ন করার বিষয়ে আমাদের মধ্যে তাড়াহুড়া ও জরুরি ভাব রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, একবার এটি প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে আমরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী যে পুনর্গঠন কার্যক্রম ও দীর্ঘমেয়াদি মানবিক সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় দাতা পাওয়া যাবে, যা দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ গঠনে সহায়ক হবে।

এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস জানায়, মায়ামির বৈঠকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান বিন জাসিম আল থানি, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এবং মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি অংশ নেবেন।

ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ ও সম্ভাব্য পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সীমিত পরিসরে নিরাপত্তা বৈঠক করছেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, যদি ট্রাম্প গাজা পরিকল্পনা থেকে সরে যান, তাহলে হামাসকে নিরস্ত্র করতে ইসরায়েল নতুন সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে। তবে তিনি এটিও স্বীকার করেন, এমন সম্ভাবনা কম, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট গাজা উপত্যকায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চান।

ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি বহাল আছে বলে জোর দেওয়া হলেও ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলা প্রায় অব্যাহতভাবেই চলছে। 

ইসরায়েল গাজায় জরুরি মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবাহও আটকে রেখেছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে দেশটির দুই বছরব্যাপী গণহত্যামূলক যুদ্ধে গাজা ভয়াবহভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে।

আল জাজিরা আরবির এক প্রতিবেদক শুক্রবার জানান, দক্ষিণ গাজার পূর্ব খান ইউনিসজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ ও ভারী গুলিবর্ষণ চালিয়েছে।

দক্ষিণ গাজা সিটিতে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোতেও হামলা চালানো হয়। পাশাপাশি খান ইউনিসের পূর্বে বনি সুহেইলাতে গোলাবর্ষণ করা হয়।

আল-আকসা টিভি জানায়, পূর্ব খান ইউনিসে ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে অন্তত তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন।

চ্যানেলটি আরও জানায়, শহরের উপকূলের কাছে ইসরায়েলি নৌযানগুলো মাছ ধরার নৌকায়ও গুলি চালিয়েছে।

অন্যদিকে, মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান বোমা হামলা চালায় এবং গাজা সিটির শুজাইয়া এলাকায় আরেকটি হামলা হয়।  সেখান থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়।

আর হামাসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, মায়ামির আলোচনার লক্ষ্য অবশ্যই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন বন্ধ করা হওয়া উচিত।

Comments