পশ্চিম তীরে দখল বাড়াল ইসরায়েল, ১৯ নতুন বসতির অনুমোদন
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ১৯টি নতুন বসতিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। বসতি সম্প্রসারণে ইসরায়েলি সরকারের চলমান নীতির অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। বিবিসির খবরে এমনটি জানানো হয়েছে।
কট্টর ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজের সঙ্গে যৌথভাবে এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। স্মোটরিচ বলেন, এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হলো একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ রোধ করা।
আন্তর্জাতিক আইনে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের বসতিগুলোকে অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ইসরায়েলের 'নিরবচ্ছিন্ন' বসতি সম্প্রসারণ উত্তেজনা বাড়াচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের ভূমিতে প্রবেশাধিকার সীমিত করছে এবং একটি সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্ভাবনাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর অধিকৃত পশ্চিম তীরে সহিংসতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এতে আশঙ্কা আরও জোরালো হয়েছে যে বসতি সম্প্রসারণ ইসরায়েলের দখলদারত্বকে আরও পোক্ত করবে এবং দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথ দুর্বল করে দেবে।
দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান মানে হলো, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র তৈরি করা, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম। এটি মূলত ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের আগের সীমারেখার ভিত্তিতে গঠিত হবে।
২০২২ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বর্তমান ইসরায়েলি সরকার নতুন বসতি অনুমোদন অনেক বেড়েছে এবং অনুমোদনহীন কিছু স্থাপনাগুলোর বৈধতা দিচ্ছে, সেগুলোকে বিদ্যমান বসতিগুলোর অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে।
স্মোটরিচ জানান, সর্বশেষ সিদ্ধান্তের সঙ্গে মিলিয়ে গত তিন বছরে অনুমোদিত বসতির সংখ্যা এখন ৬৯।
জাতিসংঘও বলেছে, বসতি সম্প্রসারণ ২০১৭ সালের পর সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে।
সর্বশেষ অনুমোদনের মধ্যে দুটি পুরোনো বসতি গানিম ও কাদিম পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে, যা প্রায় ২০ বছর আগে ধ্বংস হয়েছিল।
মে মাসে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে ২২টি নতুন বসতি অনুমোদন দেয়, যা গত কয়েক দশকে সবচেয়ে বড় সম্প্রসারণ।
ইসরায়েলি সরকার আগস্ট মাসে আরও একটি পরিকল্পনায় অনুমোদন দেয়, যেখানে জেরুজালেম ও মালে আদুমিম বসতির মধ্যে 'ই-ওয়ান প্রকল্পে' তিন হাজারের বেশি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পটি কয়েক দশক ধরে আন্তর্জাতিক বিরোধের কারণে স্থগিত ছিল।
স্মোটরিচ তখন বলেছিলেন, এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকে মাটিচাপা দেবে।
ইসরায়েলের বসতি বিরোধী সংস্থা পিস নাউয়ের তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ১৬০টি বসতিতে প্রায় সাত লাখ বসতি স্থাপনকারী বসবাস করছেন।
বসতি সম্প্রসারণ আরব দেশগুলোকে ক্ষুব্ধ করেছে। তারা বারবার বলেছে, এটি দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের সম্ভাবনাকে ক্ষুণ্ণ করছে। এতে অধিকৃত পশ্চিম তীরকে সম্ভাব্যভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে এ ধরনের পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। টাইম ম্যাগাজিনকে তিনি বলেন, এমন হলে ইসরায়েল মার্কিন সমর্থন হারাবে।
সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ কিছু দেশ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। ইসরায়েল এ পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে, এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না।


Comments