থ্রেড এবং সাদিয়া আফরিনার জামদানি শিল্প বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টার গল্প

জামদানি শাড়ি

অসংখ্য বাংলাদেশি ভক্তদের মন জয় করার পর বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান সম্প্রতি বলিউডে মুক্তিপ্রাপ্ত তার প্রথম সিনেমা কড়ক সিং দিয়ে সেখানকার দর্শকদের মনেও বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন। আর জয়া আহসানের ব্যাপারে কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় তার পোশাকের পছন্দের ব্যাপারে।

সম্প্রতি মুম্বাইয়ে এই সিনেমার প্রিমিয়ার শোর আয়োজনে জয়া আহসানকে দেখা যায় ফ্যাশন হাউজ থ্রেডের একটি অভিজাত ও নজরকাড়া গোলাপি টোনের জামদানিতে। জয়া আহসানকে বেশ কয়েকবার থ্রেডের নিখুঁত ও সুনিপুণ কাজের জামদানি বেছে নিতে দেখা গেছে, যা জামদানির ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের আবেদনকে বহু মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে বিশেষভাবে ভূমিকা রেখেছে। 

জামদানি বুননের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে সংরক্ষণ করার ইচ্ছা থেকেই সৈয়দা সাদিয়া আফরিনা গড়ে তোলেন তার ফ্যাশন হাউজ 'থ্রেড'।

আফরিনা বলেন, 'আমি ছোটবেলা থেকেই জামদানি শিল্পের কিছু কারিগরদের চিনতাম, যাদের কাছ থেকে আমার পরিবার বিভিন্ন সময় জামদানি শাড়ি কিনত। যখন কারিগররা একটু খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তারা আমার কাছে সাহায্যের জন্য আসেন এবং এভাবেই থ্রেডের যাত্রা শুরু হয়।'

জামদানি
থ্রেডের শাড়িতে জয়া আহসান।
 

জামদানি কারিগরদের যথাযথ মজুরি না পাওয়া এবং তাদের জীবনযাত্রার নানা সংগ্রাম প্রত্যক্ষভাবে দেখার পর তাদের জন্য কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন তিনি। কাজও শুরু করেন। প্রথমে খুব অল্প পরিসরে দক্ষ তাঁতিদের নিয়ে গড়ে তোলেন থ্রেড। কাজ শুরু হয়ে যায় এবং আস্তে আস্তে নতুনদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে থ্রেড জামদানি কারিগরদের একটি শক্তিশালী দল গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।

থ্রেডের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর অনন্য ডিজাইন।

আফরিনা বলেন, 'বেশিরভাগ জামদানি ডিজাইনই বহুকাল পুরোনো। আমরা সেই পুরোনো ডিজাইনেই নতুন মোটিফ যোগ করে করে থাকি। ফলে জামদানির  ঐতিহ্যবাহী ডিজাইনের সঙ্গে যোগ হয় সমসাময়িকতা। আমাদের দক্ষ তাঁতিরা সুনিপুণ হাতে যেন তাদের ক্যানভাসে অর্থাৎ তাঁতে একেকটা জীবন্ত ডিজাইন ফুটিয়ে তোলেন।'

জয়া আহসান তিনটি ভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য থ্রেডের জামদানি শাড়ি বেছে নিয়েছেন, যা থেকে প্রতিষ্ঠানটির মান এবং জামদানি নিয়ে তাদের কাজ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

জয়ার সঙ্গে এই সংযোগ কীভাবে হল জানতে চাইলে আফরিনা বলেন, 'জয়া আহসান সবসময় তার পোশাকের মাধ্যমে বাংলাদেশকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। তিনি জামদানি ভীষণ পছন্দ করেন। আর এদিকে আমরা যেহেতু খুব ভালো মানের জামদানি বানিয়ে আসছি, আর আমাদের ক্লায়েন্টদের অভিজ্ঞতাও বেশ ভালো আমাদের সঙ্গে, তাই এই দুই মিলিয়ে আমাদের এক করেছে।'

একটি অনুষ্ঠানে জয়া আহসানের পরা একটি শাড়ির কথা বলতে গিয়ে আফরিনা বলেন, 'করলা জাল মোটিফের এই শাড়িটি ২০১৯ সালের থ্রেডের এক এক্সক্লুসিভ এক্সিবিশন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয়। পরে তিনটি ভিন্ন রঙের সুতা ব্যবহার করে এটি বানানো হয় এবং দুজন দক্ষ কারিগর ছয় থেকে আট মাস ধরে এটি তৈরি করেন। হাফ সিল্ক শাড়ির ওপর সাচ্চা জরির কাজ করা এই শাড়িটি থ্রেডের কারিগরদের দক্ষতা ও কাজের প্রতি ভালোবাসার অন্যতম একটি নিদর্শন।'

জয়া আহসান শাড়ি
থ্রেডের শাড়ি জয় আহসান।

এটি ছাড়াও ক্রেতাদের জন্য প্রতিনিয়তই নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আসছে থ্রেড। আফরিনা জানান, 'বর্তমানে আমরা কিছু শক্তিশালী সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছি।'

তিনি আরও বলেন, 'থ্রেড প্রতিনিয়তই ক্রেতাদের নতুন নতুন চমক দিতে থাকবে। ক্রেতাদের জন্য সবসময় এই নতুন কিছু করার চিন্তাটাই থ্রেডকে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পকে সামনের দিকে রাখতে ভূমিকা রাখছে। থ্রেডের স্বতন্ত্রতা হলো এর সমসাময়িক ডিজাইন এবং সময়ের সঙ্গে ক্রমাগত পরিবর্তনশীল ডিজাইন।'

আফরিনা বলেন, 'আমরা আমাদের জামদানির ডিজাইনগুলোকে সমসাময়িক রাখি। প্রতিটি শাড়িতে বিভিন্ন রং এবং ডিজাইনকে একত্র করা হয়, যেগুলোতে নানা সময়ে পরিবর্তন আসতে থাকে। এটিই আমাদের ইউএসপি।' 

নতুনত্বকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিটি ছোট ছোট জিনিসের প্রতিও নজর রেখে শাড়ি তৈরি করায় জামদানি শাড়িপ্রেমীদের কাছে থ্রেড হয়ে উঠেছে একটি প্রিয় নাম।

সবকিছুর পরে, আফরিনার কাছে সাফল্যের অর্থ ব্যবসায় সাফল্যের থেকেও বড় কিছু।

তিনি বলেন, 'আমার জন্য এটা শুধু ব্যবসা নয়, আমাদের তাঁতিদের জন্য একটি টেকসই এবং মানসম্পন্ন জীবিকা নিশ্চিত করা। থ্রেড টিম জামদানিকে দেশ ও দেশের বাইরে বাংলাদেশের পোশাক হিসেবে ছড়িয়ে দিতে পেরে গর্ববোধ করে।'

জামদানি কারিগরদের উন্নত জীবনযাত্রা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি থ্রেডকে একটি ব্র্যান্ডের থেকেও বড় করে তুলেছে। থ্রেড একটি কমিউনিটি, যা একটি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে ভূমিকা পালন করছে।

জামদানি শাড়ি নিয়ে অনেক কাজের মাঝে থ্রেড নতুনত্ব ও গুণমান বজায় রেখে কাজ করছে এবং কারিগরদের কর্মসংস্থান করে সামাজিক দায়িত্ব পালন করছে। একইসঙ্গে নতুন প্রজন্মকে গর্ব ও শ্রদ্ধার সঙ্গে নিজের দেশের এই ঐতিহ্যকে আপন করে নিতে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে থ্রেড।

ছবি: থ্রেডের সৌজন্যে

অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম

 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh’s population hits 175.7 million, majority of working age

Bangladesh's population has reached 175.7 million, two thirds of which, around 115 million, are of working age, between 15 to 64..The estimation was made by the United Nations Population Fund's (UNFPA) annual flagship publication, the State of World Population (SWOP) 2025..UNFPA Repr

32m ago