সাইকেল চালালে ডায়াবেটিস-ক্যান্সার-হৃদরোগ-মেদ বাড়ার ঝুঁকি কম থাকে

রাজধানীতে সাইকেল চালাচ্ছেন লায়লা নওশীন। তিনি সাইকেল চালিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ান। ছবি: সংগৃহীত

'হাওয়ার উপর চলে গাড়ি, লাগে না পেট্রোল ডিজেল।

মানুষ একটা দুই চাক্কার সাইকেল।'

গীতিকার মুনির সরকার মানুষকে কেন দুই চাকার সাইকেলের সঙ্গে তুলনা করেছেন তা নিয়ে দ্বিমত থাকলেও, দুই চাকার বাইসাইকেল যে মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু এটি নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই।

সাইকেল চালানোর অনেক উপকারিতা আছে। এটি শরীরের জন্য যেমন উপকারী তেমনি পরিবেশগতভাবেও উপকারী। আর জ্বালানি তেলের দাম যখন ঊর্ধ্বগতি তখন আপনার পরম বন্ধু সাইকেল।

ছবি: স্টার

সাইকেল চালানোর শারীরিক উপকারিতা

১. সাবেক আওয়ার রেকর্ডধারী গ্রেম ওব্রি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় বিষণ্নতায় ভুগেছেন। তিনি বলেন, 'বাইরে বের হওয়া এবং সাইকেল চালানো বিষণ্ণতায় আক্রান্তদের সাহায্য করবে। সাইকেল না চালালে আমি জানি না, আমি কোথায় থাকতাম।'

২. পাঁচ বছর ধরে ২৬ হাজার জনেরও বেশি ব্যক্তির উপর গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, কাজে যাওয়ার সময় যারা সাইকেল ব্যবহার করতেন তাদের হৃদরোগ বা ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অর্ধেকে কমে গিয়েছিল।

৩. পেশির গঠন মজবুত করতেও সাইক্লিং এর জুড়ি মেলা ভার। এই ব্যায়াম মস্তিষ্কে নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে বলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে।

ছবি: সংগৃহীত

৪. নিয়মিত সাইকেল চালানোর মাধ্যমে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো কার্ডিয়াক সমস্যা রোধ করা যায়। সাইক্লিং করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমে।

৫. ৩০ থেকে ৬০ মিনিট সাইকেল চালানোর ফলে প্রতিদিন শরীরের সব অংশ থেকে চর্বি কমতে পারে। ব্রেইনকে শান্ত করে এবং নিঃসরণ করে 'হ্যাপি হরমোন', যার প্রভাব পরে মেদ কমাতে।

৬. বলা হয়, ক্যালরি গ্রহণের চেয়ে বর্জন বেশি হলেই কমবে ওজন। ওজন কমাতে তাই ক্যালরি বার্ন করার কোনো বিকল্প নেই। নিয়মিত সাইক্লিং দিনে ৪০০ থেকে ১ হাজার ক্যালরি বার্ন করতে সাহায্য করে।

সাইকেল চালিয়ে ভারতের মেঘালয়ে ঘুরছেন বাংলাদেশি মেয়ে নওশীন (সামনে) ও শিল্পী। ছবি: সংগৃহীত

৭. সাইকেল চালানোর ফলে ভারসাম্য, ভঙ্গি ও মনোযোগ বাড়ে। সাইকেল চালানোর সময় নিজের দেহকে স্থিতিশীল করতে গিয়ে সামগ্রিক ভারসাম্য, সমন্বয় এবং ভঙ্গিমার উন্নতি ঘটে। এর ফলে হঠাৎ পড়ে গিয়ে ফ্র্যাকচার হওয়ার ঘটনা কম ঘটে।

৮. নিয়মিত সাইকেল চালানোর অভ্যাস ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও সাহায্য করতে পারে। একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে যে যারা প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট সাইকেল চালান তাদের স্তন এবং কোলন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম। কারণ হলো সাইকেল চালানো কোষকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।

৯. নিয়মিত সাইকেল চালানো ঘুমে সাহায্য করে। বিশেষ করে ইনসোমনিয়ায় এটি বেশ কার্যকর। ঘুমের উন্নতির জন্য সাইকেল চালানোর সবচেয়ে কার্যকর সময় হল সন্ধ্যা। তাছাড়া সকালে সাইকেল চালালে এটি সারাদিন শরীর সক্রিয় রাখে এবং রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে।

পরিবেশগত উপকারিতা

১. সাইকেলে গাড়ি ও বাসের মতো অন্যান্য পরিবহনের তুলনায় অনেক কম রাবার এবং লুব্রিকেন্ট ব্যবহৃত হয়। প্রতি বছর গাড়িতে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ রাবার এবং লুব্রিকেন্টের যোগান দিতে হাজার হাজার একর বন উজাড় করতে হয়।

ছবি: সংগৃহীত

২. যানবাহন উৎপাদনে ব্যবহৃত ধাতু মাটির নীচ থেকে খনন করা হয়, যা সমতলভূমি ধ্বংসে ও বন উজাড়ে ভূমিকা রাখে। এমনকি কোনো ছোট খননও বছরের পর বছর ধরে গাছপালা অনুর্বর রাখতে পারে। ফলে কাটা পড়ে গাছ, বৈশ্বিক উষ্ণায়নে পড়ে বিরূপ প্রভাব।

৩. সাইকেলের ওজন গাড়ির চেয়ে অনেক কম হওয়ায় রাস্তার ক্ষতি হয় অনেক কম। একটি ভারী সাইকেলেরও ওজন প্রায় ৩০ পাউন্ড, যা একটি টয়োটা প্রিয়াস-এর ওজনের মাত্র ১ শতাংশের ও কম।

রাজধানীতে জোবাইক চালাচ্ছেন এক নারী। ছবি: সায়মা রহমান

৪. মোটর চালিত পরিবহন থেকে সৃষ্ট ৬০ শতাংশ দূষণ চালানোর প্রথম কয়েক মিনিটে উৎপাদিত হয়। এই 'ওয়ার্ম আপ' এর জন্য কম দূরত্বে গাড়ি চলা, দীর্ঘ দূরত্বের গাড়ি চালানোর চেয়ে বেশি বায়ু দূষণ তৈরি করে৷ তাই কম দূরত্বের সংক্ষিপ্ত পথ সাইকেল দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে পারে৷ এছাড়া সাইকেল চালালে যানজটও কমে। রাস্তায় কম গাড়ি মানে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ।

৫. বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন শুধুমাত্র বায়ু প্রভাবিত করে না। বৃষ্টিপাতের সঙ্গে মাটিতে পড়ে। যা ভূগর্ভস্থ পানি এবং কৃষিজমিকেও দূষিত করে। বন্য প্রাণী এবং তাদের বাসস্থান রক্ষা করতেও সাইকেলের ব্যবহার উত্তম। কারণ এর ফলে শব্দদূষণ কম হয়।

কোথায় পাওয়া যাবে সাইকেল

ঢাকা শহরের বড় পাইকারি সাইকেল মার্কেট পুরান ঢাকার বংশালে অবস্থিত যা বংশাল সাইকেল মার্কেট নামে পরিচিত। এখানে পাওয়া যাবে বাহারি রঙের, ডিজাইনের বিভিন্ন সাইকেল। এটি কাজী আলাউদ্দিন রোড হয়ে নাজিরা বাজার চৌরাস্তা পর্যন্ত এসে শেষ হয়েছে। বলা হয়ে থাকে এমন কোন সাইকেলের পার্টস নেই যা এখানে পাওয়া যায় না। এই মার্কেটে নতুন সাইকেলের দোকানের পাশাপাশি বেশ কিছু পুরাতন সাইকেলের দোকান রয়েছে। ছোট-বড় মিলিয়ে আনুমানিক ৪০০-৫০০ টি দোকান আছে। এখানে সাইকেলের ব্যবসা শুরু হয়েছে আনুমানিক ৪০-৪৫ বছর আগে। সম্পূর্ণ সাইকেল আমদানি করা হয় না বরং যন্ত্রাংশ এখানে সংযোজন করা হয়ে থাকে। সাধারণ সাইকেল ছাড়াও এক্সপোর্ট সাইকেল, বাচ্চাদের সাইকেল ও পাওয়া যায়।

চলতি সময়ে জ্বালানির সংকট, উত্তপ্ত তেল বাজার ও আর্থিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায়ও সাইকেল হতে পারে সময়োপযোগী বন্ধু।

Comments

The Daily Star  | English

One killed as bearing pad of metro rail falls at Farmgate, train operations halted

As a safety measure, metro rail services remain suspended from 12:30pm, Dhaka Mass Transit Company Limited official says

33m ago