সুস্বাদু পাহাড়ি খাবার বাঁশ কোড়ল

বাঁশ কোড়ল
ছবি: রিকোর্স চাকমা

পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের খুবই প্রিয় খাবার বাঁশ কোড়ল। এসব এলাকার পর্যটকদের কাছে, এমনকি ঢাকাতেও দিন দিন সবজি ও বিভিন্ন খাবারের উপকরণ হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এটি। পর্যটকদের চাহিদার কারণে বাড়ির রান্নাঘরের গণ্ডি ছাড়িয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোর মেনুতে জায়গা করে নিয়েছে বাঁশ কোড়ল। 

মূলত বাঁশের গোঁড়ায় কচি নরম অংশকে বলা হয় বাঁশ কোড়ল। চাকমা ভাষায় বাঁশ কোড়লকে বলা হয় বাচ্ছুরি, মারমা ভাষায় মেহ্যাং, ত্রিপুরা ভাষায় মেওয়া।

বাঁশ কোড়ল
ছবি: রিকোর্স চাকমা

তিন পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ কোড়ল পাওয়া যায়। তবে সব বাঁশের কোড়ল খাওয়া যায় না। যেগুলো খাওয়া যায় তার মধ্যে মুলি বাঁশ, ডলু বাঁশ, মিতিঙ্গ্যা বাঁশ, ফারুয়া বাঁশ, বাজ্জে বাশঁ, কালিছুরি বাঁশসহ বেশ কয়েক প্রজাতির বাঁশ কোড়ল পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ কোড়লের স্বাদে ভিন্নতা রয়েছে। সবজি হিসেবে ভাজি, মাংস দিয়ে রান্নাসহ বিভিন্ন রেসিপি করে খাওয়া যায় এটি।

বর্তমানে বাঁশ কোড়ল পাহাড়িদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছেও জনপ্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় হোটেল-রেস্টুরেন্টে তো পাওয়া যায়ই, ঢাকায় পাহাড়ি রেস্টুরেন্টগুলোতেও বাঁশ কোড়লে তৈরি সুস্বাদু বিভিন্ন খাবার খেতে আসেন নানা এলাকার মানুষ।

বছরের মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত এই বাঁশ কোড়লের ভরা মৌসুম থাকে। এ সময় পাহাড়ের হাটবাজারগুলোতে প্রচুর বাঁশ কোড়ল পাওয়া যায়। মাটি থেকে ৪-৫ ইঞ্চি গজিয়ে উঠলে এটি খাওয়ার উপযোগী হয়। বাঁশে পরিণত হওয়ার আগে স্থানীয়রা বাঁশ গাছের গোড়া থেকে কচি অংশ সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন।

রাঙামাটি শহরের বনরূপা বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বাঁশ কোড়ল ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

বনরূপা বাজারের বাঁশ কোড়ল বিক্রি করতে যাওয়া ননাবী চাকমা বলেন, 'বাজার দিনে বাড়ির পাশে নিজের বাঁশ বাগান থেকে বাঁশ কোড়ল সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে আসি। অনেক সময় ৫০০ টাকা, আবার অনেক সময় ৩০০ টাকার বাঁশ কোড়ল বিক্রি করি। ওই টাকাতেই পরিবারের জন্য বাজারসহ প্রয়োজনীয় জিনিস কিনি।'

আরেক বিক্রেতা মোহন চান চাকমা বলেন, 'এই বৃষ্টির সময়ে বন থেকে বাঁশ কোড়ল সংগ্রহ করা খুব কষ্ট। মশা, সাপসহ বিভিন্ন পোকামাকড়ের কামড় খেতে হয়। অনেকে সময় ক্রেতারা কিনতে চান না, ফলে কম দামেও বিক্রি করতে হয়। যে পরিমাণ কষ্ট হয়, সে পরিমাণে আয় হয় না।'

রাঙামাটির সুনজুক হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক সুচনী চাকমা বলেন, 'পাহাড়িদের পাশাপাশি অন্যদের মধ্যেও বাঁশ কোড়ল খাওয়া প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে পর্যটকদের মাঝে বাঁশ কোড়ল খাওয়ার চাহিদা বেশি। রেস্টুরেন্টে ভাত খেতে এলে তারা বাঁশ কোড়ল খোঁজেন।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

4h ago