শুঁটকি খাওয়া কি ক্ষতিকর?

শুঁটকি খাওয়া কি ক্ষতিকর?

আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। মাছ আমাদের অন্যতম প্রধান খাদ্য। এই মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি বানিয়ে খাওয়া একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। অনেক অঞ্চলের জনপ্রিয় খাবার এই শুঁটকি। তবে অনেকের মনেই প্রশ্ন আসে, শুঁটকি খাওয়া কি ক্ষতিকর?

চলুন এমএইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ আঞ্জুমান আরা শিমুলের কাছ থেকে জেনে নিই শুঁটকি খাওয়া ক্ষতিকর কি না এ প্রশ্নের উত্তর।

আঞ্জুমান আরা শিমুল জানান, শুঁটকি খাওয়া ক্ষতিকর কি না, এ প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে আপনি কী ধরনের শুঁটকি খাচ্ছেন, কীভাবে তা সংরক্ষণ ও প্রস্তুত করা হয়েছে এবং আপনি কতটুকু পরিমাণে খাচ্ছেন—এই বিষয়গুলোর ওপর।

প্রথমে জেনে নেওয়া যাক শুঁটকির পুষ্টিগুণ।

শুঁটকির পুষ্টি উপাদান পরিমাণ

প্রতি ১০০ গ্রাম শুঁটকির আনুমানিক পুষ্টি উপাদান (ভাজা নয়):

শক্তি (ক্যালরি) ২২০–৩০০ ক্যালোরি

প্রোটিন ৫০–৭০ গ্রাম

ফ্যাট ২–৬ গ্রাম

ক্যালসিয়াম ৮০০–১২০০ মি.গ্রা

আয়রন ২–৫ মি.গ্রা

ওমেগা-৩ ১–২ গ্রাম (সামুদ্রিক শুঁটকি)

সোডিয়াম (লবণ) ৫০০–৩০০০ মি.গ্রা (প্রসেসিংয়ের ওপর নির্ভর করে)

শুঁটকির প্রধান পুষ্টিগুণ

বাংলাদেশের জনপ্রিয় খাদ্য শুঁটকি শুধু রুচির জন্য নয়, পুষ্টির দিক থেকেও অনেক সমৃদ্ধ।

১. প্রোটিন

শুঁটকি উচ্চ মানের প্রোটিনের উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম শুঁটকিতে গড়ে ৫০-৭০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন থাকে (বিশেষ করে ছোট মাছ বা সামুদ্রিক শুঁটকিতে)। শরীরের কোষ গঠন, ক্ষয়পুরণ, হরমোন ও এনজাইম তৈরিতে সহায়ক এটি।

২. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড

বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছের শুঁটকিতে থাকে। যেমন: লইট্টা, চিংড়ি, রূপচাঁদা। এটি হৃদযন্ত্র, চোখ ও মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত উপকারী। রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।

৩. ক্যালসিয়াম

ছোট মাছের শুঁটকি (যেমন: চাঁদা, কাচকি, পুঁটি) হাড়সহ খাওয়া যায়, তাই এতে উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম থাকে। হাড় ও দাঁতের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতি ১০০ গ্রামে ১০০০ মি.গ্রা. পর্যন্ত ক্যালসিয়াম থাকতে পারে।

৪. আয়রন

শুঁটকিতে আয়রন থাকে যা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সহায়তা করে। অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী (যদি ফরমালিন কীটনাশক ও ডি ডি টি পাউডার মুক্ত থাকে)।

৫. জিঙ্ক ও ম্যাগনেসিয়াম

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। হরমোন ব্যালান্স, ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ ও নার্ভের কার্যকারিতায় ভূমিকা রাখে।

৬. ভিটামিন

ভিটামিন ডি: সামুদ্রিক শুঁটকিতে ভালো পরিমাণে থাকে।

ভিটামিন বি১২: স্নায়ুতন্ত্র ও রক্তকণিকা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও বি১, বি২, বি৬ সহ কিছু বি-ভিটামিন থাকে।

 শুঁটকির ক্ষতিকর দিক

১. অতিরিক্ত লবণ:

শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণে অনেক সময় অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার করা হয়, যা রক্তচাপ বাড়ায় এবং কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

২. রাসায়নিক দ্রব্য (ফরমালিন/ডিডিটি):

অনেক বিক্রেতা শুঁটকির সংরক্ষণে ফরমালিন, কীটনাশক (ডিডিটি) ব্যবহার করেন। এগুলো ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

৩. ধোঁয়া বা দাহ্য গ্যাসে শুকানো:

যেসব শুঁটকি কাঠ বা পলিথিন পোড়ানো ধোঁয়ায় শুকানো হয়, তাতে কার্সিনোজেনিক (ক্যানসারজনিত) পদার্থ জমে যায়।

৪. জীবাণু ও ছাঁচ:

ভালোভাবে সংরক্ষণ না করলে শুঁটকিতে ছাঁচ (ফাঙ্গাস) ও ব্যাকটেরিয়া জন্মায়, যা খাদ্যবাহিত রোগ ঘটাতে পারে।

যাদের জন্য শুঁটকি বর্জন বা সতর্কতা প্রয়োজন

উচ্চ রক্তচাপ রোগী, কিডনির রোগী, অন্তঃসত্ত্বা নারী (রাসায়নিক-দূষণের ঝুঁকির কারণে), শিশুদের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে।

ক্ষতি থেকে বাঁচতে করণীয়

ভালো মানের শুঁটকি কিনুন

যেসব বাজারে ফরমালিন বা রাসায়নিকমুক্ত শুঁটকি পাওয়া যায়, যেমন কক্সবাজার/সীতাকুণ্ড এলাকার ভালো ব্র্যান্ড, সেখান থেকে সংগ্রহ করুন।

ভেজে/সেদ্ধ করে খান

শুঁটকিকে ভালো করে ধুয়ে তারপর ভাজা বা রান্না করে খেলে জীবাণু ও রাসায়নিকের প্রভাব কিছুটা কমে।

পরিমাণে কম খান

সপ্তাহে ১-২ বার ছোট পরিমাণে শুঁটকি খাওয়া নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর, যদি ভালো মানের হয়।

তাহলে শুঁটকি কি ক্ষতিকর?

শুঁটকি হলো এক ধরনের পুষ্টির খনি, বিশেষ করে কম দামে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ওমেগা-৩, আয়রন ইত্যাদি পাওয়ার জন্য। তবে রাসায়নিক-মুক্ত, ভালোভাবে সংরক্ষিত এবং পরিমিত পরিমাণে খেলে এটি স্বাস্থ্যকর। ভালোভাবে প্রস্তুত ও রাসায়নিকমুক্ত শুঁটকি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া ক্ষতিকর নয়, বরং তা পুষ্টিকর। তবে বাজারে বিক্রি হওয়া নিম্নমানের ও রাসায়নিকযুক্ত শুঁটকি নিয়মিত খেলে তা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladeshi graft suspects: Rush on to offload UK assets

At least two high-value UK properties were sold in the past year -- one linked to Sayem Sobhan Anvir and one to Anisuzzaman Chowdhury Ronny.

12h ago