কলেজ জীবনে এগিয়ে রাখবে যে ৬টি কাজ

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এবার স্কুল জীবনকে বিদায় জানিয়ে কলেজে ওঠার পালা। নতুন বছরে নতুন পড়াশোনার জগতে প্রবেশে উৎসাহের যেন শেষ নেই। ইতোমধ্যে পছন্দের কলেজে সুযোগ পেয়ে দিন গুনতে শুরু করেছে অনেকেই। এ সময়টা যেমন আনন্দের, স্বপ্নের, তেমনি উদ্বেগেরও। কারণ উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনার ওপর নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রস্তুতি। তাই জীবনের লক্ষ্যকে বাস্তবে রূপ দিতে এ সময়টা নিজেকে সাজাতে হবে নতুন আঙ্গিকে, নতুন উদ্যমে।  

সেজন্য করা যেতে পারে এই ৬টি কাজ-

শিডিউল ঠিক করা

২ বছরের কলেজ জীবনে পড়াশোনার চাপ খানিকটা বেশিই বলা চলে। ক্লাস, বাড়ির কাজ, সহশিক্ষা কার্যক্রম তো থাকবেই, তাই বলে কি আনন্দ করা যাবে না? সব কাজ সামলে দিনের কিছুটা সময় নিজের জন্য রাখাটা কিন্তু জরুরি। এজন্য সবকিছুর আগে তৈরি করে নিতে হবে প্রত্যেক কাজের নির্দিষ্ট শিডিউল। তা না হলে শুধু পড়াশোনা আর সব দায়দায়িত্বের ভারে কলেজ জীবনটাই আর উপভোগ করা হবে না। এমনটা তো হতে দেওয়া যায় না।

পড়াশোনা করলে কি অন্য কিছু করা যায় না? অবশ্যই যায়। পড়াশোনার ফাঁকে যেমন বিরতি  নিতে হবে, তেমনি নিতে হবে নিজের যত্ন। সারাক্ষণ বই-খাতার মধ্যে ডুবে না থেকে আরাম আর আনন্দ করার সময়ও বের করতে হবে নিজেকেই।

বলো তো, ঘুম পড়াশোনার ওপর ঠিক কতটা প্রভাব ফেলে? এক কথায় প্রচুর। এমনকি সুস্থ থাকা এবং আনন্দে থাকার জন্যও কোনোভাবেই পর্যাপ্ত ঘুমকে এড়িয়ে যাওয়া চলবে না। রাত ১০টার মধ্যেই ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। পরীক্ষা বা জরুরি কাজের জন্য মাঝেমাঝে কিছু সময় এদিক সেদিক হতে পারে। তবে কোনোভাবেই নিয়মিত দেরি করে ঘুমানোর অভ্যাস করা যাবে না। কারণ এই অভ্যাস পরে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বা চাকরি করার সময় ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রায় রূপ নিতে পারে।

ক্লাসের লেকচার নোট করা

স্কুল জীবনের পড়াশোনার চেয়ে কলেজের পড়াশোনা তুলনামূলক কঠিন হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ এ পর্যায়ে সব বিষয়বস্তুর বিস্তারিত ধারণা দেয়ার জন্য পাঠ্যতালিকা ও পাঠ্যপুস্তক তৈরি করা হয়। এজন্য বাড়িতে নিয়মিত পড়াশোনা করার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষেও মনোযোগ দিতে হবে। শিক্ষকের লেকচার শোনা অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খাতায় টুকে নিতে হবে, যেন পরে সেটি পড়ার সময় সমস্যা না হয়।

তবে এক্ষেত্রে ভালোভাবে নোট করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নোটবুকে লেখা লাইনগুলো পরিষ্কার বুঝা যায়। সবচেয়ে ভালো হয়, শিক্ষক যখন কোনো বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেন সেটি নির্দিষ্ট শব্দ বা টপিকের পাশে লিখে রাখা। যাতে পরীক্ষার সময় সেগুলো জোর দিয়ে পড়া যায়। ডায়াগ্রাম বা চিত্র থাকলে সেটির বিস্তারিত এঁকে রাখতে হবে, পরে যেন দেখলেই বুঝে ফেলা যায়। 

ঠিকমতো খাওয়া ও ব্যায়ামের অভ্যাস করা

নিয়মিত খাওয়া ও ব্যায়াম যেমন স্বাস্থ্য ভালো রাখবে, তেমনি ক্লাস চলাকালীন মনোযোগ ধরে রাখতেও সাহায্য করবে। শরীর ভালো না লাগলে বাসায় বিশ্রাম নিতে হবে বা ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে যাতে পূর্ণ উদ্যমে আবার ক্লাসে ফেরা যায়। নিয়মিত ব্যায়াম লেকচারের সময় সজাগ রাখবে, আবার স্মৃতিশক্তিও বাড়াবে।

সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা ও ক্লাসে ক্লান্তিকর অনুভূতি এড়াতে রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। পড়াশোনার চাপে রাতে ঘুম না হলে বিছানায় যাওয়ার আগে কিছুক্ষণ নন ফিকশন বই পড়া যেতে পারে।

কলেজ জীবন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার, নিজেকে আবিষ্কার করার সময়। তাই বদ্ধ ঘরে ঘুমিয়ে থাকা বা পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে দুশ্চিন্তা করে সময় অপচয় করা কোনোভাবেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কলেজের বিভিন্ন ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে যোগ দেওয়ার সুযোগও হাতছাড়া করা যাবে না। 

তোমার যা ভালো লাগে, আনন্দ লাগে তাই করো। কলেজ জীবন অল্প সময়ের মধ্যে সেরা মুহূর্ত উপহার দেয়, তাই নিজেকে গুটিয়ে রেখে না।

স্টাডি গ্রুপ খোঁজা

পড়াশোনার ট্র্যাক ধরে রাখতে স্টাডি গ্রুপ তৈরি করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। এতে  সহপাঠীদের সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব যেমন হয়, তেমনি পড়াশোনায় অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। অনেক সময় পড়তে ইচ্ছা না করলেও অন্যদের আগ্রহ দেখলে উৎসাহ চলে আসে। এ ছাড়া ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে প্রয়োজনীয় নোট আদান-প্রদান করা, কোনো বিষয় বুঝতে অসুবিধা হলে সাহায্য পাওয়াও সহজ হয়ে যায়।

দীর্ঘদিন ছুটি পেলে বা পরীক্ষার আগে নিজেদের মধ্যে মিটিং করে পড়াশোনা করতে সাহায্য করে স্টাডি গ্রুপ। এত উপকারী হওয়া সত্ত্বেও অনেক সময় গ্রুপ তৈরি করা সহজ হয় না। এজন্য ব্যক্তি উদ্যোগে কাছের বন্ধুদের প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে। তবে ২-৩ জন মিলে শুরু করলে ধীরে ধীরে অন্যরাও এতে উৎসাহ পাবে এবং নিজেদের মধ্যে বন্ধনও দৃঢ় হবে।

সময় ব্যবস্থাপনা মেনে চলা

ক্লাসের শিডিউল, অ্যাসাইনমেন্টের ডেডলাইন, পরীক্ষার প্রস্তুতি— সঠিকভাবে সব কাজ করার জন্য সময় মেপে চলার অভ্যাস করা শিখতে হবে। ক্যালেন্ডারে রিমাইন্ডার দিয়ে রাখলে সময়মতো জরুরি কাজ করতে ভুলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতে পড়তে হবে না।

নিজের টার্গেট নিজেকেই ঠিক করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে কতটুকু পড়াশোনা করতে হবে এবং সপ্তাহের দিনগুলোতে কী পরিমাণ পরিশ্রম করতে হবে সব হিসেব করতে হবে। কারণ প্রতি দিনের পড়াশোনা বছর শেষে বিশাল সিলেবাস শেষ করার ঝামেলা থেকে রেহাই দেয়।

শিক্ষক-সহপাঠীদের সাহায্য নেওয়া

কখনোই শিক্ষকদের ভয় পেয়ে দূরে থাকলে চলবে না। শিক্ষকরা গম্ভীর হলেও, তারা শিক্ষার্থীবান্ধব আচরণ করবেন এমন প্রত্যাশা রাখতে হবে। কোনো বিষয় বুঝতে সমস্যা হলে অস্বস্তিতে না ভুগে তাদের সাহায্য চাইতে হবে। ক্লাসে সময় দিতে না পারলে পরে আলাদা করে বুঝে নেওয়ার অনুমতি নেওয়া যেতে পারে। ভুলে গেলে চলবে না, শিক্ষার্থীদের জন্যই শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার মনমানসিকতা নিয়েই তারা এ পেশায় আসেন।

অন্য সহপাঠীরা নির্দিষ্ট বিষয় সহজে বুঝতে পারলে আগের কোনো ধারণা তাদের বুঝতে সাহায্য করেছে কি না জিজ্ঞাসা করতে হবে। তাদের কাছ থেকেও সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

আশা করি, এসব বিষয় মেনে চললে কলেজ জীবনের সময়টা পড়াশোনার পাশাপাশি আনন্দে কাটবে এবং পরিণত মানুষ হওয়ার সুদীর্ঘ যাত্রা সুগম ও সুশোভিত হবে।  

Comments

The Daily Star  | English
foreign travel rules for government officials Bangladesh

Advisers, secretaries flouting foreign travel rules

CA upset over repeated violations; officials urged to follow directives ahead of election

2h ago