যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের শিকার হলে কী আইনি ব্যবস্থা নেবেন

যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

যৌতুক সমাজের অভিশাপ। দেশ উন্নয়নের পথে হাঁটলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি যৌতুক প্রথা। আর যৌতুকের দাবিতে সারাদেশে বহু নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের শিকার হলে করণীয় ও যৌতুক অপরাধের সাজা সম্পর্কে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী ইশরাত হাসান।

যৌতুকের জন্য নির্যাতন

আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, সাধারণত ভুক্তভোগী নারী তার স্বামীর মাধ্যমে এই অপরাধের শিকার হন। অনেক সময় শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ, দেবরের মতো শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের মাধ্যমেও নির্যাতনের শিকার হন। যদি কোনো নারী তার স্বামী কিংবা শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের দ্বারা যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন, তবে এই নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ আনা যায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর অধীনে।

যৌতুকের জন্য ভুক্তভোগী নারীরা সাধারণত শারীরিক, মানসিক, আর্থিক এবং সামাজিকভাবে নির্যাতিত হন। যেমন- মেরে ফেলা, আগুনে পোড়ানো, অপমান ও মানসিক নির্যাতন, বাবা-মায়ের বাড়ি থেকে অর্থ বা সম্পদ আনার চাপ, বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া বা তালাবদ্ধ করে রাখা ইত্যাদি। এসব অপরাধের বিচার হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর অধীনে।

যৌতুক অপরাধের বিচারে যৌতুক নিরোধ আইন

আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, যৌতুক নেওয়া বা দাবি করা সম্পূর্ণ বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য। যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ অনুযায়ী যৌতুক চাওয়া, যৌতুক নেওয়া বা দেওয়া একটি ফৌজদারি অপরাধ। এই আইন অনুযায়ী, যৌতুক দেওয়া-নেওয়া বা চাওয়ার অপরাধে দোষী হলে দায়ী ব্যক্তির ৫ (পাঁচ) বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হতে পারে।

নারী ও পুরুষ উভয়েই এই আইনে বিচার চেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবেন। স্বামী-স্ত্রী অথবা শ্বশুরবাড়ির যে কেউ যৌতুক দাবি করলে তারা আইনের চোখে অপরাধী।

আইনে যৌতুক অপরাধের সাজা

যৌতুক দমন আইন, ১৯৮০ অনুসারে, যৌতুক দাবি, গ্রহণ বা প্রদান করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল এবং জরিমানা।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (ধারা ১১) অনুসারে, যৌতুকের কারণে নির্যাতন হলে অপরাধভেদে আরও কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়।

যৌতুকের জন্য মৃত্যু বা আঘাতের সাজা

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অনুযায়ী ধারা ১১(ক): যৌতুকের কারণে নারীর মৃত্যু ঘটলে, মৃত্যুদণ্ড বা আজীবন কারাদণ্ড পারে।

ধারা ১১(খ): গুরুতর শারীরিক আঘাতের জন্য যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড কিংবা ১২ বছর কারাদণ্ড, সঙ্গে জরিমানা হতে পারে।

ধারা ১১(গ): শারীরিক সাধারণ আঘাতের জন্য ৫ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড, সঙ্গে জরিমানা হতে পারে।

যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের শিকার হলে করণীয়

আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের শিকার হলে ভুক্তভোগীকে আইনি ও সামাজিকভাবে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন-

১. নিকটস্থ থানায় এফআইআর করে মামলা করতে পারেন।

২. কোর্টে আইনজীবী নিয়োগ করে মামলা দায়ের করতে পারেন।

৩. জাতীয় বা জেলা লিগ্যাল এইড অফিস থেকে বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা নিতে পারেন।

৪. নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে, লিগ্যাল এইড অফিস বা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সহায়তা দিতে পারে।

আরও যা জানা প্রয়োজন

যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী নারীকে যৌতুকের বিরুদ্ধে মামলা বা আইনি সহায়তার জন্য কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন-

১. প্রমাণ সংগ্রহ করা জরুরি। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকলে তার চিকিৎসা কাগজ, প্রতিবেশীর সাক্ষ্য, নির্যাতনের ছবি, অডিও/ভিডিও, মেসেজ ইত্যাদি সংরক্ষণ করতে হবে।

২. সময়মতো থানায় অভিযোগ করতে হবে। কারণ দেরি করলে সন্দেহ তৈরি হয়।

৩. বিশ্বস্ত আইনজীবীর পরামর্শ নিতে হবে।

৪. সারাদেশের লিগ্যাল এইড অফিসে যোগাযোগ করা যাবে।

৫. জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা (বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট- BLAST) ও নারীপক্ষ, মহিলা পরিষদ থেকে সহায়তা পাওয়া যায়।

৬. যদি নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী নারীর সন্তান থাকে, তবে অভিভাবকত্ব ও নিরাপত্তা বিষয়েও চিন্তা করে পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Tug-of-war over water lily continues

The Election Commission and National Citizen Party remain locked in a heated debate over the party’s choice of electoral symbol, the water lily -- a dispute that began in June.

4h ago