আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরি পাওয়ার রোডম্যাপ

এনজিও
ইলাস্ট্রেশন: সৈয়দা আফরিন তারান্নুম

আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করার স্বপ্ন অনেকেই দেখেন। তবে কী করে কাজ পাওয়া যায়, তা নিয়ে হয়তো স্পষ্ট ধারণা সবার থাকে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নিজস্ব কাঠামো থাকলেও, তাদের আবেদন প্রক্রিয়া অন্য যেকোনো চাকরির মতোই।

প্রথমত, এই ধরনের সংস্থায় চাকরির যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় তা খুঁজে পাওয়া বেশ সহজ। কারণ আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য লিংকডইন, ইউএন ক্যারিয়ার্স এবং ইউএন ভলেন্টিয়ার্সের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে পাওয়া যায়। চাকরিপ্রার্থীদের কেবল তাদের দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটি পদের সন্ধান করতে হয় এবং সেই অনুযায়ী আবেদন করতে হয়।

এ ব্যাপারে কথা হয় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির, বাংলাদেশ অফিসে কর্মরত লামিয়া মহসিনের সঙ্গে।

লামিয়ার মতে, 'আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করতে কিছু জটিলতা মোকাবিলা করতে হয়। তার জন্য বিশেষ কিছু ব্যক্তিগত দক্ষতা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, বিভিন্ন সংস্কৃতি ও পরিবেশে কাজ করার দক্ষতা, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং সর্বোপরি অন্যের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের শক্তি থাকা।'

এই দক্ষতাগুলো অপরিহার্য। কারণ আন্তর্জাতিক উন্নয়নে এমন কর্মী প্রয়োজন যারা বিভিন্ন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন, বিভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে।

যারা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভাবছেন, তাদের জন্য এটা বোঝা জরুরি যে, আগ্রহের ওপর ভিত্তি করে সংস্থাগুলোতে কাজের ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে আপনার আগ্রহের সঙ্গে অভিজ্ঞতার সংযোগ থাকা কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম শর্ত।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'সাধারণত মাঠ পর্যায়ে অভিজ্ঞতা অর্জন, পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং নেতৃত্ব পদে উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে পেশাগত উন্নতি ঘটে। অনেক পেশাদার, স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা থেকে আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এবং পরে জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে উচ্চ পদে যোগদান করেন।'

সাফল্যের কোনো একক পথ না থাকলেও, অভিজ্ঞতা অর্জন এবং নিজের পরিচিতি বাড়ানো এই ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অপরিহার্য।

অন্যান্য চাকরির মতোই আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সুপারিশ একটি ভূমিকা রাখতে পারে। তবে লামিয়ার ভাষ্যমতে, কেবল সুপারিশের মাধ্যমেই চাকরি পাওয়া যায় না। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়, যার মধ্যে লিখিত এবং মৌখিক মূল্যায়নের মতো বিভিন্ন স্তর থাকে।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে জাতিসংঘে চাকরি পাওয়া অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো। তবে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জীবনবৃত্তান্ত বাছাই প্রক্রিয়ায় উতরে যাওয়া। প্রাসঙ্গিক শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি পদের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ অভিজ্ঞতা না থাকলে প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়ার ঝুঁকি বাড়ে।

মূলত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর লোভনীয় বেতন এবং সুযোগ-সুবিধা দেখে অনেকে এ সংস্থাগুলোয় কাজ করার আগ্রহ বেশি দেখান।

তবে এ বিষয়ক ধারণা পুরোপুরি সত্য নয়।

এ ব্যাপারে লামিয়া বলেন, 'অনেকেই ধরে নেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকলেই এরকম চাকরি নিশ্চিত। আকর্ষণীয় বেতন নিশ্চিত। কিন্তু বাস্তবে এ জাতীয় কাজে অনেক চাপ থাকে এবং চাকরি পাওয়া ব্যক্তিদের পরিবার থেকে দূরে থাকতে হতে পারে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বা যাদেরকে বিভিন্ন মিশনে পাঠানো হয় তাদেরকে। শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা নয়, এর পাশাপাশি অভিজ্ঞতা, পারস্পরিক যোগাযোগ দক্ষতাও এ সেক্টরে টিকে থাকতে খুব গুরুত্বপূর্ণ।'

যারা কর্মজীবন নিয়ে ভাবছেন, তাদের চাকরিতে প্রবেশের জন্য লামিয়া প্রয়োজনীয় কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'সাধারণত প্রাথমিক স্তরের পদের জন্য স্নাতক ডিগ্রি প্রয়োজন। তবে মধ্যম ও উচ্চ স্তরের পদের জন্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রায়শই যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়। গবেষণা বা উপদেষ্টা পদে কাজের জন্য, প্রাসঙ্গিক বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি প্রাথমিক যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়।'

লামিয়া আরও বলেন, 'স্নাতক ডিগ্রি, প্রাসঙ্গিক কাজের অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে ইন্টার্নশিপ বা ফেলোশিপ, প্রাথমিক স্তরে সুযোগের দরজা খুলে দিতে পারে।'

'এনজিওতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা, ইউএন ভলান্টিয়ার্স হিসেবে জাতিসংঘের প্রোগ্রামগুলোতে অংশগ্রহণ করা বা তৃণমূল পর্যায়ের উদ্যোগে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া, গবেষণা, লেখালেখি এবং জনসমক্ষে বক্তব্য দেওয়ার মতো বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ পেতে বিশেষভাবে কাজে আসতে পারে', যোগ করেন তিনি।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করার সবচেয়ে ভালো দিক হলো, আপনার কাজের বাস্তব ফলাফল আপনি হাতেনাতে পেয়ে যেতে পারেন।

লামিয়া বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সামান্য অবদানও অনেক তৃপ্তি দেয়। তাছাড়া, উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেওয়া এবং পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের উন্নতিতে অবদান রাখার সুযোগ আনন্দ দিতে পারে। সারা বিশ্ব থেকে আসা মানুষের সঙ্গে কাজ করা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সম্পর্কে ভালোভাবে জানার ব্যবস্থা হয় সংস্থাগুলোতে কাজ করার মাধ্যমে।'

তবে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোতে কাজ করার অগ্রাধিকার পাওয়া সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে। যারা এই ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের সেই অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।

লামিয়া উল্লেখ করেন, 'গত দশকে, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন এবং জ্বালানি রূপান্তরের মতো পরিবেশবান্ধব চাকরির চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু তহবিল সংকট এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো কারণগুলোর প্রভাবে চাকরির বাজারের নাজেহাল অবস্থাও স্পষ্ট।'

যারা আন্তর্জাতিক সংস্থায় ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভাবছেন, তাদের জন্য লামিয়ার গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হলো, 'মাঠ পর্যায়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন, যত বেশি সম্ভব পারস্পরিক যোগাযোগ তৈরি করুন, বৈশ্বিক নীতি এবং সমস্যাগুলো অনুসরণ করুন এবং বৈচিত্র্যময় কর্ম পরিবেশে নিজেকে উদার হিসেবে তুলে ধরুন।' আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করার জগত একটি গতিশীল এবং পরিবর্তনশীল বিষয়। এক্ষেত্রে সাফল্যের কোনো নির্দিষ্ট পথ না থাকলেও, পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ানো, ক্রমাগত শেখা এবং নিজের ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ব্যাপারে আগ্রহ থাকা আপনার কর্মজীবনে ভালো কিছু দিতে পারে।

অনুবাদ করেছেন সঞ্জয় দত্ত

Comments

The Daily Star  | English
gold price rises in Bangladesh

Gold shines through 2025 amid price volatility

If there were a “metal of the year” award, gold would be a strong contender, maintaining an exceptional run even on the final trading day of 2025..Businesspeople said the retail gold market in Bangladesh has remained unstable over the past few months, driven by fluctuating global prices, s

Now