গৃহকর্মী নিয়োগে কোন কোন বিষয়ে খেয়াল রাখবেন
শহুরে জীবনে কিছুই যেন মন্থর গতিতে আরাম দেওয়ার মতো নয়। এমনকি নিজের বাসস্থানের চেয়েও বেশি সময় কাটে আমাদের অফিসে, আর রাস্তার জ্যামে। এমন অবস্থায় বাড়ির কাজের জন্য অবশ্যম্ভাবীভাবেই নির্ভর করতে হয় তৃতীয় পক্ষের ওপর।
কিন্তু যাদের ওপর এভাবে অনেকটা চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে হয়, তাদের নিয়ে অনিরাপত্তাবোধের জায়গাটাও অনেক বেশি। নিজের ঘর, এমনকি নিজের নিরাপত্তাও অনেকাংশে নির্ভর করে তাদের ওপর।
সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গৃহকর্মীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন এক মা ও তার মেয়ে। চোখ-কান খোলা রাখতে সাবধানতার বাণী দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনারও। কীভাবে সাবধান থাকব, এ নিয়েই আজকের লেখাটি।
পাসপোর্ট সাইজ ছবি জমা
গৃহকর্মীকে কাজে রাখার আগে তার কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে যে তথ্য যোগাড় করতে হবে, এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে সম্প্রতি তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি। সাধারণত চাকরিক্ষেত্রে বা যেকোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাজে আমাদের নিজের ছবি জমা দিতে হয়। ভাড়াটিয়াদের নিবন্ধন ফর্মেও এ ছবির প্রয়োজন হয়। একই নিয়ম মেনে গৃহকর্মীর ছবি সংগ্রহ করুন, ছবির সঙ্গে চেহারা মিলিয়ে দেখুন।
পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা
জাতীয় পরিচয়পত্র বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের চিহ্নিতকরণ নথি। কেউ যদি কোনো ধরনের দুষ্কর্ম করেও থাকে, আইনিভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব। তাই, অবশ্যই গৃহকর্মী নিয়োগের আগে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিতে বলুন। এতে করে কাজের জায়গায় তার নিজস্ব স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হবে। কেউ যদি তা জমা দিতে না চান, সেক্ষেত্রে না এগোনোই ভালো।
বাসার ঠিকানা নিশ্চিতকরণ
ব্যক্তিটির বর্তমান বাসস্থানের সম্পূর্ণ ঠিকানা ও ফোন নম্বর লিখে রাখুন এবং সম্ভব হলে তা নিজে থেকে বা পরিচিত কাউকে দিয়ে নিশ্চিত করুন। এতে করে নিরাপত্তার বিষয়টি আরেকটু পাকাপোক্ত হবে এবং কারও কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে, প্রথমেই তার উত্তর দেওয়ার ভঙ্গি থেকে সেটি আঁচ করে নেওয়া যাবে এবং পরবর্তীতে আরও সাবধান হওয়া যাবে।
শনাক্তকারীর নাম-ঠিকানা সংগ্রহ
কাউকে বাড়িতে কাজে নিয়োগ দেবার আগে তাকে ভালোভাবে চেনে, এমন দুয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ঝামেলায় পড়লে যাতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সুরাহা করা যায়, সেজন্য তাদের নাম-ঠিকানা ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করে রাখুন। নম্বরগুলোতে ফোন দিয়ে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে নেওয়া যেতে পারে। কথায় আছে, সাবধানের মার নেই। তাই যতটা সম্ভব, সাবধানতা অবলম্বন করতে যে যে পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেগুলো গ্রহণ করা উচিত।
এলাকায় কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা যাচাই
অপরিচিত লোকের চেয়ে পরিচিত মানুষের সুপারিশের ওপর নির্ভর করা এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো। বর্তমানে অনেক এজেন্সি গৃহকর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে। অনেকে হয়তো চলার পথে কাজ চাইতে আসেন। দয়াপরবশ হয়ে কারো সাহায্য করাটা মহান দিক বটে। কিন্তু এতে করে নিজের নিরাপত্তা কতটা বিপদজনক করে তুলছেন—সেদিকেও সমান নজর রাখতে হবে। আপনার পুরোনো প্রতিবেশীর বাড়িতে অনেকদিন ধরে কাজ করছেন বা একই বিল্ডিং কিংবা আবাসিক এলাকায় কাজ করেন, এমন গৃহকর্মী নিয়োগ দেওয়া অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।
নতুন এলাকায় কী করবেন
কিন্তু নতুন এলাকায় গিয়ে যখন সবই নতুন, তখন পুরোনো প্রতিবেশী, পরিচিত, এলাকা কিংবা চেনা লোককে নিয়োগ দেওয়াটা হয়তো অত সহজ নয়। সেক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা মেনে চলতে হবে। ভাড়া বাসার ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক, কেয়ারটেকারদের সুপারিশে গৃহকর্মী নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই এসব ক্ষেত্রেও অন্যান্য সতর্কতা—যেমন: সম্প্রতি তোলা পাসপোর্ট সাইজ ছবি, পরিচয়পত্র, শনাক্তকারী ব্যক্তি ইত্যাদি বিষয় প্রস্তুত রাখতে হবে।
গৃহকর্মীদের ছাড়া যেন মেট্রোপলিটনের এই জীবন কল্পনাও করা যায় না। ঘরের কোন দেয়ালে ঝুল জমেছে, ফ্রিজে কোন সবজিটা বহুদিন ধরে পড়ে রয়েছে, সবই তাদের নখদর্পণে। সকালের নাশতা কিংবা ক্লান্ত রাতের খাবারের তালিকাও অনেকসময় তাদের পছন্দমতো হয়।
এই গৃহকর্মীরা, কেউ খণ্ডকালীন, কেউ স্থায়ীভাবে আমাদের বাড়িঘরেরই একটি প্রাত্যহিক অংশ হয়ে ওঠেন। তাই আমাদের জীবনের অংশ হয়ে ওঠার আগে সেই ব্যক্তিটি সম্পর্কে যতটা সম্ভব নিশ্চিত হওয়াটাই একজন সচেতন নাগরিকের কাজ। এতে করে নিজের ও নিজের পরিবারের সুরক্ষা বলয় আরও জোরদার হয়।


Comments