ট্রাফিক জ্যামের শহরে শুক্রবার মানেই যেন উৎসব
দৈনন্দিন কর্মজীবনে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো আমাদের মধ্যে এক ধরনের উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করে। শুক্রবার এলে যেন স্বস্তির ছোঁয়া পাওয়া যায়, আর অধিকাংশ মানুষ সারা সপ্তাহ ধরে এই মুহূর্তের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। ঢাকার শহরে এই অনুভূতির প্রকাশ তুলনামূলকভাবে আরও প্রবল দেখা যায়।
আগের দিন থেকেই যেন শুক্রবারের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে
বৃহস্পতিবার বিকেলের পর থেকেই যেন শুক্রবারের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। অফিস শেষ হতেই শহরের সব জায়গায় যে ভয়াবহ ট্র্যাফিক জ্যাম দেখা যায়, তা দেখলেই মনে হয়—হ্যাঁ, আগামীকালই শুক্রবার।
বহু মানুষই সাপ্তাহিক ছুটি কাটাতে ঢাকার বাইরে পাড়ি জমায়, আর বৃহস্পতিবার বিকেলের ভয়াবহ ট্র্যাফিক জ্যাম দেখলেই তা বোঝা যায়। সেদিন অফিসে যাওয়ার সময় তারা ছোট্ট একটি ব্যাকপ্যাক সঙ্গে করে নিয়ে যায় এবং কাজ শেষে ঢাকা ত্যাগের আগ পর্যন্ত পুরো দিনজুড়ে মাঝেমধ্যেই তারা অধীর আগ্রহ নিয়ে সেই ব্যাগটার দিকে তাকিয়ে থাকে। বৃহস্পতিবারে সবার চোখে-মুখে এক ধরনের চাপা আনন্দের রেশ দেখা যায়, যেন সপ্তাহান্তের উৎসব শুরু হয়ে গেছে আগেই।
সাপ্তাহিক ছুটিতে যারা ঢাকায় থাকেন, তারাও একই রকম উৎসাহ নিয়ে শুক্রবারের অপেক্ষা করেন। আমি অনেক ছোট বাচ্চার মুখে বলতে শুনেছি, 'শুক্রবার না আসা পর্যন্ত প্রতিটি সকালেই আমি গুনে দেখি আর কয় দিন বাকি,' যা আমার কাছে বেশ যৌক্তিকই মনে হয়েছে। আরেকজন বলেছিল, আগামীকাল শুক্রবার, এই বিষয়টা শুক্রবারের চেয়ে বেশি আনন্দ দেয়।
শুক্রবারের শুরু
সকালের শুরুটা যেন বলে দেয় আজ শুক্রবার। কারণ শুক্রবার সকালে সবকিছুই যেন একটু ধীর গতিতে শুরু হয়। সকাল সাড়ে নয়টা বা ১০টার আগে সেভাবে করে কোনো দোকান খোলে না। কাঁচাবাজারের দোকানগুলো খুব সকালে খুললেও একটু বেলা হলে ভিড় বাড়তে থাকে। চায়ের দোকানগুলো প্রতিদিন খুব ভোরে খুললেও শুক্রবার সকালে একটু দেরিতেই খোলে। শুক্রবার সকালে যেন সবাই একটু বেশি সময় ঘুমাতে চায়, যেটা সপ্তাহের অন্যান্য দিনে সম্ভব হয় না।
সকাল ১০টার দিকে বাজারে ভিড় বেড়ে যায়, তখন বোঝা যায় আজ শুক্রবার। মানুষ সারা সপ্তাহ ধরে শুক্রবারের জন্য নানা কাজ জমিয়ে রাখে। গরুর মাংসের দোকানের সামনে ভিড় এবং মাছের বাজারে ধাক্কাধাক্কি—এসবই শুক্রবারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
এরপর শুরু হয় তাড়াহুড়ো করে কাজ শেষ করে মসজিদে যাওয়ার ব্যস্ততা। জুমার নামাজ আদায় শুক্রবারের উৎসবমুখর পরিবেশকে বিশেষভাবে তুলে ধরে।
শুক্রবারের উৎসবমুখরতা
নামাজ শেষে শুক্রবার যেন একটু ঝিমিয়ে পড়ে এবং সবার ভাতঘুম শেষে আবার প্রাণোচ্ছল হয়ে ওঠে। সন্ধ্যা নামার আগ থেকে শুক্রবারের উৎসবমুখর পরিবেশ শুরু হয়। ফুটপাতের দোকানগুলোয় আলো জ্বলতে শুরু করে। খাবারের দোকানগুলো সরব হয়ে উঠতে থাকে। রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যাম বাড়তে থাকে এবং আড্ডা দেওয়ার জায়গাগুলো ধীরে ধীরে কোলাহলপূর্ণ হয়ে ওঠে।
পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে সবাই বিভিন্ন পার্ক ও বিনোদনের জায়গায় ঘুরতে যায়। অনেকে কেনাকাটা করতে যায়। অনেকে এক কাপ চা হাতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে টং দোকানে বসে আড্ডায় মেতে ওঠে।
শিহাবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি বলেন, 'আমি আফতাবনগর থেকে প্রতি শুক্রবার মিরপুরে আসি। সারা সপ্তাহের ক্লান্তি শেষে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে ও আড্ডা দেওয়ার জন্য আসি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমার বেশিরভাগ বন্ধু মিরপুরের আশেপাশে থাকে, তাই "লাভ রোডে" বসে সাপ্তাহিক আড্ডা দেওয়ার জন্য আফতাবনগর থেকে এখানে আসাটাকে আমার কাছে কষ্টকর মনে হয় না।'
শুক্রবারের দিনযাপনের কাজগুলো অন্যান্য দিনের তুলনায় প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই আলাদা আলাদা হয়। কিন্তু দিনযাপনের ধরন অনেকটা একই রকমের। কেউ হয়তো জমিয়ে রাখা কাজগুলো শেষ করে, কেউবা আড্ডা দেয় আবার কেউবা নিজের মতো করে নিজেকে সময় দেয়। সারা দেশজুড়েই শুক্রবার উৎসবমুখর আমেজ তৈরি করে। তবে ঢাকায় এই উৎসবমুখরতা যেন একটু বেশিই বোঝা যায়।
অনুবাদ করেছেন শবনম জাবীন চৌধুরী


Comments