বিয়ের পরও কি প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন?

গানে গানে যতই বলা হোক না কেন—'প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে'—বাস্তব জীবনে কিন্তু প্রেম বহুবার আসে। কখনো ভ্রমরের গুঞ্জনে, কখনো বা সরব পাখির কলতানে। একেকটি প্রেম একেক রকম সৌন্দর্য নিয়ে আসে। কখনো সে সৌন্দর্যের সঙ্গে আমরা সারাজীবন থেকে যাই, কখনো বা কিছু পথ হেঁটে একে অপর থেকে বিদায় নেওয়া হয়। মূলত সেই বিদায়ের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করবে প্রাক্তনের সঙ্গে নতুন সম্পর্কে যাওয়ার পর অথবা বিয়ের পরও কী রকম সম্পর্ক বজায় থাকবে—অথবা আদৌ কোনো সম্পর্ক রাখা ঠিক হবে কি না।
যদি আজও আপনি আপনার প্রাক্তনকে মনে করতে চান, মনে রেখে দিতে চান, তবে প্রথমেই নিজেকে প্রশ্ন করুন যে কেন সে এখনো আপনার কাছে প্রাসঙ্গিক। আপনি কি আজও তাকে মনের গোপনে ভালোবাসেন, নাকি সে একজন বন্ধু হয়ে থেকে গেছে—যার উপস্থিতি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ?
যদি প্রথম প্রশ্নের উত্তর 'হ্যাঁ' হয়, তবে নতুন সম্পর্কে যাওয়ার আগে অনেকটা ভেবে দেখা বাকি। তবে যদি নিজের কাছেই দ্বিতীয় প্রশ্নের ইতিবাচক উত্তর পেয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হলেও হতে পারে।
তবে বিয়ের পরও প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে পুরো পথই যে মসৃণ হবে, তা কিন্তু নয়।
যোগাযোগে যে সমস্যা হতে পারে
বিয়ের পর প্রতিটি মানুষের জীবনেই নতুন কিছু দায়িত্ব যোগ হয়। একইসঙ্গে পরিবর্তন আসে জীবনযাপনেও। সবমিলিয়ে যখন নতুনভাবে সবকিছু শুরুর একটা প্রবণতা থাকে, তখন অতীতকে আঁকড়ে ধরার বাড়তি ইচ্ছা বাঁধিয়ে দিতে পারে বেশকিছু ঝামেলা। আর তা যদি হয় অতীত প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রী, তবে তো কথাই নেই। নতুন সঙ্গীর জন্য এটি হতে পারে দুশ্চিন্তার বিষয়। ছোটখাটো ঈর্ষান্বিত কথোপকথন থেকে শুরু হয়ে যেতে পারে বাক-বিতণ্ডা, অতঃপর তুমুল ঝগড়াঝাঁটিও।
তবে চাইলেই এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা যায়, কিছু সাবধানতা অবলম্বন করার মাধ্যমে।
প্রাক্তন যদি বন্ধু হয়ে যায়
অনেকটা পথ হাতে হাত রেখে একসঙ্গে চলার পর অনেক প্রাক্তনের মধ্যেই তৈরি হয় বন্ধুত্বের সম্পর্ক। কখনো কখনো প্রেম বা বিয়ের থেকেও সে বন্ধুত্ব অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে যেতে পারে। এমতাবস্থায় নতুন সঙ্গীর ক্ষেত্রে ভোগান্তি না বাড়াতে কিংবা সবকিছু স্বাভাবিক রাখতে প্রথমেই যা করণীয়, তা হচ্ছে নতুন সম্পর্কের প্রথম অবস্থা থেকেই এই বন্ধুটিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। উভয় পক্ষ স্বচ্ছন্দ বোধ করলে মাঝেমধ্যে একসঙ্গে সবাই মিলে সময় কাটানোও যায়। এর ফলে ঈর্ষা বা অনিরাপত্তাবোধের মতো দুর্বল অনুভূতিগুলো জায়গা করে নিতে পারবে না। ওদিকে বন্ধুত্বও থাকবে অমলিন।
প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে, আর ব্যক্তি ও ঘটনাভেদে তা অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু যাদের মধ্যে সত্যিকার অর্থেই একটি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব রয়েছে এবং সম্পর্কচ্ছেদের বিষয়টি তিক্ত ছিল না—তাদের মধ্যে কিন্তু চাইলেই সুস্থ সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া সম্ভব।
তবে এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, এই বন্ধুত্বের ফলে যদি বর্তমান সঙ্গীর মধ্যে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, তবে সেটি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলুন। একপাশে সরিয়ে রেখে সমস্যাটিকে বাড়িয়ে তুলবেন না। সম্পর্কের শুরু থেকেই যদি এসব বিষয়ে পরিষ্কার থাকা যায়, তাহলে পরবর্তী সময়ে সংকটে পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
আর যদি কারো বর্তমান দুই সঙ্গীর মধ্যে আগে থেকেই কথা হয় যে বিয়ের পর প্রাক্তনের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ রাখা হবে না, তবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রাখতে যোগাযোগ না রাখাই ভালো। কেননা অতীত আমাদেরকে অনেক ভালো স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়, তবে থেকে যাই আমরা বর্তমানের সঙ্গেই। আর এই থেকে যাওয়া যেকোনো স্মৃতিমেদুর ভালোলাগা থেকে অনেক বেশি মূল্যবান, অনেক বেশি আবেগপূর্ণ।
সব দম্পতির মধ্যকার সম্পর্ক একরকম নয়, তাই যেকোনো বিষয়ের সমাধানও একরকম হবে না। তাই, এক্ষেত্রে যে যুগলের মধ্যে বর্তমানে ভীষণ তিক্ত সম্পর্ক বজায় আছে, তাদের ক্ষেত্রে একথাটি একেবারে সত্যি না-ও হতে পারে। তবে সবচেয় জরুরি হচ্ছে, যেকোনো অবস্থায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে রাখা, যেন কারো মনোকষ্ট বা ছলনার জন্ম না হয়।
Comments