সন্তানের বন্ধুর অভিভাবকের সঙ্গে সম্পর্ক যেমন হতে পারে
অনেকসময় দেখা যায় শিশুদের মধ্যে সম্পর্ক খুব ভালো হলেও খুব ছোটখাটো বিষয়ে প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন অভিভাবকেরা। এর ফলে যা ঘটে, তা হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের মধ্যে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মনোভাব শেখার আগেই তারা জড়িয়ে পড়ে এক নাম না জানা প্রতিযোগিতায়। কিন্তু খুব সহজেই চাইলে বড়রা এই বিষয়টিকে বদলে দিতে পারেন দারুণ কিছুতে। এর ফলে নিজেদের মধ্যেও বজায় থাকবে ভালোলাগা, শিশুরাও শিখবে ইতিবাচকতা।
দেখে নেওয়া যাক, সন্তানের বন্ধুর অভিভাবকের সঙ্গে বাবা-মা বা অন্যান্য অভিভাবকেরা কী ধরনের সম্পর্কে থাকলে সবার জন্যই বিষয়টি শুভবোধ বয়ে আনবে।
বন্ধুত্বপূর্ণ
জীবনের প্রয়োজনে জীবন স্টেশন পালটায়। সেইসঙ্গে পাল্টাতে থাকে বন্ধুত্বের ধরন আর চাহিদাও। সেই ছোট্টবেলা থেকে আমাদের বন্ধুত্বের গল্পটা লেখা হয়। বাড়ির পাশের বন্ধু, স্কুলের প্রথম দিনে একসঙ্গে বসা বন্ধু, টিফিন ভাগ করা আর পরীক্ষায় একসঙ্গে ফেল করে বাড়িতে মিথ্যে বলা—বন্ধুরা স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি আর পাড়া-মহল্লার গণ্ডি পেরিয়ে একসময় অবসরে পার্কে হাঁটার সঙ্গী। অঞ্জনের গানের মতোই, বন্ধুত্বের সত্যি কোনো পদবি হয় না।
অনেকসময় অন্যের বন্ধু আপনার বন্ধু হয়ে যায়, আবার কখনো কখনো আপনার সন্তানের বন্ধু কিংবা তাদের অভিভাবকদের সঙ্গেও এতটা সময় কাটানো হয় যে বন্ধুতালিকায় তাদের নামই আগে মাথায় আসে। তাই কারো সঙ্গে বন্ধুত্বের সুর মিলে গেলে, সে সুরে কিছুক্ষণ ভাসতে আপত্তি কী?
সহযোগিতামূলক
কর্মজীবী অভিভাবকদের ক্ষেত্রে কাজের জায়গা, অন্যান্য দায়িত্ব এবং সন্তানের পড়াশোনার দায়িত্ব ইত্যাদি বেশ আলাদা এবং বড় পরিসরের বিষয়। একটি ক্ষেত্রে যদি অভিভাবকেরা নিজেদের মধ্যে একটি সহযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে তোলেন, এতে সবারই উপকার হয়। যেমন কয়েকটি বাসা একই এলাকায় হলে এবং স্কুলবাস বা ওরকম নিয়মিত যানবাহন না থাকলে শিশুদেরকে স্কুল থেকে নিয়ে আসার দায়িত্ব একেকদিন একেকজন পালন করতে পারেন, একইভাবে স্কুলে দিয়ে আসার ক্ষেত্রেও করা যায়। এই অনলাইনের যুগে শিক্ষকের কাছ থেকে নোট রাখা, পরীক্ষা ও ক্লাসের রুটিনের দিকে খেয়াল রাখা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজের জন্য অভিভাবকেরা চাইলে একটি অনলাইন গ্রুপও খুলতে পারেন। এতে করে প্রতিদিনের যোগাযোগ সুবিধা হবে, ভাগ করে নেওয়া যাবে দায়িত্বগুলো এবং খুব সহজেই একে অন্যের ভরসার জায়গা হয়ে উঠবেন।
প্লে-ডেটে নিয়ে যাওয়া
সাপ্তাহিক ছুটির দিন বা বিশেষ কোনো দিবসে শিশুদের নিয়ে যাওয়া যায় প্লে-ডেটে। এক্ষেত্রে পার্ক, জাদুঘর বা নিজেদের বাসায়ও ছোট্ট আয়োজন করা যায়। শিশুদের পাশাপাশি অভিভাবকেরা একটু আরামদায়ক সময় কাটাতে পারবেন, দূর হবে কাজের চাপ আর মানসিক ক্লান্তি। একে অন্যের সঙ্গে মনের দ্বিধা ও সংশয়গুলো ভাগ করে নিলে রক্ষা পাওয়া যাবে 'আমার বাচ্চাই কি কম খায়?' কিংবা 'ওর পড়াশোনা ঠিকঠাক হচ্ছে তো?' ইত্যাদি প্রশ্নে জর্জরিত বিভিন্ন দুশ্চিন্তা থেকেও।
কথায় আছে, শিশুরা বড়দের কাছ থেকে শেখে। আর তাই বড়দেরও দায়িত্ব, শিশুদের সামনে বন্ধুত্ব ও ইতিবাচক সম্পর্কের এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা, যাতে তারাও তাদের জীবনে অনুপ্রেরণা নিতে পারে। ঈর্ষা, দ্বেষ, অকারণ প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠার মতো বিষয়গুলো তারা যাতে অন্তত নিজেদের অভিভাবক থেকে না পায়, এদিকে খেয়াল রাখাটা খুবই জরুরি।
কিন্তু যদি তাকে পছন্দই না হয়?
কিন্তু এরপরও থেকে যায় 'কিন্তু'। যদি আপনার সন্তানের বন্ধুদের অভিভাবককে আপনার ভালোই না লাগে? তবেও কি জোর করে বন্ধুত্ব করতে হবে কিংবা একসঙ্গে চলতে-ফিরতে হবে?
অবশ্যই না। কিন্তু সেক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে, আপনার কাউকে ভালো না লাগা যেন আপনার সন্তানের বেড়ে ওঠায় অযথা কোনো নেতিবাচকতা সৃষ্টি না করে। সেই নির্দিষ্ট অভিভাবকটিকে আপনার পছন্দ না হলেও আপনার সন্তান ও তার বন্ধুর মধ্যে থাকা সুন্দর সম্পর্কে কোনো ধরনের বৈরী আবহাওয়া না সৃষ্টি করাই ভালো। কেননা বন্ধুত্বের মতো অতি স্বাভাবিক ও সাবলীল সম্পর্ক কারো কথায় হওয়া বা ভাঙা উচিত নয়।
তবে যদি সেই বন্ধু বা তার অভিভাবককে আপনার সন্তানের জন্য ক্ষতিকর মনে হয়, সেক্ষেত্রে নিয়মমাফিক এগোনো উচিত। প্রথমে আপনার সন্তানের সঙ্গে আপনার চিন্তার কারণটি ভাগ করে নিন, প্রয়োজনে শিক্ষক বা আপনার সঙ্গীর সাহায্য নিন। তবে এই সবকিছুই অতি সাবধানতার সঙ্গে করতে হবে, কেননা শিশুদের কোমল মনে এসব ঘটনার ছাপ সারা জীবন থেকে যায়।


Comments