ফি ফি জলপ্রপাত: মেঘালয়ের অনিন্দ্য সুন্দর কন্যা

মেঘালয়ের ফি ফি জলপ্রপাত। ছবি: তানজিনা আলম

ধরুন, ঘুম ভেঙেই দেখলেন এক নির্জন দ্বীপের গাঢ় সবুজ টলটলে পানির মধ্যে আপনি। শত সহস্র বছরের পাথরের উৎসের মতোই অনিশ্চিত এই জীবনও। এর মাঝেই একটুকরা দ্বীপ পেয়ে গেলে বিরাট ভাগ্য বলতে হয়। এনিমেশন মুভির মতো চকচকে সব পরিবেশ। পানি আর পাথর। আসলেই এমন সম্ভব কিনা মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে। কিন্তু আক্ষরিকভাবে এমনটাই মনে হবে একবার ফি ফি জলপ্রপাত দেখলে।

শিলং পরিচিত প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড হিসেবে। ৪ হাজার ৯০৮ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং। শিলং শহরে উপভোগ করার জিনিস হলো এর সৌন্দর্য্য। কলোনিয়াল গঠনের রংবেরঙের ঘর বাড়ি, বাড়ির সামনে ফুলের বাগান, একটু পর পর চার্চ, পাহাড় ঘিরে আকা বাঁকা রাস্তা, পরিচ্ছন্নতা-সব মিলিয়ে শিলং মনকে মুগ্ধ করে সহজেই। মাথার ওপর ঝকঝকে নীল চাঁদোয়া আর তার নীচে পাহাড়ের গায়ে গায়ে যেন ছোট ছোট খেলনা ঘর বাড়ি সাজানো। দেখতে দেখতে সময় কোথা দিয়ে কেটে যায়, টের পাওয়া মুশকিল।

কেনাকাটার জন্য শিলং পুলিশ বাজার (শিলং সেন্ট্রাল পয়েন্ট) বিখ্যাত। তবে এখানকার দোকানপাট খোলে সকাল ১০টায়। রাত ৮টা কিংবা ৯টার মধ্যেই শুকনো খাবারের ছোট ছোট দোকানছাড়া সব বন্ধ হয়ে যায়। তবে পুলিশ বাজার যেন নির্ঘুম রাত কাটিয়ে নিজেই নিজেকে নিরন্তর পাহারা দেয়। থাকে বাহারি স্ট্রিটফুড। এখানে সকালে থাকে লুচি, আলুর দম, পরোটা-ডিম অমলেট-আর একধরনের মিষ্টি সসের এগরোল। সন্ধ্যা থেকেই সব ফুডভ্যানে শুরু হয় নানান খাদ্যের পসরা।

এই পুলিশ বাজার থেকে ভাড়া গাড়িতে ফি ফি যেতে সময় লাগে আড়াই থেকে ৩ ঘণ্টা। পথেই দেখা মিলবে বিখ্যাত লাইটলুম গিরিখাত। পুলিশ বাজার থেকে ৫০ মিনিটের মতো সময় লাগে এই লাইটলুমে আসতে। লাইটলুম গিরিখাতের চূড়া পিকনিকের জন্য প্রসিদ্ধ জায়গা। কিন্তু ভাগ্যই নির্ধারণ করে আপনি এর সৌন্দর্য্য দেখবেন নাকি মেঘের তৈরি কুয়াশার চাদরে ঢাকা পরে যাবেন। মেঘালয়ে মেঘের আনাগোনা থাকবেই। মেঘে হারিয়ে গেলেও মন্দ লাগবে না।

লাইটলুমের ঘাস জুড়ে এমন অসংখ্য বুনো ফুল

লাইটলুম। ছবি: তানজিনা আলম

মেঘে ঢাকা লাইটলুম গিরিখাত

লাইটলুম গিরিখাত। ছবি: তানজিনা আলম

লাইটলুম গিরিখাত পেরিয়ে ফি ফি জলপ্রপাত যাওয়ার সময় এমন দৃশ্যই দেখতে পাওয়া যায় প্রায় পুরোটা সময়

ছবি: তানজিনা আলম

ফি ফি যাওয়ার পথে গাড়ি এতটুকু পর্যন্ত এগিয়ে দিতে পারে। এরপর সমতল ধরে বেশ খানিকটা হাটা রাস্তা। এরপর নীচে নামার ছোট ছোট সিঁড়ি।

ছবি: তানজিনা আলম

পথের বাঁকে বাঁকে যেন রহস্যময় রঙিন দুনিয়া।

ছবি: তানজিনা আলম

মাঝে মাঝে বিচিত্র কালো প্রজাপতি সোনালি রঙের আঁকিবুঁকি পাখা নিয়ে সামনে দিয়ে উড়ে যায়। যেন ওরা দেখতে আসে নতুন কোনো আগন্তুককে। মুগ্ধ হয়ে নিজের চোখ দিয়ে দুদণ্ড দেখার আগেই আবার পালিয়ে যায় রাজকীয় পাখনা উড়িয়ে।

আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হচ্ছে ফি ফি জলপ্রপাতের সবুজ শীতল পানি

ছবি: তানজিনা আলম

নীচে জলপ্রপাতে একান্তই প্রকৃতির আর পানির গর্জনের বসে আছে দর্শনার্থীরা

ছবি: তানজিনা আলম

অনেকটা অসূর্যস্পশ্যা ফি ফি'র মেঘ না পানি বোঝা মুশকিল

ছবি: তানজিনা আলম

উঠতে গিয়ে এমন হাজারো ফুলের দেখা পাওয়া যাবে। তার মাঝে মাঝে একটা আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে এক নিখুঁত ছোট্ট প্রাণী!

ছবি: তানজিনা আলম

দীর্ঘ পথ বেয়ে ওঠার পর একটু বিশ্রাম। এখানে ক্লান্তি বলে কিছু নেই।

ছবি: সংগৃহীত

যাওয়ার সময় ওখানে গিয়ে কী কী দেখা যাবে এমন অকৃত্রিম আগ্রহ ভর করে থাকে পুরো পথ। ফেরার সময় অদেখাকে দেখার আনন্দে বিভোর থাকে মন, শীতল এবং পূর্ণ থাকে চোখ। লাকী আখন্দের গানের মতোই কেবল মনে হয়,

'আমায় ডেকো না, ফেরানো যাবে না

ফেরারি পাখিরা কুলায় ফেরে না'

Comments

The Daily Star  | English

Army seizes firearms, explosives from Banalata Express in Dhaka

Four suspects have been handed over to police for primary interrogation, ISPR says

34m ago