এই শীতে যেসব জায়গায় ঘুরতে যেতে পারেন

নৈসর্গিক বান্দরবান। ছবি: তানজিনা আলম

নেই তীব্র তাপদাহ। বর্ষায় কাদায় বারবার ভেজা জামা কাপড়ে হাঁটার তাড়া নেই। এজন্যই প্রকৃতিপ্রেমীরা ঘুরতে বেছে নেন শীতকালকে।

প্রিয় কোনো হুডি পরে পাহাড় চূড়ায় উঠে আগুন জ্বালিয়ে হাতে নেন পাহাড়ি কোনো দিদির সানন্দে বানানো গরম গরম রং চা। এত দীর্ঘ পথের ক্লান্তিতে ভাত যেন হয়ে ওঠে অমৃতসম। পাহাড়ি চালের ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত, স্বল্প মশলায় রান্না করা মিষ্টি কুমড়া বা ডাল দিয়ে ডিম ভাজি আর পাহাড়ি আলুর ভর্তা দিয়ে ২ থেকে ৩ প্লেট ভাত অনায়াসে খাওয়া যায়। তৃপ্তির ঢেকুর তুলে আকাশের তারা দেখতে দেখতে বিস্তৃত নভোমণ্ডলে তাকালে মনে হবে কোথায় সেই জীবনের অভিযোগ যা বয়ে বেড়াচ্ছিলেন এতটা পথ। শহরের কোলাহল থমকে থাকলে জীবনের কোলাহল প্রকৃতিতে অন্যরকম সুন্দর।

বলা হয়, পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হয় ভোরবেলায়। পেজা তুলোর মতো সাদা মেঘ যেন হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো খেয়ে ফেলা যায়। একটু সকাল হলেই সূর্যের সোনালী আলো যেন শরীরের ভেতর পুড়তে থাকা কয়লাকেও দ্যুতি ঝরিয়ে হীরকরূপেই সামনে আনে।

পাহাড়ি পথে হাঁটার সময় এসব দৃশ্য চোখে পড়ে। ছবি: তানজিনা আলম

শীতকালে এখানে সকালে সূর্যোদয় কুয়াশায় মোড়ানো, দুপুরের মিষ্টি রোদ আর গাছের ছায়া আর দিন শেষে পাহাড়কে রাঙিয়ে টুপ করে পেছনে লুকিয়ে যাওয়া তেজী সূর্যের মোহনীয় রূপে প্রতিটি হৃদয় বিমোহিত হবেই।

কুয়াশার চাদর ভেদ করে পাহাড়ে ভ্রমণ অন্য রোমাঞ্চের ছোঁয়া দেয়! শিশির জড়ানো লজ্জাবতী গাছ দেখে একটু থেমে সবগুলো পাতা ছুঁয়ে তাৎক্ষণিক পরিবর্তন দেখলে মনে হয় গাছ সব বুঝে বৈকি!

গ্রীষ্মে বিচ কিংবা কুয়াকাটা, সেন্টমার্টিন ভ্রমণপিপাসুদের প্রথম পছন্দ হলেও বর্ষায় সিলেটের এবং বান্দরবানের ঝরনা ঝিরি থাকে টইটম্বুর, তাই বর্ষার সময়ে ঝরনার কদর খুব বেশি থাকে। শীতকালে তাই পাহাড় বা কোনো কারণে পাহাড়ে ওঠা সম্ভব না হলে আশপাশের কোনো রিসোর্টে বসে উপভোগ করতে পারেন মেঘ আর সবুজের মিতালি।

শীতের সবচেয়ে ভালো আমেজ পেতে প্রকৃতির কাছাকাছি ঘোরার বিকল্প নেই৷ শহরে শীতের তীব্রতা ইট, কাঠ, পাথর পেরিয়ে গায়ে এসে পরার আগেই হালকা হয়ে যায়।

শীতকালে ঘুরতে যেতে পারেন নিঝুম দ্বীপ অথবা সোনাদিয়া দ্বীপে। লাল কাঁকড়ার দ্বীপে গিয়ে তাদের সঙ্গে দূর থেকে দেখা হলেও কাছে গেলেই নিমিষেই লুকিয়ে পরবে কোনো গর্তে, অতিথিকে যেন সৌন্দর্য অবগাহনে ডেকে সরে যাওয়া।

কেওক্রাডংয়ের হ্যালিপ্যাড চূড়া থেকে পাহাড়ে জমে থাকা মেঘ। ছবি: তানজিনা আলম

খাদ্য রসিক হলে রাতে বারবিকিউ করতে পারেন মাছ কিংবা মুরগির। দ্বীপের পানির একটানা বিমোহিত শব্দে একটা জোরে চিৎকারও সহজেই গিলে নেবে।

শীতকালে সুন্দরবন ও রাখতে পারেন বাকেট লিস্টে। জাহাজে বসে হুটহাট দেখা যাবে কোনো মায়াবী হরিণ। কোনো কোনো প্রাণী এমন জাহাজ দেখেই দৌড়ে গাছে লুকাবে। প্রকৃতির সঙ্গে প্রাণের অস্তিত্ব যেনো ধরা দিবে পাতালপুরীতে।

সেন্টমার্টিনেও শীতকালে পাওয়া যায় পরিষ্কার স্বচ্ছ নীল পানি। গরমের তীব্রতা না থাকায় বিচের পাশে বসে খুব নিঃশব্দ সাগর বিলাস করা যায়।

দ্ব্যর্থহীন, বিভেদহীনভাবে সামনে দাঁড়ানো প্রতিটি মানুষকে উজাড় করে ভালোবাসা এই প্রকৃতি মনে করে তার প্রতিটি সন্তানই শ্রেষ্ঠ। তাই ঘুরতে গেলে আর যাই হউক খালি হাতে ফেরার সুযোগ নেই।

খেয়াল রাখুন

*পাহাড় ভ্রমণে গেলে অবশ্যই স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

* কোনো ব্যক্তির এবং তার বাসস্থানের ছবি তুলতে হলে অনুমতি নিন।

* প্রকৃতিকে পরিষ্কার রাখুন।

Comments

The Daily Star  | English
HSBC Bangladesh's Financial Highlights

HSBC to wind down retail banking in Bangladesh

HSBC will start winding down its retail banking operations in Bangladesh in the second half of this year, with the gradual process expected to take six to eight months.

11h ago