ডায়াবেটিস রোগীর রোজা নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ

ডায়াবেটিস রোগীর রোজা
ছবি: সংগৃহীত

যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের নিয়ম মেনে খাবার খেতে হয়, ওষুধও নিতে হয়। তাই রমজান মাসে কীভাবে রোজা রাখবেন সেটি অনেক ডায়াবেটিস রোগীর কাছে চিন্তার বিষয়।

রোজা রাখা, ইফতার ও সেহেরিতে খাবার এবং ওষুধের সমন্বয় কীভাবে করবেন এই বিষয়ে জেনে নিন এএমজেড হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডের পুষ্টি, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস ও মেটাবলিক ডিজিজ কনসালটেন্ট ডা. মো. জয়নুল আবেদীন দীপুর কাছ থেকে।

ডায়াবেটিস রোগীর রোজা রাখা কি নিরাপদ?

ডা. জয়নুল আবেদীন বলেন, যেহেতু রোজা পালন করা একজন মুসলিমের জন্য ফরজ, সেহেতু ধর্মপ্রাণ মুসলিমের জীবনে রোজা রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন। তবে অনেক ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকি থাকে।

যে ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা রাখার ক্ষেত্রে ঝুঁকি আছে তারা হলেন-

১. টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগী।

২. যেসব রোগীর প্রায়ই হাইপোগ্লাইসমিয়া হওয়ার ইতিহাস আছে, বিশেষ করে রমজানের আগে ৩ মাসের মধ্যে রক্তে সুগারের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত ছিল,  তাদের রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ।

৩. ডায়াবেটিসের সঙ্গে মাঝারি থেকে বেশি খারাপ স্টেজের কিডনির সমস্যা রয়েছে যাদের।

৪. অনেক বেশি শারীরিক পরিশ্রম করতে হয় যেসব ডায়াবেটিস রোগীদের।

৫. অন্তঃত্ত্বা ডায়াবেটিস রোগী।

৬. খুব শারীরিক অসুস্থতা আছে এমন ডায়াবেটিস রোগী।

রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য ও সতর্কতা

রোজা রাখার সময় ডায়াবেটিস রোগীদের কিছু সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন ডা. জয়নুল আবেদীন। যেমন-

১. দৈনিক অন্তত ২ থেকে ৩ বার রক্তে সুগার মাপতে হবে। বিশেষ করে সেহরির আগে, রোজ থাকাকালীন দিনের বেলায় কোনো এক সময় এবং ইফতারের ২ ঘণ্টা পর।

২. যারা ইনসুলিন নেন তারা অবশ্যই সুগার মেপে দেখবেন।

৩. ইফতার থেকে সেহেরিতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। কমপক্ষে ২ থেকে ২.৫ লিটার।

৪. রোজার সময় একজন ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা হওয়া উচিত সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত।

৫. অতিরিক্ত তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।

৬. সেহেরিতে মিশ্র কার্বোহাইড্রেট যেমন- বাদামি চালের ভাত, বাদামি আটার রুটি, যব খাওয়া উচিত। সঙ্গে সবজি, ডাল এবং আমিষ হিসেবে মাছ, মুরগি খাওয়া যাবে। টক জাতীয় ফল ও টক দই খাওয়া যেতে পারে।

৭. ইফতারে ভাজাপোড়া খাবার যেমন- পেঁয়াজু, আলুর চপ ইত্যাদি না খাওয়া উচিত।

৮. চিনি ব্যবহার করে শরবত বানানোর পরিবর্তে ফলের জুস খান। তবে মিষ্টি জাতীয় খাবার বা ফল খাওয়া উচিত নয়।

৯. ছোলার সঙ্গে ডিম, সালাদ খেতে পারেন।

১০. টক জাতীয় ফল ছাড়াও অন্যান্য ফল যেমন- আপেল, কমলা, মাল্টা, পেয়ারা, আনারস, আঙুর, কলা খাওয়া যাবে।

১১. তারাবির পর বাদাম, দুধ অথবা টক দই খেতে পারেন।

রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর ওষুধ ব্যবস্থাপনা

রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর ওষুধ ও ইনসুলিন ব্যবস্থাপনা নির্ভর করে রোগীর ডায়াবেটিসের টাইপ, পরিমাণ, সঙ্গে অন্যান্য রোগের উপস্থিতি ও অবস্থার ওপর।  রোগী যদি ওপরে উল্লেখ করা খাবারের তালিকা মেনে চলেন তবে ইনসুলিন এবং ওষুধের ডোজ পরিমাণ কিছুটা কম লাগতে পারে। তবে রোগীদের উচিত রোজার আগেই ডায়াবেটিস ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে ওষুধ ও ইনসুলিনের পরিমাণ নির্ধারণ করে নেওয়া।

একজন ডায়াবেটিস রোগী রোজার সময় কিছু জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন। এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যেমন- রক্তে সুগার অনেক কমে যাওয়া বা হাইপোগ্লাইসমিয়া, রক্তে সুগার অনেক বেড়ে যাওয়া বা হাইপারগ্লাইসমিয়া, ডায়াবেটিস কিটো এসিডোসিস হতে পারে। যার ফলে রোগী অজ্ঞান হয়ে অনেক সময় মৃত্যুঝুঁকি সৃষ্টি হয়, পানিশূন্যতা দেখা দেয়। যেকোনো জটিল পরিস্থিতি এড়াতে অবশ্যই শারীরিক অবস্থা বুঝে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English
Taka vs us dollar in Bangladesh

US dollar rises against taka

The American greenback was sold for as high as Tk 122.75 today, up from a high of Tk 122.30 last week

32m ago