মাম্পস কীভাবে ছড়ায়, বড়দেরও কি হতে পারে?

মাম্পস
ছবি: সংগৃহীত

মাম্পস শিশুদের রোগ হিসেবে পরিচিত কিন্তু এটি বড়দেরও হতে পারে। মাম্পস সংক্রমণ কারো কারো ক্ষেত্রে গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

মাম্পস সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত।

মাম্পস কী

অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, মাম্পস ভাইরাসজনিত একটি রোগ, যা মাম্পস ভাইরাস দিয়ে সৃষ্ট। মানবদেহে প্যারোটিড গ্ল্যান্ড বা লালা গ্রন্থি যা দুই চোয়ালের কোণায় অর্থাৎ মুখগহ্বরের উভয় পাশে কানের সামনে থাকে। মাম্পস ভাইরাস মূলত এই লালা গ্রন্থিকে সংক্রমিত করে।

মাম্পস কীভাবে ছড়ায়

মাম্পস ছোঁয়াচে রোগ। সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস, মুখের লালা এবং হাঁচি-কাশির ড্রপলেটের মাধ্যমে মাম্পস ভাইরাস বাতাসে ছড়ায় এবং আশপাশের ব্যক্তিদের সংক্রমিত করতে পারে।

এছাড়া মাম্পস আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস যেমন- থালা, গ্লাস ও চামচ ব্যবহার করলে, আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে চুম্বনের মাধ্যমে লালায় থাকা ভাইরাস অন্য ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

সাধারণত যখন জ্বর আসে তখন এটি সংক্রামক এবং লালা গ্রন্থি ফোলার পর থেকে ৫ দিন পর্যন্ত সংক্রমিত ব্যক্তি মাম্পস ভাইরাস ছড়াতে পারে।

লক্ষণ

মাম্পস ভাইরাস সংক্রমণের ফলে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন- জ্বর হয়, শরীর ব্যথা হয়, খাবারে অরুচি দেখা দেয়, মাথা ব্যথা হয়। একইসঙ্গে প্যারোটিড গ্ল্যান্ড বা লালা গ্রন্থি ফুলে যায় এবং এখানে ব্যথা অনুভূত হয়, যা এক পাশের লালা গ্রন্থিতে হতে পারে আবার দুই পাশেই হতে পারে। সাধারণত জ্বর শুরু হওয়ার ৫ থেকে ৭ দিনের ভেতর এটি কমে যায় এবং ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হয়।

মাম্পসের জটিলতা

অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, মাম্পস আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে অনেক সময় কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে, যা অত্যন্ত গুরুতর। যেমন-

১. মানুষের শরীরে প্যানক্রিয়াস গ্ল্যান্ড বা অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি, যা পেটের ওপরের দিকে থাকে যেখান থেকে হজম নিঃসরণকারী রস তৈরি হয়। মাম্পস সংক্রমণজনিত কারণে প্যানক্রিয়াটাইটিস বা অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ হতে পারে।

২. ছেলেদের অর্কাইটিস বা অ-কোষে প্রদাহ হতে পারে। এর ফলে ভবিষ্যতে অনেকের স্থায়ীভাবে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।

৩. কারো কারো ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে সংক্রমণ হতে পারে, যেমন- মেনিনজাইটিস বা মস্তিষ্কের আবরণীতে প্রদাহ হতে পারে। আবার অ্যানকেফালাইটিস বা মস্তিষ্কে প্রদাহ হতে পারে।

৪. মেয়েদের ক্ষেত্রে ওফোরাইটিস বা ডিম্বাশয়ে প্রদাহ হতে পারে। এছাড়া মাস্টাইটিস বা স্তনের প্রদাহ হতে পারে।

চিকিৎসা

অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, মাম্পস ভাইরাসজনিত রোগ, এটি এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। বিশেষ কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না। তবে কিছু উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। মাম্পস সংক্রমিত হলে জ্বর ও শরীর ব্যথার জন্য প্যারসিটামল দেওয়া যেতে পারে রোগীকে। তরল জাতীয় ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। সংক্রমিত হলে আলাদা থাকতে হবে, বিশেষ করে বাসায় যদি কোনো ঝুঁকিপূর্ণ রোগী থাকে। সংক্রমিত অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

এছাড়া মাম্পস সংক্রমণজনিত কোনো জটিলতা দেখা দিলে রোগীকে আলাদা চিকিৎসা নিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

মাম্পস কি বড়দের হতে পারে

অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, মাম্পস ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ যা সাধারণত শিশুদের আক্রান্ত করে। তবে মাম্পস অবশ্যই বড়দেরও হতে পারে। এমএমআর ভ্যাকসিন নেয়নি, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের যে কারোরই মাম্পস হতে পারে।

মাম্পস শিশুদের বেশি হয়। কারণ শিশুরা একসঙ্গে বেশি থাকে, তাই একজন সংক্রমিত হলে তা আরেক জনে দ্রুত ছড়িয়ে যায়। বড়দের ক্ষেত্রেও একইভাবে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবে বড়রা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সংক্রমিত ব্যক্তির কাছাকাছি না থাকার কারণে বড়দের মধ্যে সংক্রমণ তুলনামূলক কম ছড়ায়।

বড় কিংবা ছোট মাম্পস সংক্রমিত হলে সবার ক্ষেত্রে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তবে পেটে ব্যথা, অ-কোষে ব্যথা, মস্তিষ্কের প্রদাহ কিংবা অগ্ন্যাশয়ে কোনো জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রতিরোধের উপায়

মাম্পস প্রতিরোধে এমএমআর ভ্যাকসিন নিতে হবে। এমএমআর ভ্যাকসিন হলো মাম্পসের সঙ্গে আরো দুইটি জীবাণু হাম ও রুবেলার বিরুদ্ধে একটি সুরক্ষা ভ্যাকসিন। এমএমআর ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে, যাতে মাম্পস সংক্রমিত না হয়। তাই সব শিশুদের দুই ডোজ এমএমআর টিকা দিতে হবে। গর্ভাবস্থায় এই ভ্যাকসিন দেওয়া নিষেধ। তবে গর্ভধারণের আগে নেওয়া যেতে পারে।

এছাড়া মাম্পস প্রতিরোধে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। আলাদা থাকতে হবে এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেমন- থালা, গ্লাস, চামচ এগুলো আলাদা রাখতে হবে।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Protesters set Nepal parliament on fire

Hundreds have breached the parliament area and torched the main building, a spokesman for the Parliament Secretariat says

1h ago