টাক মাথায় কি আসলেই চুল গজায়

চুল পড়া
ছবি: সংগৃহীত

মাথা ভর্তি সুন্দর চুল সবারই খুব পছন্দের। কিন্তু যদি এর ব্যতিক্রম হয় তাহলে তা অত্যন্ত হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

চুল পড়ে টাক দেখা দিয়েছে, এমন সমস্যায় প্রশ্ন আসে টাক মাথায় কি আসলেই চুল গজায়?

এ সম্পর্কে জানিয়েছেন লেজার চেইন স্কিন সেন্টারের কনসালটেন্ট ডার্মাটোলজিস্ট ডা. আসমা তাসনীম খান।

তিনি বলেন, 'টাক মাথায় আসলেই চুল গজাবে কি না, তা নির্ভর করে কী কারণে চুল পড়ছে তার ওপর।'

চুল পড়ার কারণ

ডা. আসমা তাসনীম খান বলেন, হেয়ার ফল, হেয়ার থিনিং বিভিন্ন কারণে হয়। যেমন:

১. অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া হলো পুরুষ বা নারীর সাধারণ চুল পড়ার হারের চেয়ে চুল কম গজানো। চুল কমে যাওয়ার সাধারণ কারণ এটি। অ্যান্ড্রোজেন হরমোন বিশেষ করে Dihydrotestosterone (DHT) বেশি হয়ে যায় তখন চুল পড়ে। এছাড়া জেনেটিক বা বংশগত কারণেও চুল পড়ে।

২. অতিরিক্ত স্ট্রেস বা মানসিক চাপের কারণে মাথার চুল পড়ে। যেমন—পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পর পরীক্ষার্থীদের অনেকের চুল পড়া বেড়ে যায়।

৩. শারীরিক স্ট্রেসের কারণেও চুল পড়ে। যেমন—কিডনিজনিত সমস্যা, লিভারের রোগ, ক্যান্সার, টাইফয়েড, ডেঙ্গু, দীর্ঘদিন ভুগতে হয় এমন রোগের কারণে শারীরিক স্ট্রেস যায়। এই স্ট্রেসের পরবর্তী ২-৩ মাস পর হেয়ার ফল হয়।

৪. পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম নারীদের একটি হরমোনজনিত সমস্যা, এর কারণেও চুল পড়ে।

৫. থাইরয়েডের কারণে নারী-পুরুষ উভয়ের হেয়ার ফল হয়।

৬. হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপিতেও চুল পড়ে।

৭. অপুষ্টি, ক্রাশ ডায়েটের ফলে চুল পড়তে পারে।

৮. অপরিচ্ছন্ন মাথার ত্বক, অতিরিক্ত খুশকি, ফাঙ্গাল সংক্রমণের কারণে চুল পড়ে।

৯. চুলে অতিরিক্ত তাপ ও রাসায়নিক ব্যবহার, যেমন—হেয়ার কালার, স্ট্রেইটেনিং, ব্লিচ, হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেইটনার ব্যবহার এবং চুল শক্ত করে বেঁধে রাখার কারণে হেয়ার ফল হয়।

ছেলেদের হেয়ার ফল প্যাটার্ন

ছেলে ও মেয়েদের চুল একই রকমভাবে পড়ে না, হেয়ার ফল প্যাটার্ন ভিন্ন হয় বলে জানান ডা. তাসনীম।

 

ছেলেদের ক্ষেত্রে সাধারণত কপালের উপরে চুল কমে যায়, হেয়ার লাইন সরতে সরতে পেছনের দিকে যেতে থাকে। কপালের দুই পাশ থেকে চুল কমতে শুরু করে। পরে মাথার মাঝখানে (crown area) পাতলা হতে থাকে। 

ছেলেদের মাথার পেছন দিকে চুল পাতলা হয় না, সামনে থেকে পাতলা হওয়া শুরু হয়ে ইউ প্যাটার্ন, এম প্যাটার্নে খালি হয়ে সামনের এবং মাঝের অংশ একত্র হয়ে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় মাথার পেছনে কিছু চুল থাকলেও সামনের অংশ টাক হয়ে যায়।

মেয়েদের হেয়ার ফল প্যাটার্ন

মেয়েদের ক্ষেত্রে সাধারণত কপালের উপরে হেয়ার লাইন খুব একটা পরিবর্তন হয় না, কপালের চুল থাকে। মেয়েদের মাথার সিঁথি বরাবর চুল পড়তে দেখা যায়। মাথার মাঝখানে অথবা একপাশে যেদিকেই সিঁথি করা হোক না কেন, চুল পাতলা হয়ে যায়। ধীরে ধীরে পুরো মাথার চুলই পাতলা হয়ে যায় এবং মাথার স্ক্যাল্প দেখা যায়।

টাক মাথায় কি চুল গজায়?

ডা. আসমা তাসনীম খান বলেন, 'ত্বকের ভেতরে থাকা চুলের গোড়া বা ফলিকল থেকে চুল তৈরি হয়। প্রতিটি চুল হেয়ার ফলিকল থেকেই বেড়ে ওঠে। হেয়ার ফলিকল যখন বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন চুল পড়ে যায়।'

'দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে হেয়ার ফল কমানো সম্ভব। আর চিকিৎসা দেরি হলে হেয়ার ফলিকল আক্রান্ত হতে থাকবে, চারপাশে রক্ত সঞ্চালন কমে যাবে। যখন রক্ত সঞ্চালন কমতে শুরু করবে তখন হেয়ার ফলিকলের চারপাশে ফাইব্রাস টিস্যু ফরমেশন হতে থাকবে এবং এটি হেয়ার ফলিকলকে ধীরে ধীরে মেরে ফেলবে,' বলেন তিনি।

যখন একটি হেয়ার ফলিকল মরে যাবে বা স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যাবে, তখন ওই হেয়ার ফলিকল থেকে আর চুল গজাবে না। জন্ম থেকেই প্রত্যেকের হেয়ার ফলিকলের সংখ্যা নির্দিষ্ট। যারা টাক হয়ে যায় তাদের হেয়ার ফলিকল স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যায়, যার কারণে পরবর্তীতে সেখানে নতুন করে চুল গজানোর কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

যদি হেয়ার ফলিকল বেঁচে থাকে তবে নতুন চুল গজাতে পারে আর যদি ফলিকল মারা যায় তবে স্বাভাবিকভাবে চুল গজায় না। সেক্ষেত্রে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট একমাত্র কার্যকর সমাধান।

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট কী?

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট হলো মাথার পিছনের বা পাশের দিকের চুল (Donor hair) কিংবা শরীরের অন্যান্য জায়গা থেকে সুস্থ হেয়ার ফলিকল তুলে এনে টাক জায়গায় প্রতিস্থাপন করা।

প্রতিস্থাপন পদ্ধতির মাধ্যমে এক জায়গায় ফলিকল নতুন জায়গায় প্রতিস্থাপন করলে স্থায়ীভাবে চুল গজায়। নতুন করে হেয়ার ফলিকল তৈরি হয় না। 

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টেশন অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ সার্জনের কাছেই করা উচিত।

ডা. আসমা তাসনীম খান বলেন, মনে রাখতে হবে শুধুমাত্র Donor hair থাকলেই ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে টাক মাথায় চুল গজানো সম্ভব। এক্ষেত্রে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট হচ্ছে সর্বশেষ স্টেজের চিকিৎসা।

এর আগে পিআরপি থেরাপি (Platelet Rich Plasma), এক্সোজোম (Exosome) থেরাপি, সাপ্লিমেন্টের অভাব থাকলে সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়, হরমোনজনিত সমস্যা থাকলে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয় চুল পড়া রোধে।

প্রতিদিন একজন মানুষের ৫০ থেকে ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক ধরে নেওয়া হয়। চুলের নিজস্ব জীবনচক্রের তিনটি ধাপ, ওই চক্র অনুযায়ী ফলিকল থেকে একদিকে পুরোনো চুল পড়ে যায় আবার অন্যদিকে নতুন চুল গজায়। কারো যদি দিনে ১০০টির বেশি চুল পড়ে তাহলে অবশ্যই সর্তক হতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

25m ago