লিফটে উঠতে ভয়? কাটাবেন যেভাবে
এলিভেটর বা লিফটে উঠতে হবে শুনলেই অনেকের হাত-পা কাঁপতে শুরু করে, তীব্র আতঙ্কে অস্থির হয়ে পড়েন।
কেন এরকম হয় এবং করণীয় কী, এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ।
লিফটে ওঠার ফোবিয়া কী
অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন বলেন, লিফটে ওঠার ভয় বা লিফট ফোবিয়া হচ্ছে ক্লস্ট্রোফোবিয়া। ক্লস্ট্রোফোবিয়া হচ্ছে বদ্ধ জায়গায় আটকে পড়ে যাওয়ার তীব্র একটি ভীতি। আটকে পড়েননি, কিন্তু আটকে পড়ে যেতে পারেন এই ভীতিটার নামই হচ্ছে ক্লস্ট্রোফোবিয়া।
শুধুমাত্র লিফটে নয়, যেকোনো ছোট বা বদ্ধ জায়গা, মাইক্রোবাসের একদম পেছনের বদ্ধ জায়গা, ছোট ঘর, জানালাবিহীন ঘর, ছোট গাড়িতে আটকে যাওয়ার ভীতিই ক্লস্ট্রোফোবিয়া। এছাড়া টানেলের ভেতর, গুহার ভেতরে, উড়োজাহাজে, এমআরআই করতে গেলে মেশিনের ভেতরে থাকার সময়ও ক্লস্ট্রোফোবিয়া হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে ভিড়ের ভেতর যেমন—বাজারে, মসজিদে, গরুর হাট, জনসভা, অনেক মানুষের ভিড় এমন জায়গায় ক্লস্ট্রোফোবিয়া হতে পারে।
বদ্ধ জায়গায় আটকে গেলে তো ক্লস্ট্রোফোবিয়া হবেই। কিন্তু আটকে যাওয়ার আগেই এই ভীতিটা হয়।
কেন হয়
অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন বলেন, লিফটে ওঠার ফোবিয়া বা ক্লস্ট্রোফোবিয়া কেন হয় তার কারণ জানা যায়নি। তবে অতীতে যদি লিফটে বা এলিভেটরে আটকে যাওয়ার মতো কোনো অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে লিফটে ওঠার ভীতি তৈরি হতে পারে।
লিফটে আটকে গেলে কি হবে কল্পনাপ্রসূত ভাবনার কারণেও হতে পারে। লিফটে আটকে পড়ে যাওয়া সংক্রান্ত কোনো বিষয় বইতে পড়া, শোনা, সিনেমা দেখার পরেও ভীতি তৈরি হতে পারে।
লিফটে ওঠার ফোবিয়া শুধুমাত্র মানসিক অভিজ্ঞতার কারণে নয়, মস্তিষ্কের ভেতরের নিউরোবায়োলজিক্যাল প্রসেসিংয়ের পরিবর্তনের কারণেও হয়।
লক্ষণ
ক্লস্ট্রোফোবিয়ায় আবদ্ধ জায়গায় আটকে যাওয়ার অযৌক্তিক এক ধরনের ভীতি হয়। আটকে গেলে, আটকে যাওয়ার আগেই বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায় ব্যক্তির মধ্যে, যেমন:
১. বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘোরা
২. হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়
৩. অতিরিক্ত ঘাম হয়, হাত-পায়ে কাঁপুনি
৪. শ্বাসকষ্ট বা দম বন্ধ হয়ে আসার অনুভূতি হয়
৫. পেটের ভেতরে অস্বস্তি তৈরি হয়
৬. অস্থিরতা দেখা দেয়
৭. প্যানিক হওয়া, যেমন: আতঙ্কিত হয়ে লিফট বা বদ্ধ জায়গা থেকে দ্রুত বের হয়ে যেতে চাওয়া, চিৎকার করা, দরজায় বাড়ি দিতে থাকা, দরজা খোলার চেষ্টা করা, নিজে কথা না বলা অন্যদেরও কথা বলতে না দেওয়া।
৮. নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো, মারা যাচ্ছি এমন অনুভূতি হওয়া
৯. আগে থেকেই বদ্ধ জায়গা এড়িয়ে চলা
লক্ষণ সবার ক্ষেত্রে একই রকম থাকে, তবে লক্ষণের মাত্রা একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়। কেউ লিফটে উঠে ভীত হয়ে হয়তো চুপ করে থাকে, কেউ বড় বড় শ্বাস নেয়, কেউ চিৎকার করে, কেউ বিরক্তি প্রকাশ করে, অস্বাভাবিক আচরণ করে, লিফটে এড়িয়ে হেঁটেই উঠতে চায়। অর্থাৎ একেকজনের প্রতিক্রিয়া একেক রকম হয়।
করণীয়
অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন বলেন, লিফটে ওঠার ফোবিয়া মোকাবিলায় একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। লিফটে ওঠার ফোবিয়া বা ক্লস্ট্রোফোবিয়ায় সাধারণত ওষুধের ভূমিকা কম। লিফটে ওঠার ফোবিয়া আছে এমন ব্যক্তিদের কগনেটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি দেওয়া হয়। তাকে বিষয়গুলো চর্চার মধ্য দিয়ে কাউন্সিলিং করে বোঝাতে হবে এটাতে ভয়ের কিছু নেই। লিফটে আটকে গেলেও সেখান থেকে রক্ষা করার ব্যক্তি আছেন, বের হওয়ার উপায় আছে, ভেতরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের সুযোগ আছে। নেতিবাচক চিন্তা পরিবর্তন করে ধীরে ধীরে ভয় কমাতে এই থেরাপি দিতে হবে।
এছাড়া এক্সপোজার থেরাপি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে লিফটের ভেতর ঢুকিয়ে কিছুসময় রাখতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে লিফটের ভেতরে তার অবস্থানের সময় বাড়াতে হবে। এভাবে এক্সপোজ হতে হতে একসময় লিফটে ওঠার ভয় বা ফোবিয়া কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
খুব বেশি সমস্যা হলে অল্প সময়ের জন্য অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ওষুধ দেওয়া হয়।
যারা খুব বেশি ভয় পান তারা প্রয়োজনে সুযোগ থাকলে লিফটে ওঠা বা বদ্ধ জায়গা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলবেন।


Comments