প্রয়োজন-উদ্দেশ্য ছাড়াই চুরি করার রোগ ‘ক্লেপটোম্যানিয়া’ সম্পর্কে জানেন?

প্রয়োজন-উদ্দেশ্য ছাড়াই চুরি করার রোগ ‘ক্লেপটোম্যানিয়া’ সম্পর্কে জানেন?
ছবি: সংগৃহীত

প্রয়োজন নেই, নেই কোনো উদ্দেশ্য, তবুও চুরি করছেন। চুরি করার পর তৃপ্তি অনুভব করার পাশাপাশি অপরাধবোধেও ভুগছেন। কিন্তু পুনরায় একই কাজের পুনরাবৃত্তি, অর্থাৎ আবারও চুরি করছেন। এই সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা ক্লেপটোম্যানিয়ায় আক্রান্ত।

এই রোগ সম্পর্কে জেনে নিন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদের কাছ থেকে।

ক্লেপটোম্যানিয়া কী

অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন বলেন, ক্লেপটোম্যানিয়া হচ্ছে একটি মানসিক রোগ বা ইম্পালস কন্ট্রোল ডিজঅর্ডার। ইম্পালস কন্ট্রোল ডিজঅর্ডার হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে চুরি করার ইম্পালস বা তাড়না আসে এবং তিনি চেষ্টা করেন সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে, কিন্তু অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না।

মূলত আক্রান্ত ব্যক্তির ভেতর থেকে চুরি করার প্রবল আগ্রহ বা ইচ্ছা আসে। সেটি দমন করতে পারেন না বলেই চুরি করেন। সাধারণ যে জিনিসগুলো চুরি করা হয়, সেগুলো তার কোনো কাজেও লাগে না। চুরি করা জিনিস কারো কাছে বিক্রি করেন না, নিজে ব্যবহারও করেন না—হয়তো ফেলে দেন, লুকিয়ে রাখেন, দান করে দেন অথবা কোথাও জমিয়ে রাখেন। কখনো কখনো চুরি করে আনা জিনিসপত্র গোপনে ফেরতও দিয়ে আসেন।

কেন হয়

অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন বলেন, ক্লেপটোম্যানিয়া হওয়ার পেছনে বহুবিধ কারণ থাকতে পারে। যেমন: মস্তিষ্কের সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্য যখন নষ্ট হয়, তখন ক্লেপটোম্যানিয়া হতে পারে। এ ছাড়া জেনেটিক ভালনারেবিলিটি বা প্রেডিসপজিশন অর্থাৎ জিনগত দুর্বলতা ক্লেপটোম্যানিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রভাব, ট্রমা, মানসিক চাপ, শৈশবের কোনো মানসিক আঘাত, উদ্বেগের কারণে হতে পারে।

যেকোনো বয়সেই ক্লেপটোম্যানিয়া হতে পারে। পুরুষদের ক্লেপটোম্যানিয়া হওয়ার ঝুঁকি নারীদের তুলনায় বেশি।

লক্ষণ

১. ক্লেপটোম্যানিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো প্রয়োজন ছাড়া, আর্থিক লাভ ছাড়াই কোনো প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিস চুরি করে নিয়ে আসেন। চুরি করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা, প্রবল তাগিদ অনুভব করেন এবং সেই অদম্য ইচ্ছে বা তাগিদ দমন করতে না পেরেই চুরি করেন। বারবার চুরি করার ইচ্ছেটা ফিরে আসে।

২. চুরি করার আগে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের ভেতর প্রবল উত্তেজনা, উদ্বেগ অনুভব করে, জিনিসটি না নেওয়া পর্যন্ত উদ্বিগ্ন থাকে।

৩. চুরি করার পর এক ধরনের তৃপ্তির অনুভূতি হয়, আনন্দ পায়, স্বস্তিবোধ করে, উদ্বেগমুক্ত হয়।

৪. ব্যক্তিগত প্রয়োজন, আর্থিক লাভ ছাড়া স্বাভাবিকভাবে কেউ চুরি করে না। কিন্তু ক্লেপটোম্যানিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি আর্থিক লাভ বা প্রয়োজন ছাড়াই চুরি করে। চুরি করার পেছনে কোনো উদ্দেশ্য থাকে না, মানসিক তৃপ্তির জন্যই চুরি করে।

৫. চুরি করার পর অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তি অপরাধবোধ, অনুশোচনা অনুভব করেন, নিজেকে দোষারোপ করেন। ক্লেপটোম্যানিয়া রোগীদের মধ্যে অনেক সময় আত্মহত্যার প্রবণতাও তৈরি হতে পারে চুরি করার অনুশোচনা থেকে।

৬. আক্রান্ত ব্যক্তি ভয় পেতে পারে এই ভেবে যে, চুরির বিষয় ধরা পড়লে সম্মানহানি হবে। সেকারণে চুরি করা জিনিস ফেলে দেয়, লুকিয়ে রাখে। কখনো কখনো উদ্বেগ না কমার কারণে সে আবারও চুরি করে।

চিকিৎসা

মানহানির কারণে, লজ্জা বা সম্মানহানি হবে এমন মনোভাবের কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। অথচ চিকিৎসার মাধ্যমে ক্লেপটোম্যানিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এক্ষেত্রে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসা হিসেবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ওষুধ দেওয়া হয়। নিয়মিত ওষুধ সেবনের পাশাপাশি কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি ও কাউন্সিলিং করতে হবে। ক্লেপটোম্যানিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নয়তো চুরির কারণে বড় ধরনের কোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s body taken to Parliament Complex ahead of janaza

Janaza will be held at Manik Mia Avenue at 2pm

2h ago