শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা ও গোতাবায়ার বিরুদ্ধে কানাডার বিধিনিষেধ

কানাডা শ্রীলংকার ৪ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যাদের মধ্যে আছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা ও গোতাবায়া রাজাপাকসে। ফাইল ছবি: রয়টার্স
কানাডা শ্রীলংকার ৪ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যাদের মধ্যে আছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা ও গোতাবায়া রাজাপাকসে। ফাইল ছবি: রয়টার্স

কানাডা শ্রীলঙ্কার ৪ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যাদের মধ্যে আছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা ও গোতাবায়া রাজাপাকসে।

কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার ১৯৮৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত চলা সশস্ত্র গৃহযুদ্ধের সময় 'মানবাধিকারের গুরুতর ও নিয়মতান্ত্রিক লঙ্ঘনের' কারণে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গত মঙ্গলবার কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, শ্রীলঙ্কার সরকার মানবাধিকার রক্ষার জন্য 'খুবই সীমিত আকারে অর্থবহ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ উদ্যোগ' নিয়েছে।

সরকারি বাহিনী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলাম (এলটিটিই) এর মধ্যে সংঘটিত ২৬ বছরের যুদ্ধে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যান। উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আসে, বিশেষ যুদ্ধের শেষ কয়েক মাসে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা ও তার ভাই গোতাবায়া (প্রতিরক্ষা সচিব) সামরিক বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন।

বিধিনিষেধের তালিকায় ২ সামরিক কর্মকর্তাও আছেন। স্টাফ সার্জেন্ট সুনিল রত্নায়েকে ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার চন্দনা প্রসাদ হেত্তিয়ারাচ্চিকে এর আগে গুরুতর অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র বিধিনিষেধের আওতায় আনে। ২০১৫ সালে সুনিলকে ৮ বেসামরিক ব্যক্তি হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও তাকে ২০২০ সালে গোতাবায়া ক্ষমা করে দেন। চন্দনা প্রসাদের বিরুদ্ধে রয়েছে কলম্বোর ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ। এ অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়। এছাড়াও, জাফনার সাবেক সংসদ সদস্য এন রবিরাজের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও তার জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে উল্লেখ করে, জবাবদিহিতার অভাব এই গৃহযুদ্ধের ভুক্তভোগীদের শান্তি ও সমঝোতা খুঁজে পাওয়ার প্রক্রিয়ার অবমাননা করছে। এই বিধিনিষেধ 'একটি পরিষ্কার বার্তা যে, শ্রীলঙ্কায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দায়মুক্তি কানাডা মেনে নেবে না।'

বিধিনিষেধের প্রতিক্রিয়ায় শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার কানাডার প্রতিনিধি ড্যানিয়েল বুডকে ডেকে পাঠায়।

শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি সাবরি '৪ ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই একপাক্ষিক বিধিনিষেধের ঘোষণায় সরকারের পক্ষ থেকে গভীর দুঃখ' প্রকাশ করেন এবং জানান, 'ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে' এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গত অক্টোবরে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কাউন্সিল শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ইশতেহার নবায়ন করেছে। শ্রীলঙ্কা এই উদ্যোগের প্রতিবাদ জানায়।

১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়ার পর সবচেয়ে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে শ্রীলঙ্কা। মূল্যস্ফীতি, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও জ্বালানি সংকটে ২০২২ এর পুরো সময় জুড়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছে দেশটির জনগণ।

খাদ্য ও ওষুধের উচ্চ মুল্য ও স্বল্পতার বিরুদ্ধে কয়েক মাসের বিক্ষোভে জুলাই মাসে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। মাহিন্দা রাজাপাকসে মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। মূলত রাজাপাকসে ভাইদের ভুল নীতিমালা ও অব্যবস্থাপনার জন্যই শ্রীলঙ্কায় সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মত দেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Complete reforms in 2yrs after polls

Parties urged in draft July Charter; opinions sought

5h ago