ঘর থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বের হতে পারলেও ভেতরে সব পুড়ে ছাই

মহাখালীর সাততলা বস্তিতে আজ বুধবার দুপুরে আগুন লাগে। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

মহাখালীর সাততলা বস্তিতে যখন আগুন লাগে দুর্ঘটনায় পা হারানো রিনা (২৫) তখন ছিলেন ঘরের ভেতরে। বস্তির ভেতরে সংকীর্ণ একটি ঘরের দোতলায় ছিলেন তিনি।

আগুনে বস্তির ভেতরে চিৎকার-শোরগোল শুরু হলে কোনোরকম হামাগুড়ি দিয়ে দোতলা থেকে নেমে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে সক্ষম হন রিনা।

তার মা জাহান বেগম (৫০) গৃহকর্মী হিসেবে মহাখালী এলাকার কয়েকটি বাসায় কাজ করেন। বস্তিতে আগুনের খবর শুনে ছুটে এসে প্রথমেই মেয়ে রিনার খবর নেন।

এর মধ্যেই দেখতে পান যে, তার ঘরসহ বস্তির অন্তত ৫০টি ঘর পুড়ে গেছে আগুনে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর নিজের ঘরের কাছেই গিয়ে দেখেন, গত মাসে কেনা টিভি-ফ্রিজসহ সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

আজ বুধবার দুপুর ২টা ৩৬ মিনিটে মহাখালীর সংক্রামক হাসপাতাল সংলগ্ন সাততলা বস্তিতে এ আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৫ ইউনিটের চেষ্টায় বিকেল ৩টা ১৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে, আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ হয় ৪টা ৩৫ মিনিটে।

দ্য ডেইলি স্টার প্রতিবেদক বিকেল ৪টার দিকে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, বস্তির ৫০টির বেশি ঘর পুড়ে গেছে। নিঃস্ব পরিবারগুলো সব হারিয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছেন।

জাহান বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি, তার স্বামী, ছেলে, ছেলের স্ত্রী, মেয়ে রিনাসহ ৬ সদস্য গত ২ বছর ধরে সাততলা বস্তিতে বসবাস করেন। 

'গত মাসেই জমানো টাকা দিয়ে টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলাম। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়েটাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। মেয়েটার কিছু হয়নি, এটাই বড় পাওয়া। আগুন লাগার পর হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়ে আসতে পেরেছে,' বলেন তিনি। 

জাহান জানান, বস্তিতে আলী হোসেনের বাড়ির একজন ভাড়াটিয়া তারা। আলী হোসেনের এমন ৭২টি ঘর আছে, যেখানে ৭২টি পরিবার বসবাস করে।

এছাড়া, পারভীন এবং আরও একজন মালিকের ঘরগুলোতে ভাড়া থাকেন বস্তিবাসী।

আগুন লাগার সময় পারভীনের বাড়ির ভাড়াটিয়া রানী খাতুন ও তার মা মাহমুদা খাতুন ছিলেন তাদের কর্মস্থল একটি গার্মেন্টস কারখানায়। আগুনের খবর পেয়ে বস্তিতে এসে দেখেন, মালামাল সব পুড়ে গেছে

রানী খাতুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বস্তির আমারসহ অন্তত ৫০ ঘর পুড়ে গেছে। সব হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। দুপুরে সবাই ছিলেন কাজে। শিশু ও বৃদ্ধ ছাড়া কেউ ছিল না বস্তিতে।'

'উদ্ধারকারী শিশু-বৃদ্ধদের উদ্ধার করতেই ব্যস্ত ছিলেন। এ কারণে ঘরের মালামাল পুড়ে গেছে,' বলেন তিনি।

তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানা সম্ভব হয়নি।

যোগাযোগ করা হলে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার মোহাম্মদ আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগুন লাগার পর প্রথমেই স্থানীয়রা পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। আগুন দুপুর আড়াইটার দিকে লাগে। রাস্তায় জ্যাম থাকায় ৩টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।' 

'বস্তির ভেতরে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারেনি। পরে ৩টা ১৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নির্বাপন হয় আরও প্রায় এক ঘণ্টা পর সাড়ে ৪টার দিকে,' বলেন তিনি।

সন্ধ্যা ৬টার দিকে তেজগাঁও ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার নাজিমউদ্দিন সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি যে রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে এ আগুনের সূত্রপাত। আগুনে প্রায় ৭০টি ঘর পুড়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।' 

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

5h ago