জিকে প্রকল্পের ৩ পাম্পই নষ্ট

বোরো আবাদে একরে খরচ বাড়ছে ২০ হাজার টাকা

জিকে প্রকল্প
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কুষ্টিয়া অঞ্চলের কৃষক। ছবি: আনিস মণ্ডল/ স্টার

চলতি বোরো মৌসুমে এখনো পর্যন্ত একফোঁটাও পানি পাননি দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষের (জিকে) আওতাধীন কৃষকরা। সেচে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারে প্রতি একরে ২০ হাজার টাকা খরচ বাড়ছে কৃষকদের। অনাবাদি থাকছে বহু জমি। কৃষক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

জিকের কার্যক্রম কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরার ১৩ উপজেলায় বিস্তৃত। প্রকল্পের প্রধান তিনটি খাল, ৪৯টি শাখা খাল ও ৪৪৪টি উপশাখা খাল আছে। পদ্মা থেকে খালগুলোতে পানি সরবরাহে ব্যবহৃত প্রকল্পের তিনটি মেশিনই বন্ধ থাকায় এবার এখনো সেচ কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয়নি।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রধান পাম্পহাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে খালে পানি সরবরাহের তিনটি পাম্পই নষ্ট। পাম্প মেরামত ও পদ্মায় পানি থাকা সাপেক্ষে পানি ছাড়া যাবে। কিন্তু সেটা কবে নাগাদ সম্ভব তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।'

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঞা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিনটা পাম্পের একটা পাম্প মেরামতের জন্য খোলা হয়েছিল। সেটার কিছু পার্টস আনা হচ্ছে বিদেশ থেকে। একটা পাম্প পুরোপুরিই নষ্ট। আরেকটা পাম্প মোটামুটি ঠিক আছে। কিন্তু পদ্মায় পানির স্তর যে অবস্থায় আছে, তাতে মেশিন চালু করলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পানির স্তর নিচে থাকায় পাম্পটি চালালে পুড়ে যেতে পারে।'

তাহলে চলতি মৌসুমে কৃষকরা আদৌও জিকের পানি পাচ্ছেন না?—জবাবে আমিরুল হক ভূঞা বলেন, 'আপাতত সেটাই মনে হচ্ছে।'

জিকে প্রকল্প
পানির অভাবে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ফেটে চৌচির হয়ে আছে। ছবি: আনিস মণ্ডল/ স্টার

জিকের কার্যক্রম অচল হওয়ায় কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর, চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গার কৃষকরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জিকে যদি জিরো হয়ে যায়, তাহলে ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে শতভাগ চাষাবাদ সম্ভব হবে না। কৃষকের খরচ অনেক বাড়বে। চাপ পড়বে ধানচালের বাজারেও।'

'জিকের খালে পানি না থাকলে প্রকল্পের আওতাধীন চার জেলার জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়বে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এই এলাকার জীববৈচিত্র্যের ওপরও জিকের বড় প্রভাব আছে। খালে পানি থাকলে সবুজায়ন হয়। তাপমাত্রা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এবার তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাবে।'

প্রকল্পের কৃষকদের প্রতি একরে সেচ বাবদ পরিশোধ করতে হতো ৬০০ টাকা। পানি না পাওয়ায় এবার সেচ বাবদ একরে প্রায় ২০ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে কৃষকদের।

কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের ওমর আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত একরে কমপক্ষে ১২০ লিটার তেল লাগবে। মেশিনের মালিককে দিতে হয় ছয় মণ ধান। এর দাম কম হলেও আট হাজার টাকা। এতে প্রতি একরে অন্তত ২০ হাজার টাকা খরচ হবে।'

একই খরচের কথা জানিয়েছেন কৃষক আব্দুর রশিদ, আক্কাস আলী ও মোহাম্মদ আলী। তাদের ভাষ্য, খরচ এর চেয়েও বেশি হতে পারে।

জিকে প্রকল্প
জিকে প্রকল্পের কৃষকদের প্রতি একরে সেচ বাবদ দিতে হতো ৬০০ টাকা। পানি না পাওয়ায় এবার বিকল্প ব্যবস্থায় সেচের কারণে বাড়তি খরচ হচ্ছে। ছবি: আনিস মণ্ডল/ স্টার

জিকের পানি না পাওয়ায় মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে এসেও বহু জমি অনাবাদি পড়ে আছে। সরেজমিনে দেখা গেছে—কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা, শিমুলিয়া, বটতৈল, বৃত্তিপাড়া ও স্বর্গপুরে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ফেটে চৌচির হয়ে আছে। এসব জমি নিয়মিত খালের পানি পাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানি তোলার ব্যবস্থা নেই।

বৃত্তিপাড়ার কৃষক মোহাম্মদ আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবার ১২ আনা জমিই অনাবাদি থাকছে। জিকের পানি না পেলে বোরো আবাদ সম্ভব না। সবজায়গায় ভূগর্ভস্থ পানি তোলার ব্যবস্থা নেই।'

বটতৈল গ্রামের কৃষক ফারুক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে যে পরিমাণ পানি তুলতে পাঁচ লিটার তেল দরকার হতো, এখন দরকার হচ্ছে সাত লিটার। পানির স্তর নিচে নেমে গেলে পানিই পাব না। ইতোমধ্যেই মাঠের অনেক জায়গায় মাটি খুঁড়েও পানি পাওয়া যাচ্ছে না।'

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জিকে যেহেতু এখনো খালে পানি দিতে পারেনি এবং শুষ্ক মৌসুম চলছে, তাই পানির স্তর নিচে নেমে যেতে পারে। খালে পানি থাকলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও কিছুটা উপরে থাকে। কৃষকের পানি পেতে সুবিধা হয়।'

Comments

The Daily Star  | English

Nepal PM Oli quits as anti-corruption protests spiral, his aide says

The Himalayan country has struggled with political instability and economic uncertainty since protests led to the abolition of its monarchy in 2008.

22m ago