চায়ের ভুবনে ফিরছে কফির পুরোনো স্বাদ

কফি গাছ। ফাইল ফটো

দীর্ঘ সময় পর চায়ের ভুবন মৌলভীবাজারে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসছে কফি। সরকারি উদ্যোগ ও কৃষকদের বাড়তি আগ্রহে আবারও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই কফি চাষ।

ব্রিটিশ আমলে চা চাষের পাশাপাশি কফি উৎপাদনেও এগিয়ে ছিল এই পাহাড়ি জেলা। পরে চায়ের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণে কফি চাষ হারিয়ে গেলেও, এবার নতুন করে ফিরে আসছে সেই হারানো সম্ভাবনা।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কফি চাষের প্রসারে ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে অ্যারাবিকা ও রোবাস্তা জাতের চারা বিতরণ করা হচ্ছে, পাশাপাশি চলছে কারিগরি প্রশিক্ষণ।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক নীলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, জেলায় কফি চাষের পরিধি ক্রমেই বাড়ছে। অনেকে পতিত জমি কিংবা মিশ্র ফলের বাগানে কফি চাষ করছেন। ইতোমধ্যে এ খাতে আরও সম্প্রসারণের জন্য আমরা উচ্চপর্যায়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি।

বর্তমানে জেলার আকবরপুর, শ্রীমঙ্গল, রাজনগর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কফি চাষ ছড়িয়ে পড়ছে। কৃষকরা জানান, ফলন সন্তোষজনক এবং লাভজনকও।

আকবরপুরের কৃষক আব্দুল মান্নান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি প্রায় ১,৮০০ কফি গাছ চাষ করছি। ইতোমধ্যে কফি বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় করেছি।'

শ্রীমঙ্গলের ডলুছড়া গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা আতর আলী বলেন, 'তিন বছর আগে ৩০০ কফি গাছ রোপণ করি। সেই ফসল থেকেই ২৫ হাজার টাকা আয় হয়েছে।'

এমনকি কিছু চা বাগানও এখন কফি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। রাজনগরের উত্তরবাগ চা বাগানের সিনিয়র ম্যানেজার মো. লোকমান চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের চা বাগানে ইতোমধ্যে ৩ হাজার কফি চারা রোপণ করা হয়েছে। আমরা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতা পাচ্ছি।'

সরকারি সহায়তা, অনুকূল আবহাওয়া এবং কৃষকদের আগ্রহ—সব মিলিয়ে মৌলভীবাজার এখন শুধু চায়ের জন্যই নয়, বরং কফির সম্ভাব্য নতুন জনপদ হিসেবে আত্মপ্রকাশের পথে।

কৃষিবিদ সুকল্প দাস বলেন, 'কফি চাষ মৌলভীবাজারে নতুন কিছু নয়। ব্রিটিশ শাসনামলে ফিনলে কোম্পানি জেলার জগছড়া ও সোনাছড়া চা বাগানে কফির বাগান ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র পরিচালনা করত। তবে ১৯৮০'র দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে চায়ের বাড়তি চাহিদার কারণে কফি চাষ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়।'

তিনি আরও বলেন, 'এ অঞ্চলের জলবায়ু ও ভূ-প্রকৃতি কফি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। যদি সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় চাষ করা যায়, তাহলে মৌলভীবাজার আগামী কয়েক বছরে দেশের অন্যতম শীর্ষ কফি উৎপাদনকারী অঞ্চলে পরিণত হতে পারে।'

অতিরিক্ত উপপরিচালক মোনালিসা সুইটি বলেন, 'অর্থনৈতিক দিক ছাড়াও কফির রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। প্রতি ১২৫ মিলি কফিতে ক্যালরি কম থাকলেও এতে রয়েছে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। কফি চাষ এই অঞ্চলের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তাতেও ভূমিকা রাখতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

Victory day today: A nation born out of blood and grit

The tide of war had turned by mid-December in 1971. The promise of freedom was no longer a dream. It had hardened into tangible certainty.

7h ago