দখলে হারিয়ে যাচ্ছে ‘স্কুল মাঠ’

মাঠের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্ত ইতোমধ্যেই দখল হয়ে গেছে। ছবি: স্টার

বিশাল মাঠ—শিশুরা খেলছে, ক্রীয়াপ্রেমীরা নানা সময়ে টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে, প্রাকটিস চলছে। একসময় এমনই ছিল মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠটি।

কিন্তু, স্থানীয় প্রভাবশালীদের ক্রমাগত দখলে ধীরে ধীরে ছোট হয়ে যাচ্ছে এই খেলার মাঠ।

দীর্ঘদিন ধরে এটাই ছিল এই এলাকার মানুষের বিনোদনে একমাত্র উন্মুক্ত স্থান। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে মাঠের কিছু অংশ অবৈধভাবে দখল করে বসতবাড়ি বানিয়েছে স্থানীয় কিছু মানুষ।

মাঠটি তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয় ও তেলিবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হলেও রেকর্ড অনুসারে এটি সরকারি খাস জমি।

স্থানীয় কয়েকজন এখানে বাড়ি তৈরি করেছে এবং বেড়া দিয়েও অনেক জায়গা ঘিরে রেখেছেন।

তেলিবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফুর রহমান বলেন, 'আমি বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কেউই দায়িত্ব নিতে চায় না। এটা এই এলাকার একমাত্র মাঠ। তাও হারিয়ে যাচ্ছে।'

সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্ত ইতোমধ্যেই দখল হয়ে গেছে। টিনের ছাদের কয়েকটি ঘর সেখানে দাঁড়িয়ে। অথচ, একসময় শিশুরা এখানে খেলত। এখন বেড়া দেওয়ায় খেলার জায়গা সংকীর্ণ হয়ে গেছে। এমনকি মাঠের ওই অংশে চলাচলেও বাধা দেওয়া হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাঠের মধ্যে অনেক স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আসাদ মিয়া বলেন, 'শিশুরা এখনও প্রতিদিন বিকেলে এখানে খেলতে আসে। কিন্তু মাঠ ছোট হয়ে যাওয়ায় আগের মতো প্রাণ খুরে খেলতে পারে না, তাদের খেলাধুলা ব্যাহত হয়।'

তিনি বলেন, 'এখন জায়গা কম। মাঝে মাঝে বল কারও বাড়ির উঠোনে চলে গেলে তারা রাগারাগি করতে থাকে। আমরা শিশুদের খেলার এই জায়গা ফিরত চাই।'

বাসিন্দারা জমি দখলের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করেছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন আব্দুল খালেক, আবদু মিয়া, জমির আলী, আমির আলী, জুনাব আলী, মজিদ মিয়া ও মাসুদ মিয়া।

আব্দুল খালেক ও আবদু মিয়া দ্য ডেইলি স্টারের কাছে দাবি করেন, তারা তাদের নিজস্ব জমিতে বাড়ি তৈরি করেছেন।

তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইদুল ইসলাম বলেন, 'মাঠের জমি আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি সম্পত্তি হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ। যদিও এটি দীর্ঘদিন ধরে স্কুল মাঠ নামে পরিচিত। আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি যে মাঠের অনেক অংশ দখল করা হয়েছে।'

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আনিসুল ইসলাম বলেন, 'আমি মাঠটি পরিদর্শন করেছি। মাঠের কিছু জমি ইতোমধ্যেই দখলে আছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।'

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, 'প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ নামে পরিচিত মাঠটি খাস জমি। কিন্তু, আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখব এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেব।'

কুলাউড়া সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইদুল হাসান শিপন বলেন,  'প্রশাসনকে অবিলম্বে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে মাঠটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক চাপ মেনে নেওয়া যাবে না।'

তিনি বলেন, 'উচ্ছেদের পর মাঠটি স্থায়ী সীমানা দিয়ে ঘিরে দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ দখল করার সুযোগ না পায়। আর কেউ যেন দখলের সাহস না পায় সেজন্য নিয়মিত নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
charges against Sheikh Hasina at ICT

ICT case against Hasina: Verdict date could be set tomorrow

State-appointed defence counsel for the absconding accused concluded arguments today

13m ago