এস আলমের ২ প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি: এনবিআরের আদেশের বৈধতা প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল

স্টার ফাইল ফটো

এস আলম গ্রুপের এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড ও এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের অপরিশোধিত ভ্যাটের বিষয়ে এনবিআরের দাবির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট।

তিন বছরে ভ্যাট ফাঁকি এবং এর জরিমানাসহ এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড ও এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের কাছে সরকারের প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার বেশি পাওনা বলে এনবিআর জানিয়েছে।

চলতি বছরের ৯ জুন চট্টগ্রামের কাস্টমস, ভ্যাট ও আবগারি কমিশনারেট এক আদেশে ওই দুই প্রতিষ্ঠানকে ৩ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা অপরিশোধিত ভ্যাট এবং ৩ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা জরিমানা প্রযোজ্য সুদসহ ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে বলে।

এই ভ্যাট দাবি ও জরিমানার বিষয়ে এনবিআরের দাবি চ্যালেঞ্জ করে এস আলম গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠানের দুটি পৃথক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার দুটি রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

রুলে প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে ব্যক্তিগত শুনানি ছাড়াই চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের দেওয়া ৯ জুনের ওই আদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, আগামী ১০ দিনের মধ্যে তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট।

আরেকটি রুলে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট কেন মূল্য সংযোজন কর এবং সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ এর ৮৫ ও ৭৩ ধারা অনুযায়ী চলমান বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হলো না, তার কারণ জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুলের শুনানির জন্য আগামী ১৫ জুলাই তারিখ নির্ধারণ করেছেন।

রিটের শুনানির সময় এস আলম গ্রুপের আইনজীবী আহসানুল করিম হাইকোর্ট বেঞ্চকে বলেন, তার মক্কেল চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের আদেশে গুরুতরভাবে পক্ষপাতের শিকার হয়েছেন, কারণ ৯ জুন ওই আদেশ দেওয়ার আগে তাদের ব্যক্তিগত শুনানির সুযোগ দেওয়া হয়নি। তারা ৪ জুন আবেদন করে ব্যক্তিগত শুনানিতে উপস্থিত থাকতে চেয়েছিলেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ এমআর চৌধুরী রিট আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড এবং এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডকে গত এক বছরে বারবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে কাস্টমস কমিশনারের কাছে তাদের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য। কিন্তু তারা তা করেননি।

সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী তাদের সীমাহীন সময় দেওয়া যাবে না বলেও জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।

শুনানির এক পর্যায়ে আরেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস হাইকোর্ট বেঞ্চকে বলেন, পিটিশনকারীদের প্রকৃত উদ্দেশ্য ভ্যাট পরিশোধ করা নয়।

তখন আবেদনকারীদের আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, তার মক্কেলরা কখনো বলেননি যে তারা ভ্যাট দেবেন না।

পরে হাইকোর্ট বলেন, অপরিশোধিত থাকলে কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই ভ্যাট দিতে হবে।

এনবিআরের ভ্যাট শাখার একটি অডিট প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভ্যাট রিটার্নে কম ক্রয়-বিক্রয় দেখানোসহ বিভিন্ন উপায়ে ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে কোম্পানি দুটি ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

অডিট প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে কোম্পানি দুটি তিন হাজার ৫৩৮ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট 'ফাঁকি' দিয়েছে, যার জন্য তাদের আরও তিন হাজার ৫৩১ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের ফিল্ড অফিস থেকে অডিটটি করা হয় এবং পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি এটি পর্যালোচনা করে ভ্যাট 'ফাঁকি'র এই অভিযোগের সত্যতা পায়।

২০২৩ সালের অক্টোবরে জমা দেওয়া অডিট প্রতিবেদন এবং প্রতিবেদন তৈরির প্রায় আট মাস পর ২০২৪ সালের মে মাসে জমা দেওয়া পর্যালোচনা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের মধ্যে তিন বছরে এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের বিরুদ্ধে এক হাজার ৯১৭ কোটি টাকা এবং এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের বিরুদ্ধে এক হাজার ৬২১ কোটি টাকা ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

দুই কোম্পানিই কোনো ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ এবং ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলছেন, তারা দুটি কোম্পানিকে 'শুনানির একাধিক সুযোগ' দিয়েছেন।

কোম্পানি দুটি ৬ জুন নতুন করে শুনানির জন্য আপিল করেছিল—এ বিষয়ে তিনি বলেন, তারা ইতোমধ্যে শুনানিতে উপস্থিত হয়েছে এবং অডিট চলাকালীন তাদের বক্তব্য জমা দিয়েছে।

মুশফিকুর রহমান বলেন, 'পরে, আমরা তাদের বক্তব্য পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছি। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদেরকে দুবার শুনানিতে হাজির হতে বলেছি, কিন্তু তারা আসেনি। তারপর যখন আমরা ভ্যাট দাবির আদেশ জারি করি, তখন শুনানির জন্য আরেকটি চিঠি পাঠায়—যা মেনে নেওয়া আর সম্ভব ছিল না। এই সব বিবরণ আমার আদেশে নথিভুক্ত রয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Victory day today: A nation born out of blood and grit

The tide of war had turned by mid-December in 1971. The promise of freedom was no longer a dream. It had hardened into tangible certainty.

7h ago