ইসলামী ব্যাংক থেকে বরখাস্ত ২০০, ওএসডি ৪৭৭১

চাকরির নিয়ম ভাঙার অভিযোগে ইসলামী ব্যাংক মোট ৪ হাজার ৭৭১ কর্মকর্তাকে ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) এবং আরও ২০০ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন পরীক্ষায় উপস্থিত না হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। মোট ৫ হাজার ৩৮৫ জন কর্মকর্তাকে ওই পরীক্ষা দিতে বলা হয়েছিল। ব্যাংকটির বর্তমান কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের নিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানায়, ২০১৭ সালে দেশের বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংকটিকে জোরপূর্বক দখলে নেয় এস আলম গ্রুপ। তারপর কোনো পরীক্ষা ছাড়াই এবং ভুয়া সনদপত্রের মাধ্যমে এসব কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল উদ্দিন জসীম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এস আলম গ্রুপের আমলে প্রায় ১১ হাজার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এই নিয়োগের বেশিরভাগ ছিল অস্বচ্ছ এবং কোনো অফিসিয়াল সার্কুলার জারি করা হয়নি।
গত ২৭ সেপ্টেম্বরের পরীক্ষায় মাত্র ৪১৪ জন অংশগ্রহণ করে।
এম কামাল উদ্দিন জসীম জানান, যারা পরীক্ষা দেননি তাদের ওএসডি করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ২০০ জনকে শৃঙ্খলা ভাঙার কারণে সরাসরি চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
তার ভাষ্য, 'বরখাস্তের জন্য কোনো নির্দিষ্ট কারণ দেখানোর প্রয়োজন নেই। কারণ কোম্পানি চাইলে তিন মাসের বেতন পরিশোধ করে কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করতে পারে।'
ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কয়েক দিনের মধ্যে নেওয়া হবে। তারা আপাতত কোনো দায়িত্ব পালন করছেন না বলে জানান তিনি।
'ইসলামী ব্যাংক মানবিক বিবেচনা দেখিয়েছে, কারণ এস আলম আমলে নিয়োগ পাওয়া এখনো প্রায় ১০ হাজার কর্মচারী বহাল আছে,' যোগ করেন তিনি।
গত বছরের আগস্টে আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সাত বছর পর ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ শেষ হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক তখন ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়। ওই পর্ষদে এস আলম গ্রুপের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আধিপত্য ছিল।
ব্যাংকটির মানবসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, নতুন বোর্ড এসে অডিট করে। অডিটে দেখা যায়, ব্যাংকটির ২১ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ দখলে নেওয়ার পর ১০ হাজার নিয়োগ পান।
ব্যাংকের নথি থেকে জানা যায়, ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মোট ৭ হাজার ২২৪ জনকে চট্টগ্রাম থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়, যার মধ্যে ৪ হাজার ৫০০ জনের বেশি কেবল পটিয়া উপজেলা থেকে।
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়াতে।
এই কর্মকর্তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা যাচাই করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর মাধ্যমে একটি মূল্যায়ন পরীক্ষার আয়োজন করে ইসলামী ব্যাংক।
তবে কিছু কর্মকর্তা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ইসলামী ব্যাংক একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কর্মীদের দক্ষতা যাচাইয়ের অধিকার রাখে, কারণ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কর্মক্ষমতা কর্মীদের যোগ্যতা ও দক্ষতার ওপর সরাসরি নির্ভরশীল।
তারপরও একাংশ কর্মকর্তা পরীক্ষা বর্জন করেন, বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেন।
ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, 'এটি একটি নতুন ধারণা, আর এটি কর্মীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। চাকরি হারানোর ভয়ে অনেক কর্মকর্তা আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন।'
Comments