‘ট্রফি চুরির অপবাদ দিয়ে’ শিশুকে স্টেডিয়ামে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

স্কুল থেকে ফিরে চার শিশু খেলতে যায় মাদারীপুর স্টেডিয়ামে। এক পর্যায়ে তারা স্টেডিয়ামের দ্বিতীয় তলায় অফিসকক্ষের দিকে যায়। সেখানে একটি কক্ষে রাখা ছিল খেলার ট্রফি।

ওই চার শিশু কক্ষে ঢুকে বড় একটি ট্রফি হাতে নেড়েচেড়ে দেখে। পরে তারা সেই ট্রফিটি নিয়ে গ্রিল বেয়ে নিচে নেমে যায়।

পরে ট্রফিটি মাঠের মধ্যে রেখেই দেয়াল টপকে তারা স্টেডিয়ামের বাইরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। সে সময় তাদের দেখে ফেলে স্টেডিয়ামের দারোয়ান ওয়াজেদ মাদবর (৫৪)।

ধাওয়া দিয়ে তিনি এক শিশুকে আটকে ফেললেও দৌড়ে চলে যায় অপর তিনজন। পরবর্তীতে দারোয়ান ওই শিশুকে আটকে নির্যাতন করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিশুটি বর্তমানে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

গতকাল রোববার দুপুরের ওই ঘটনার বিষয়ে শিশুটির বাবা শফিকুল ইসলাম মোল্লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দারোয়ান আমার ছেলেকে শূন্যে তুলে আছাড় দিয়েছে, অমানুষিক নির্যাতন করেছে। তারা আমার ছেলের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করেছে। এমনকি তারা মব করে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল।'

অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'আমি ও আমার স্ত্রী সেখানে গেলে দারোয়ান কয়েকজনকে ডেকে মব সৃষ্টির চেষ্টা করেন। আনুমানিক ২৫-৩০ জন লাঠিসোঠা-হকিস্টিক নিয়ে এসে আমাদের পেটানোর হুমকি দেয়।'

মাদারীপুর থানা সূত্র জানায়, স্টেডিয়ামে চুরি করতে গিয়ে এক শিশু ধরা পড়ার তথ্য পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে তারা শিশু, শিশুর বাবা ও দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।

সে সময় দারোয়ান ওয়াজেদ মাদবর শিশুটির বিরুদ্ধে চুরি এবং বাবার বিরুদ্ধে তাকে মারধরের অভিযোগ করেন।

পরে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে শিশুর পরিবার মুচলেকা দিয়ে রাত ৮টার দিকে থানা থেকে মুক্ত হন। কিন্তু রাতে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আজ সোমবার বিকেলে সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটির গলা, কনুই, পিঠ, কোমর ও পেটে আঘাতের চিহ্ন আছে। পাশাপাশি তার মাথার একপাশ ফুলে গেছে।

অভিযুক্ত দারোয়ান ওয়াজেদ মাদবর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ধরার সময় শিশুটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। তখন সে রাস্তায় পড়ে গিয়ে আঘাত পায়।'

ট্রফি চুরি হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। বলেন, 'বড় একটি ট্রফি স্টেডিয়ামের মাঠের মাঝখানে গিয়ে পেয়েছি।'

জানতে চাইলে মাদারীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. হাবিবুল আউয়াল (ভারপ্রাপ্ত ডিসি) টেলিফোনে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিশু নির্যাতন বা চুরির বিষয়ে আমি কিছু জানি না।'

'আর যদি দারোয়ান শিশুটিকে আঘাত করে বা দায়িত্বে অবহেলা করে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে,' যোগ করেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে শিশু, শিশুর বাবা ও দারোয়ানকে থানায় নিয়ে আসি। দারোয়ান থানায় অভিযোগ দায়ের করতে চেয়েছিলেন। পরে স্থানীয় গণ্যমান্যদের কথায় মুচলেকার মাধ্যমে শিশুটির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ছেড়ে দেওয়া হয়।'

'তবে শিশুর গায়ে হাত তোলা একটি অপরাধ। যেহেতু দুই পক্ষ বিষয়টি সমঝোতা করেছেন, তাই আমরা কোনো আইনি পদক্ষেপ নেইনি,' বলেন তিনি।
 

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

7h ago