প্রিসাইডিং কর্মকর্তার মুখে কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেওয়ার বর্ণনা

কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট
সিল মারা কয়েকটি ব্যালট পেপার পড়ে ছিল কেন্দ্রের ফ্লোরেও। ছবি: রাজিব রায়হান/স্টার

'দুপুর ২টার আগ পর্যন্ত সব সুন্দরভাবেই চলছিল। হঠাৎ ১০-১৫ জন এসে কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। দ্রুত আমি বুথে গিয়ে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি, কিন্তু লাভ হয়নি। তারা আমাকে এবং আমার সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন, বুথে ঢুকে জাল ভোট দেওয়া শুরু করেন।'

এক নিশ্বাসে ভোটকেন্দ্রের এমন পরিস্থিতির বর্ণনা দিচ্ছিলেন চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের জিরি ইউনিয়নের কৈয়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অধ্যাপক রূপণ বড়ুয়া।

আজ রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় তার কেন্দ্রের ভেতরে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে রূপন বড়ুয়া বলেন, 'তারা বিশৃঙ্খলা শুরু করলে আমি কার্যালয়ে এসে গেটে তালা দিয়ে দেই। তারা গেট ভাঙতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি বলে দিয়েছি, আমাকে দিয়ে কোনো অবৈধ কাজ হবে না। এরপর তারা বিভিন্ন বুথে ঢুকে শতাধিক ব্যালটে সিল মারে।'

তিনি বলেন, 'আমি প্রশাসনকে জানানোর ৪৫ মিনিট পর ফোর্স পাঠানো হয়। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেছি, আমাকে বাঁচান।'

রূপেন বড়ুয়া বলেন, 'যে ভোট তারা দিয়েছে, সেই ব্যালটগুলোতে কোনো কর্মকর্তার সই নেই। ফলে এসব ভোট বাতিল হয়ে যাবে।'

নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে কলেজ শিক্ষক রূপেন বড়ুয়া বলেন, 'আমি আমার কলেজের প্রিন্সিপালকেও ফোন করে জানিয়েছি। তাকে বলেছি যে আমার মৃত্যু হতে পারে যেকোনো সময়।'

সরেজমিন দেখা যায়, তার কেন্দ্রে মোট বুথ ছিল ছয়টি—তিনটি নারী ও তিনটি পুরুষ ভোটারের জন্য।

দুর্বৃত্তরা সবগুলো বুথে ঢুকেই জাল ভোট দেন বলে জানান দায়িত্বরত আনসার ও পোলিং কর্মকর্তা।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর সমর্থকরা দাবি করেন, ওই বহিরাগতরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী।

নারীদের ৫ নম্বর বুথে গিয়ে ৭৫টি ব্যালট পেপারে তারা নৌকা প্রতীকে জাল ভোট দেয় বলে জানান উপস্থিত কর্মকর্তারা।

এ ছাড়া, নারীদের ৪ নম্বর বুথের ৯২টি, পুরুষদের ৩ নম্বর বুথে ৪৭টি ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল দেওয়া হয়।

বিকেল ৩টা ২৮ মিনিটে ভোটকেন্দ্রটি ছিল পুরোটাই ফাঁকা। কেন্দ্রের বাইরে কেবল নৌকার সমর্থকরা ছিলেন।

এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৭০ জন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৭০০টি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন ভূঞা বলেন, 'প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ঘটনাটি জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই ফোর্স পাঠানো হয়েছে। ভোট গণনার সময় এসব জাল ভোট বাদ দেওয়া হবে।'

পটিয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে চট্টগ্রাম-১২ আসন। এবারের নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থী হয়েছেন নয়জন।

এই আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর মধ্যে।

পুলিশ সূত্র জানায়, ১০৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৪৬টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh Bank plans mergers of troubled banks, NBFIs

Six Islamic banks are likely to be merged initially, said central bank officials.

11h ago