রংপুর সিটি নির্বাচন

জয় নিয়ে আশাবাদী আওয়ামী লীগ, ইভিএম নিয়ে চিন্তিত জাপা

রংপুর সিটি নির্বাচন
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। ছবি: কংকন কর্মকার/স্টার

ভোটের দিন যতো ঘনিয়ে আসছে রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ততো বাড়ছে। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা উন্নয়নের অঙ্গীকার নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। প্রচারণায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন।

গত ৯ ডিসেম্বর থেকে রংপুর সিটি নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করেন প্রার্থীরা। প্রচারণা চলবে আগামী ২৫ ডিসেম্বর মধ্য রাত পর্যন্ত। আগামী ২৭ ডিসেম্বর ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে।

এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাপাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২০১৭ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী দিলেও এবার দলটি নির্বাচন বয়কট করছে।

প্রার্থীদের পোস্টার এবং ব্যানারে পুরো ২০৫ বর্গ কিলোমিটার শহরটি উৎসবের চেহারা পেয়েছে। রংপুর নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ও অলিগলি পোস্টার ও ব্যানারে ভরে গেছে। মাথার ওপরেও পোস্টার ঝুলছে।

৩৩টি ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণার অস্থায়ী প্রচার কেন্দ্র বসিয়েছেন মেয়র প্রার্থীরা। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সমর্থকদের কোলাহলে মুখর থাকে এসব প্রচার কেন্দ্র। এলাকায় এলাকায় মাইকে শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রার্থীর প্রচারণা। নগরীর পাড়া-মহল্লায় মধ্যরাত পর্যন্ত মিছিল চলে। তবে, এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এমনকি কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনেরও অভিযোগ ওঠেনি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া প্রতিদিন ৪-৫টি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত তিনি ৩৩টি ওয়ার্ডের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন।

ডালিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি দলীয় সমর্থক ও নেতাকর্মীদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সমর্থন পাচ্ছি।'

বুধবার বিকেলে রংপুর যুবলীগের আয়োজনে মেডিকেল মোড় (ধাপ) এলাকায় প্রচারণায় অংশ নেন ডালিয়া। সমাবেশে তিনি বলেন, 'গত ৫ বছরে রংপুর সিটির মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। জনগণ দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।'

রংপুর সিটি নির্বাচন
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণায় জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। ছবি: কংকন কর্মকার/স্টার

তিনি রংপুর সিটির করপোরেশনের উন্নয়নের স্বার্থে আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

'সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি নির্বাচনে নৌকার পক্ষে গণজোয়ারের রায় দেবে নগরবাসী,' বলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া।

এ ছাড়াও, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর শাপলা চত্বর এলাকায় গণসংযোগে এসে সাংবাদিকদের ডালিয়া বলেন, 'উন্নয়ন বঞ্চিত রংপুরবাসী ভাগ্য উন্নয়নে একজোট হয়েছেন। নির্বাচনী গণসংযোগে গিয়ে আমরা নৌকা মার্কার পক্ষে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।'

এদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও রংপুর কোতোয়ালী আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি লতিফুর রহমান আওয়ামী লীগের একাংশের ভোটে জয়ী হবেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। লতিফুর দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় দল থেকে বহিষ্কার হন। লতিফুরও প্রতিদিন নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।

অন্যদিকে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন জাপা প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনিও অধিকাংশ নগর এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। বুধবার তিনি রংপুর নগরীর শাপলা মোড়, গ্র্যান্ড হোটেল মোড়, সালেক মার্কেট, শাহ জামাল মার্কেট ও জীবন বীমা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। গতকাল বৃহস্পতিবারও তিনি বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালান।

মোস্তফা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সবকিছু আমার পক্ষে থাকলেও ইভিএমের মাধ্যমে ভোট নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত। আমি গত ৫ বছরের মেয়াদে নগরবাসীর সেবা করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। নগর এলাকায় ব্যাপক সড়ক ও ড্রেন উন্নয়ন করেছি।'

সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে মোস্তফা বলেন, '২০১২ সালে গঠিত হওয়ার পর থেকে রংপুর সিটির ৬০ শতাংশ এলাকা এখনো উন্নয়নের বাইরে থেকে গেছে। অনুন্নত এলাকাও সার্ভিস ট্যাক্সের বাইরে আছে। গত ৫ বছরে রংপুর সিটির অধীনে ১৮টি অনুন্নত ওয়ার্ড থেকে কোনো কর আদায় করা হয়নি। কারণ নাগরিক সুবিধা দিতে না পারায় তাদের কাছ থেকে কর নেওয়া হয়নি।'

'জনগণ সব দিক বিবেচনা করে আমাকে ভোট দেবে,' বলেন মোস্তফা।

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অন্য মেয়র প্রার্থীরা হলেন- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান ও লতিফুর রহমান (ইনু)।

এবার নির্বাচনে ৩ হাজার ৫০০ সেট ইভিএম মেশিন দরকার হবে বলে জানিয়েছেন রংপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন।

রংপুর সিটির প্রথম মেয়র ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রয়াত শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। ২০১৭ সালের নির্বাচনে তিনি মোস্তফার কাছে হেরে যান।

২০১২ সালের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন। তবে, গত ১০ বছরে ভোটার সংখ্যা ৬৮ হাজার ৭২৭ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জন হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Strategies we can employ in tariff talks with the US

US tariff talks: Bangladesh writes to USTR, seeking date

The negotiation team from Bangladesh will fly to America once the USTR fixes a date for the talks

9h ago