স্টার নির্বাচনী সংলাপ

‘গণঅভ্যুত্থানের শিক্ষা নিতে না পারলে আবার ফ্যাসিবাদের আবির্ভাব ঘটবে’

স্টার নির্বাচনী সংলাপ' অনুষ্ঠানে সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। ছবি: স্টার

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে 'স্টার নির্বাচনী সংলাপ' অনুষ্ঠানে সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম নির্বাচন বিলম্ব বা ভণ্ডুল করার রাজনৈতিক অপচেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন । 

তিনি বলেছেন, সম্প্রতি ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, উদীচী ও ছায়ানটের ওপর চালানো হামলা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়; বরং এটি সুপরিকল্পিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়া 'স্টার নির্বাচনী সংলাপ' অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। 

তিনি দেশবাসীকে এসব ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান এবং বলেন, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া বা হতে না দেওয়ার একটি লক্ষ্য নিয়েই এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশবাসী একটি নতুন ইতিহাস রচনার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে। সেই অভ্যুত্থানের দুটি প্রধান দাবি ছিল—ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং বৈষম্যের অবসান। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা রুখে দাঁড়ানো না গেলে অনির্বাচিত সরকার থেকে সুবিধাভোগী শক্তিগুলো নতুন রূপে আবারও দেশ শাসনের চেষ্টা করবে বলে তিনি সতর্ক করেন।

তিনি বলেন, 'গণঅভ্যুত্থানের শিক্ষা নিতে না পারলে আবার ফ্যাসিবাদের পুনরাবির্ভাব ঘটবে।'

নির্বাচন প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও শুধু নির্বাচনেই সব সমস্যার সমাধান হবে—এমন ভাবনা ভুল। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি গভীরভাবে বোঝার প্রয়োজন আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এক কথায় বললে সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দিবো কোথায়—এই অবস্থায় দেশ।'

নিজের মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মুক্ত এলাকায় নারী নির্যাতন ছিল না, সেখানে জনগণের শক্তি ও বুদ্ধির ভিত্তিতে ইনসাফ ও ভালোবাসার সমাজ গড়ে উঠেছিল। কিন্তু ৫৪ বছর পরও সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। এখন সবচেয়ে জরুরি হলো সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি নতুন করে নেওয়া।

বামপন্থী রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'অনেকেই বলে আপনাদের রেসপেক্ট করি কিন্তু আপনাদের কাছে খুব বেশি এক্সপেক্ট করি না। আর যাদের কাছে এক্সপেক্ট করি তাদেরকে রেসপেক্ট করতে পারি না।'

বড় দলগুলোর প্রতি অন্ধ প্রত্যাশা রেখে রাজনীতিতে কোনো সমাধান আসবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, '৭১ সালে আমরা দেখেছি। প্রভিন্সিয়াল গভমেন্টে চারটা মন্ত্রী ছিল আপনাদের। ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করছেন।  তাও আমি নেগেটিভ না, পজিটিভ জায়গা থেকেই বলছি—নতুন করে ভাবতে হবে।'

নতুন প্রজন্মের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, ইতিহাস ও ধারাবাহিকতা থেকে শিক্ষা না নিলে কেবল 'উইল পাওয়ার' দিয়ে সবকিছু করা সম্ভব নয়। গণঅভ্যুত্থানকে স্বতঃস্ফূর্ত বলা হচ্ছে। 

সেলিম আরও বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। এজন্য প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি। পরিকল্পনা নিচ থেকে উপরে উঠে আসতে হবে—ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায় থেকে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে বলে তিনি মত দেন।

অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পাশাপাশি নির্বাচনে অর্থের প্রভাব বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, 'অর্থনীতি যদি লুটপাটের হয়, রাজনীতিও লুটপাটের হবে।' 

ঘুষ ও দুর্নীতির সংস্কৃতি বন্ধ করার ওপর জোর দেন তিনি।

বক্তব্যের শেষাংশে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, একদিনে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়, তবে সেই অভিমুখে এগোতে হবে। 

তিনি বলেন, 'পুঁজিবাদী বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য নিয়েই নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। সেই লক্ষ্য নিয়েই নির্বাচনে জনগণের কাছে যাওয়ার অঙ্গীকার করছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s body being taken to Manik Mia Avenue for janaza

Janaza will be held at Manik Mia Avenue at 2pm

1h ago

Farewell

9h ago