চা বাগানের একটি শ্রমিক পরিবারের অসহায়ত্বের বয়ান

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর চা বাগানের শ্রমিক পূর্ণিমা কন্দের পরিবার। ছবি: স্টার

ছোট্ট ঘরটির মাটির দেওয়াল এখানে-ওখানে ভেঙে পড়েছে। এই দূর্বল ঘরের ওপরে লাগানো চকচকে টিনের ছাউনি খানিকটা বেমানানই লাগে। ঘরের ৭ বাসিন্দার স্বাস্থ্যের অবস্থাও ঘরটির মতো নড়বড়ে। কারুর চোখে দ্যুতি নেই। হাড় জিরজিরে কালো শরীরগুলোতে পুষ্টির অভাবও স্পষ্ট।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর চা বাগানের এই শ্রমিক পরিবারটির কর্ত্রী পূর্ণিমা কন্দ। বছরখানেক আগে স্বামী অনিল কন্দের মৃত্যুর পর তিনিই এখন সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী। তার আয়েই চলে সংসার। তিনি অসুস্থ হলে সবার ভাতের যোগাড় বন্ধ হয়ে যায়, কিংবা অন্যের কাছে হাত পাতা লাগে।

যুগ যুগ ধরে চলা শ্রম শোষণের অবসান ঘটাতে সিলেট-হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের লাখো চা-শ্রমিক জোট বেঁধে আন্দোলনে নেমেছেন। গত ১৯ দিন ধরে চলছে এই আন্দোলন। তাদের জন্য কাজ বন্ধ রাখা মানে মজুরি বন্ধ থাকা, নামমাত্র যে রেশন পান; তাও বন্ধ থাকা। তাই এখন অন্যের কাছেও হাত পাতার উপায় নেই পূর্ণিমা কন্দের।

এ অবস্থায় পূর্ণিমা অসহায়ত্বের যে বয়ান হাজির করলেন তা এ রকম, 'ঘরে চাল নাই, আজ (শুক্রবার) দুই পট চাল পাইছি। ইতা রান্না কইরা বাচ্চা-কাচ্ছারে দিছি। ১৫ দিনের মধ্যে ২৪০ টাকা পাইছিলাম। এই টাকা দিয়ে কিতা করমু বুঝতে পারছিলাম না?'

পূর্ণিমার বড় ছেলে রাখাল কন্দ পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ২ মেয়ে গঙ্গা ও যমুনা পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। ছোট ছেলে রাজা কন্দ পড়ে শিশু শ্রেণিতে।

পূর্ণিমা বলেন, '১৫ দিন ধরে কীভাবে আমাদের দিন যাচ্ছে, তা কেবল আমরাই জানি। দোকান থেকে বাকিতেও সদাই মিলছে না। গ্রামের ওই মাথার এক বাড়ি থেকে সকালে দুইলা (অল্প কিছু) চাইল ধার আইনা রানছি। রাতে কিতা (কি) রানমু এখন সেই চিন্তায় আছি।'

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের দুর্দশার কথা সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে উঠে আসে। কিন্তু আড়ালেই থেকে যায় চা-শ্রমিকের মত অবহেলিত জনগোষ্ঠীর কথা।

পূর্ণিমার ৭০ বছর বয়সী শ্বশুর গোজা কন্দ জানালেন, তারা এখন একবেলা ভাত খাচ্ছেন। বাকি ২ বেলা লবন দিয়ে লাল চা ও মুড়ি খেয়ে কাটাচ্ছেন।

পূর্ণিমার শাশুড়ি সারো কন্দের বয়সও ৬০ পেরিয়েছে। তিনি বলেন, 'পুর্ণিমা শেষ যেবার পুরো মজুরি পাইসিলো, তখন বাজার থেকে আধাকেজি তেলাপিয়া মাছ আনছিলো।'

তবে এই পরিবারের সদস্যরা শেষ কবে মাংস খেয়েছেন তা মনে করতে পারেননি কেউ।

পূর্ণিমার কাছ থেকে আরও জানা গেল, আন্দোলন ও কর্মবিরতির কারণে বাগানের অন্য শ্রমিক পরিবারগুলোর ঘরেও এখন খাবার বাড়ন্ত। দুমুঠো চাল ভাজার সঙ্গে চা কিংবা শাক-পাতা সেদ্ধ খেয়েই তাদের দিন কাটছে। খাবারের জন্য কান্নাকাটি করছে ছোট শিশুরা।

Comments

The Daily Star  | English
FY2026 Budget,

How the FY2026 budget can make a difference amid challenges

The FY2026 budget must be more than a mere fiscal statement.

19h ago