‘হাঁটতে হচ্ছে না, সাইকেলে করে ছোটবোনকেও স্কুলে আনতে পারছি’

মৌলভীবাজার সাইকেল
শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাইকেল বিতরণের পর কথা বলছেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

সঞ্জিতা উরাংয়ের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার প্রত্যন্ত সীমান্তবর্তী মুরইছড়া চা বাগানে। স্কুল থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে তার গ্রাম। তাকে প্রতিদিন হেঁটেই স্কুলে যাওয়া-আসা করতে হতো।

'নিঃসন্দেহে এতদূর হাঁটতে খুবই কষ্ট হয়। যেদিন স্কুলে যাই সেদিন এতো ক্লান্তি লাগে যে আর কিছুই করতে পারি না। কখনো কখনো স্কুলে সময়মতো পৌঁছাতেও পারি না। প্রায়ই অনুপস্থিত থাকতে হয়। অসুবিধার কারণে আমার বান্ধবীদের অনেকেই এখন আর স্কুলে যায় না,' কথাগুলো বলছিল সঞ্জিতা।

সঞ্জিতার বাবা হিরালাল উরাং চা শ্রমিক। দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরি পান তিনি। দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেয়ের কষ্ট দেখে মাঝেমধ্যে মনে হয় তাকে স্কুলে যেতে মানা করি। কিন্তু, পড়াশোনায় তার আগ্রহ দেখে আমিই দমে যাই।'

গত বুধবার ছিল সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সঞ্জিতা উরাংয়ের খুশির দিন। প্রথমবারের মতো নতুন সাইকেলে চড়ে স্কুলে গিয়েছে সে।

'এই প্রথম মনে ভালো লাগা নিয়ে স্কুলে গেলাম,' হাসিমুখে ডেইলি স্টারকে জানায় সঞ্জিতা।

গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে ২০ স্কুল শিক্ষার্থীকে সাইকেল উপহার দেওয়া হয়।

একই বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী রেখা উরাং ডেইলি স্টারকে বলে, 'আগে বহু দূর হেঁটে স্কুলে যেতাম। দেরিতে স্কুলে পৌঁছালে স্যারদের বকা খেতাম। বাড়ি ফেরার পর খুবই ক্লান্ত হয়ে যেতাম। এখন সাইকেল পাওয়ায় অনেক উপকার হয়েছে।'

'আমরা সাইকেল নিয়ে দ্রুত স্কুলে যেতে পারছি। সাইকেলের পেছনে ছোটবোনকেও স্কুলে নিয়ে আসি। মাঝেমধ্যে একা একা স্কুল থেকে ফিরতে ভয় লাগে। এখন ভয় কেটে গেছে। সাইকেল পাওয়ায় আমার বোনও খুশি। সেও এখন সহজে স্কুলে আসতে পারছে,' যোগ করে রেখা।

একই কথা জানিয়েছে লক্ষ্মীপুর মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হেলেনা খেরয়েম, রিককা রেমা, ক্রিস্টিনা তারিয়াংসহ অনেকে। তারা সবাই এখন প্রতিদিন সাইকেল নিয়ে স্কুলে আসা–যাওয়া করছে।

লক্ষ্মীপুর মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাদার সুধীর গমেজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে দূরের শিক্ষার্থীরা দেরি করে আসতো। স্কুলে অনুপস্থিত থাকতো। উপজেলার কয়েকটি খাসিয়াপুঞ্জি ও চা বাগান থেকে হাইস্কুলগুলোর দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে মেয়েরা এসএসসি পাসের আগেই ঝরে পড়ে। এখন সাইকেল নিয়ে তারা প্রতিদিনই স্কুলে আসছে।'

'পর্যায়ক্রমে যদি বাকি শিক্ষার্থীদের সাইকেল দেওয়া হয় তাহলে তাদেরও কষ্ট কমবে। পড়ালেখায় আগ্রহ বাড়বে,' যোগ করেন তিনি।

মঙ্গলবার বিকেলে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা পরিষদের মিলনায়তনে শিক্ষার্থীদের হাতে বৃত্তির চেক ও সাইকেল তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।

তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে শিক্ষার্থীরা এই সাইকেল পেয়েছে। মেয়েরা এখন উৎসাহ নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। আশা করি, ঝরে পড়ার সংখ্যা কমে আসবে। কাউকে পিছনে ফেলে উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।'

এই উদ্যোগকে 'পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার' হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'মেয়েদের সাহসী হতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে। শিক্ষিত হতে হবে। তবেই সব বাধা অতিক্রম করা সম্ভব।'

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার।

তিনি বলেন, 'সাইকেলের পাশাপাশি নৃগোষ্ঠীর ২১০ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীকে ৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকার শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

7h ago