‘মনে হচ্ছিল কেয়ামত শুরু হয়েছে’

ফয়সাল মাহমুদ। ছবি: ভিডিও থেকে

গাজিয়ানটেপ বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল মাহমুদ তখন নিজের ডরমেটরিতে ঘুমাচ্ছিলেন। এমন সময়ই তুরস্কে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে।

তুরস্কে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ফয়সাল গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে আমাদের সবার ঘুম ভেঙে যায়। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, ভবনটি ভেঙে পড়বে। আমি বিছানা থেকে নামার চেষ্টা করলে আমার তুর্কি রুমমেট নিষেধ করতে থাকে। প্রচণ্ড ঝাঁকুনি বন্ধ হয় ২-৩ মিনিট পর।'

তিনি বলেন, 'ঝাঁকুনি বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা হাতে কাছে যা পেয়েছি সেগুলো নিয়ে ৬ তলা ভবনটি থেকে ছুটে নেমে আসি। বের হয়ে দেখতে পাই, ভবনে ফাটল ধরেছে।'

গতকাল টেলিফোনে কথা বলার সময় তিনি আরও বলেন, 'বাকি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে উঠেছি। কবে যে ছাত্রাবাসে উঠতে পারব জানি না।'

দক্ষিণ তুরস্কের শহর গাজিয়ানটেপে বসবাসকারী ২৬ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে ফয়সাল একজন। কাহরামানমারাসের ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে ৫০ মাইল দূরে এবং সিরিয়ার সীমান্ত থেকে ১৫০ মাইল দূরে তাদের এই শহরটি।

তুরস্কে ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর মধ্যে একটি গাজিয়ানটেপ।

ভয়ার্ত কণ্ঠে ফয়সাল বলেন, 'এর আগেও ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। কিন্তু এবারেরটা ছিল অত্যন্ত ভয়ংকর। ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পন এখনো হচ্ছে, ১৫-২০ মিনিট পর পরই সেটা টের পাচ্ছি। এখন পর্যন্ত অন্তত ৮০ বার এটা অনুভব হয়েছে। এমনকি এখন আপনার সঙ্গে কথা বলছি, এখনো সিলিং কাঁপছে।'

তিনি বলেন, 'মনে হচ্ছিল কেয়ামত শুরু হয়েছে, আমরা যেন জাহান্নামে চলে এসেছি। তুর্কির মানুষরা বলছিলেন, কেয়ামত এমনই হবে।'

ফয়সাল জানান, তিনি ওই শহরে বসবাসকারী অন্যান্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং তারা সবাই নিরাপদ আছেন।

তিনি বলেন, 'তবে, আমরা কেউই কোনো বাড়িতে নেই। শহরের প্রায় সব ভবনেই ফাটল দেখা দিয়েছে। কখন কোন ভবন ধসে পড়বে তা কেউ বলতে পারে না। এ জন্য সবাই মসজিদ, সিটি করপোরেশনের লাইব্রেরি, ক্রীড়া কেন্দ্র এবং অন্যান্য ভবনে আশ্রয় নিয়েছে।'

খারাপ আবহাওয়া তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছে।

ফয়সাল বলেন, 'বাইরে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, প্রচণ্ড তুষারপাত এবং বৃষ্টিও হচ্ছে। এমন খারাপ আবহাওয়ায় বাইরে থাকাটা খুবই কঠিন। কবে আমার ডরমেটরিতে ফিরতে পারব জানি না।'

ফয়সাল জানান, সিটি করপোরেশন পরিদর্শনের পরেই কেবল সবাই নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে পারবে।

সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সবার মাঝে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া, স্কুল কর্তৃপক্ষ, হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকরা বিনামূল্যে খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে সাহায্য করছেন। ফয়সাল বলেন, 'সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করছেন।'

ছবি: রয়টার্স

 

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s body taken to Parliament Complex ahead of janaza

Janaza will be held at Manik Mia Avenue at 2pm

3h ago