এনআইডি বাধ্যতামূলক: ট্রেনের টিকিটে স্বস্তি

১ মার্চ থেকে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট পেতে লাগবে জাতীয় পরিচয়পত্র
ছবি: স্টার

পারিবারিক কাজে আগামীকাল বুধবার চট্টগ্রামে যাবেন মো. আব্দুল্লাহ। ট্রেনের কোনো আসন ফাঁকা আছে কি না তা যাচাই করতে আজ মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে অনলাইনে টিকিটের খোঁজ করেন তিনি। ওয়েবসাইটে ঢুকেই তিনি কিছুটা আশ্চর্য হন।

ট্রেনে যাতায়াতের জন্য যেখানে ৪ দিন আগেও চেষ্টা করে টিকিটি পাওয়া যায় না, সেখানে ১ দিন আগে দুপুর দেড়টার দিকে চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগিতে (স্নিগ্ধা) ১৯টি আসন খালী। বিষয়টি অবাক করার মতোই।

টিকিট কালোবাজারি রোধে আগামী ১ মার্চ থেকে ট্রেনে যাত্রী চলাচলের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বাধ্যতামূলক করার ফলেই এমনটি দেখা গেছে বলে মনে করছেন আব্দুল্লাহসহ ট্রেনের নিয়মিত যাত্রীরা।

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. আব্দুল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ট্রেনের সময়সূচির মাত্র একদিন আগে অনলাইনে টিকিট পাওয়া স্বপ্নের মতো। আগে চট্টগ্রামে আসা-যাওয়ার জন্য ৪ দিন আগে টিকিট কাটতে হতো। যেদিন সকালে টিকিট ছাড়ে সেদিনও একটু দেরি করলে টিকিট পাওয়া যেতো না।'

তিনি সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, 'ভ্রমণের সময় টিকিট চেকিংয়ের ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।' 

'বাংলাদেশ রেলওয়ে ফ্যান গ্রুপ' নামের ফেসবুক পেইজসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের এই উদ্যোগ নিয়ে অনেকেই প্রশংসা করছেন। তবে কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধনে অনেকের সমস্যা হচ্ছে।

শুধু চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনই নয়, আজ দুপুর দেড়টায় ১ মার্চ রাত ৯টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়া মহানগর এক্সপ্রেসের ৫৪টি টিকিট অবিক্রিত দেখা গেছে। 

এছাড়া আগামী ২, ৩ ও ৪ মার্চ চট্টগ্রামগামী প্রায় সব ট্রেনের টিকিট অনলাইনে বা কাউন্টারে পাওয়া যাচ্ছে। অন্যান্য জেলার ট্রেনের টিকিটের ক্ষেত্রেও একই দৃশ্য দেখা যায়।

যাত্রীরা এখন যাত্রার ৪ দিন আগে অগ্রিম টিকিট কিনতে পারেন। তবে বাংলাদেশ রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে টিকিট বিক্রি শুরুর কিছু সময়ের মধ্যেই তা শেষ হয়ে যেতো। ফলে সাধারণ যাত্রীরা টিকিট পেতেন না।

এই সিন্ডিকেট পরে টিকিটগুলো বেশি দামে বিক্রি করতো। এতে সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে কখনো কখনো প্রকৃত ভাড়ার দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ আদায় করতেন তারা। বিভিন্ন উৎসব, ছুটির দিন বিশেষ করে ঈদের সময় এই সংকট তীব্র আকার ধারণ করে।

তবে আগামীকাল বুধবার থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে ভ্রমণ ও টিকিট কেনার জন্য যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ সঙ্গে রাখতে হবে।

ভ্রমণের সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে টিকিটের তথ্য না মিললে টিকিট ছাড়া ভ্রমণের অভিযোগে ওই যাত্রীকে জরিমানা করা হবে।

এভাবে একজন যাত্রী একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট কিনতে পারবেন, তবে ওই ব্যক্তিকে অবশ্যই ট্রেনে ভ্রমণ করতে হবে এবং তার সঙ্গে যে ৩ জন থাকবেন তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন কার্ড সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক নয়।

প্রতি মাসে ঢাকা থেকে রাজশাহী ভ্রমণকারী আহমেদ শফিক বলেন, এই উদ্যোগের ফলে কালোবাজারিরা আর টিকিটি নিয়ে তেমন একটা কারসাজি করতে পারবেন না।

ঢাকা থেকে দিনাজপুরে ট্রেনে যাতায়াত করা মো. সুমন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণত টিকিট বিক্রি শুরুর আধা ঘণ্টার মধ্যে অনলাইনে আর টিকিটি পাওয়া যেত না। জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে টিকিট বিক্রির যে নিয়ম চালু হচ্ছে এতে আশা করি এই সমস্যা আর হবে না। এখন কালোবাজারিরা আর তেমন একটা কারসাজি করতে পারবেন না। তবে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।'

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামীকাল বুধবার থেকে টিকিট যার ভ্রমণ তার চালু হবে। ট্রেনের ভেতরে বিষয়টি ভালোভাবে যাচাই করা হবে। কেউ আর অন্যের টিকিট দিয়ে ভ্রমণ করতে পারবেন না। সবাইকে ভ্রমণের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র বা জাতীয় জন্ম নিবন্ধন সনদ সঙ্গে রাখতে হবে।'

এই উদ্যোগের ফলে টিকিট কালোবাজারিরা তেমন একটা সুবিধা করতে পারবেন জানিয়ে সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Dozens of zombie firms still trading as if nothing is wrong

Nearly four dozen companies have been languishing in the junk category of the Dhaka Stock Exchange (DSE) for at least five years, yet their shares continue to trade on the country’s main market and sometimes even appear among the top gainers. 

2h ago