ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির সংজ্ঞা নির্ধারণসহ ব্যাংক কোম্পানি সংশোধন বিল সংসদে

সংসদ
জাতীয় সংসদ ভবন। স্টার ফাইল ফটো

'ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি'র সংজ্ঞা নির্ধারণসহ বেশকিছু পরিবর্তন এনে ব্যাংক কোম্পানি আইন আবার সংশোধন করা হচ্ছে। এতে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণসহ কিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।

আজ বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল 'ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল–২০২৩' সংসদে তোলেন।

এর আগে বিলটি সংসদে তুলতে আপত্তি জানান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তিনি অভিযোগ করেন, আইএমএফের শর্ত মেনে এই সংশোধনী বিলটি আনা হয়েছে। সংসদে কোনো কিছু গোপন করা উচিত না।

তবে অর্থমন্ত্রী বলেন, কারো পরামর্শে এই সংশোধনী আনা হচ্ছে না। আধুনিক ও সময়োপযোগী ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কিছু সংশোধন আনা হচ্ছে।

কণ্ঠভোটে ফখরুল ইমামের আপত্তি নাকচ হলে বিলটি সংসদে তোলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরে ৭ দিনের মধ্যে বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

এর আগে গত মার্চে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। গত ৩২ বছরে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন হয়েছে ৭ বার। এরমধ্যে ব্যাংক মালিকদের চাপে ১ পরিবার থেকে ৪ জন এবং টানা ৯ বছর ব্যাংকের পরিচালক থাকার সুযোগ দিয়ে সর্বশেষ আইন সংশোধন করা হয় ২০১৮ সালে।

বিদ্যমান আইনে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একই পরিবার থেকে পরিচালক হতে পারেন ৪ জন এবং টানা ৯ বছর তারা থাকতে পারেন। সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, একই পরিবার থেকে সর্বোচ্চ ৩ জন পরিচালক হতে পারবেন।

বিলে প্রথমবারের মত ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের সুবিধা কমানোর প্রস্তাবও রয়েছে এতে।

বিলে বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য বা আত্মীয় যে-ই হোক না কেন, তাদের সবাইকেই জামানত দিয়ে ঋণ নিতে হবে। ব্যাংকগুলো ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তালিকা করে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে। আর ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণ, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু, বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের কাছে কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুরোধ করলে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বিলে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওই তালিকা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার ৫ বছর পার না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না।

বিলে বলা হয়েছে, নোটিশ পাওয়ার ২ মাসের মধ্যে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতা টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে। এই মামলা অর্থ ঋণ আদালতের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করবে না।

বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ইচ্ছাকৃত খেলাপির তালিকা না পাঠালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই ব্যাংককে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা জরিমানা করতে পারবে।

বিলে আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা কোনো পরিবারের সদস্যরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একক বা অন্যজনের সঙ্গে কোনো ব্যাংকের শতকরা ১০ ভাগের বেশি শেয়ার কিনতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা কোনো পরিবারের সদস্যরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো ব্যাংক কোম্পানির 'উল্লেখযোগ্য শেয়ারধারক' (ব্যাংক কোম্পানির মালিকানা স্বত্বের ৫ শতাংশের বেশি) হতে পারবেন না।

বিলে বলা হয়, কোনো ব্যাংকে ন্যূনতম ৩ জন স্বতন্ত্র পরিচালকসহ সর্বোচ্চ ২০ জন পরিচালক থাকবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ছাড়া কোনো ব্যাংকের পরিচালক ও পরিচালকের পরিবারের সদস্যদের বা কোনোভাবে তাদের নিয়ন্ত্রিত কোনো প্রতিষ্ঠানের সুদ বা মুনাফা মওকুফ করা যাবে না।

প্রসঙ্গত, ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ার আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দল বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে ১ পরিবার থেকে ৪ জন এবং টানা ৯ বছর ব্যাংকের পরিচালক থাকার সুযোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।

Comments

The Daily Star  | English

BNP sticks to demand for polls by December

In a meeting with Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night, the BNP restated its demands that the next general election be held by December and the government immediately announce a roadmap to that end.

3h ago