টাঙ্গাইল মহাসড়কে নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রার প্রস্তুতি, শঙ্কা শুধু বৃষ্টি

টাঙ্গাইল মহাসড়কে নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রার প্রস্তুতি, শঙ্কা শুধু বৃষ্টি
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। ছবি: স্টার

টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে দেশের উত্তরের জেলাগুলোতে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে এবারও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েছে সড়ক কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসন। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে মানুষের ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ফেরার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।

তবে বৃষ্টি সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে পারে, এমন শঙ্কাও আছে। ইতোমধ্যে গত কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিপাতে মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অপরদিকে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় মেরামত কাজও ঠিকমতো চলছে না।

ঈদের ছুটির সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়বে। তখনো যদি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে তবে রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

টাঙ্গাইল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর আগে ১৩ কিলোমিটার দুইলেনের লিংক রোড চাপমুক্ত রাখতে গরুবোঝাই ট্রাকসহ ঢাকামুখী যানবাহনগুলোকে সেতুর পূর্ব গোলচক্কর থেকে ভূঞাপুর লিংক রোড দিয়ে বাইপাস করিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

এদিকে, প্রতিদিন প্রায় ৪০টি ট্রেন জয়দেবপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু রুটে চলাচল করে। ভূঞাপুর রোডের রাজাবাড়ি এবং বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব গোল চক্করের কাছে দুটি রেলগেতে কমপক্ষে ১৫ মিনিট গাড়ি দাঁড়াতে হয়। এতে ভূঞাপুর রোডের এসব স্থানে যানজট সৃষ্টি হতে পারে।

হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে প্রতিদিন উত্তরের ১৬টিসহ মোট ২৩ জেলার প্রায় ১১৬ রুটের ১৮-২০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদে এই সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়।

এই অতিরিক্ত যানবাহনের পাশাপাশি রাস্তায় গাড়ি নষ্ট, দুর্ঘটনা ও বেপরোয়া গাড়ি চালনার জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয় প্রান্তে যানজট সৃষ্টি হয়ে ঘরে ফেরা মানুষদের অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

যদিও, এবার রোজার ঈদে এই রুটে যান চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। 

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল হক খান পাভেল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেতু কর্তৃপক্ষ এবারও অতিরিক্ত চাপ সামলে সেতুর উপর দিয়ে নির্বিঘ্নে যান পারাপারে প্রস্তুত। রোজার ঈদের মতো এই ঈদের মোটরসাইকেলের জন্য যমুনা সেতুতে আলাদা টোল বুথ রাখা হয়েছে।'

তিনি জানান, গত ঈদে পশ্চিম প্রান্তে সিরাজগঞ্জ অংশে নলকা সেতুর পর এবার আন্ডারপাসটি খুলে দেওয়া হচ্ছে। 

'মনে রাখতে হবে এই ঈদে ছুটির দিন কম এবং অন্যান্য গাড়ির সঙ্গে কোরবানির পশুর গাড়ি যোগ হবে,' বলেন তিনি।

এই প্রকৌশলী আরও বলেন, 'আবহাওয়া নিয়েও বাড়তি দুশ্চিন্তা আছে। বৃষ্টিতে ইতোমধ্যে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টিও অব্যাহত আছে। বৃষ্টি হলে মেরামত করারও সময় পাওয়া যাবে না। তাছাড়া বৃষ্টি থাকলে যানবাহনের গতি ধীর হয়ে যায়।'

এদিকে পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ সেতুর পূর্ব দুইলেন লিংক রোড চাপমুক্ত রাখতে ঢাকামুখী যানবাহনগুলোকে সেতুর পূর্ব গোলচক্কর থেকে ভূঞাপুর লিংক রোড দিয়ে বাইপাস করিয়ে দেবে। কিন্তু এই আঞ্চলিক সড়কটির পাশে হাট-বাজারসহ মানুষের আনাগোনা আছে। এবার রাস্তায় গরুর ট্রাক থাকবে। রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে বা দুর্ঘটনা ঘটলে গরুর ট্রাকগুলো আটকে যাবে।

জানতে চাইলে ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এর আগের কোরবানির ঈদে সমস্যা হয়নি। আমাদের প্রস্তুতি আছে। আশা করি এবারও কোনো সমস্যা হবে না।'

সেতুর পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন ইয়াজদানী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যদিও বৃষ্টির কারণে রাস্তার ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ঈদের আগে মেরামত করা যাবে কি না বলা যাচ্ছে না। তবে পূর্ব পাড়ে গাড়ি আটকে না থাকলে পশ্চিম পাড়েও আটকে থাকবে না।'

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, পরিস্থিতি দেখে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রয়োজন হলে গরুর ট্রাক পূর্ব লিংক রোড দিয়েও পারাপার করা হবে। কিন্তু যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঠেকাতে মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটার এই দুই লেন অংশটিকে একমুখী রাখা দরকার বলে মনে করছেন তারা।

'সড়কে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে রাস্তা ঘেকে গাড়ি সরাতে অনেক সময় লাগে,' বলেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে টাঙ্গাইল ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ২৫ জুন থেকে ৭০০ পুলিশ দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও হাইওয়ে পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য বিভাগও দায়িত্ব পালন করবে।

তিনি বলেন, 'ভূঞাপুর রোডে বাইপাস করা গাড়ি যেন আটকে না থাকে, সেজন্য ইতোমধ্যে গোবিন্দাসীতে রাস্তার একটি বাঁক সোজা করা হয়েছে। রাস্তার খানাখন্দ মেরামত করা হচ্ছে। কাছাকাছি গরুর হাটের লোড-আনলোডের জন্য আলাদা স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ভূঞাপুর রোডের দুটি স্থানের রেলওয়ে গেট সম্ভাব্য কম সময় বন্ধ রাখার জন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। বৃষ্টি না হলে আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।'

Comments

The Daily Star  | English
Strategies we can employ in tariff talks with the US

US tariff talks: Bangladesh writes to USTR, seeking date

The negotiation team from Bangladesh will fly to America once the USTR fixes a date for the talks

9h ago