জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল না হলেও নিয়ন্ত্রণে আছে: ডিএমপি কমিশনার

হোলি আর্টিজান হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে আজ। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

দেশ থেকে জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল না হলেও তা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।

হোলি আর্টিজান ক্যাফেতে হামলায় নিহত ২ পুলিশ সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আজ শনিবার তিনি এ মন্তব্য করেন।

খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, 'আমরা বলতে পারি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। কারণ জঙ্গিবাদের সুপ্ত বীজ এখনো বিদ্যমান থাকতে পারে।'

২০১৬ সালের ১ জুলাইয়ের মর্মান্তিক ঘটনার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, 'ক্যাফেতে জঙ্গিরা বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে হত্যা করে। এই হামলার পর উদ্ধার অভিযানে গিয়ে ২ সাহসী পুলিশ সদস্য নিজেদের জীবন ত্যাগ করেন।'

খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ২০১৫-১৬ সালে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিভিন্ন জঙ্গি হামলা চালানো হয়।

হোলি আর্টিজান হামলার পর আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা তাদের প্রকল্প বন্ধ করে দেয় এবং ভয়ে দেশ ছেড়ে চলে যায় উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুলিশ ও জনগণের দৃঢ় অবস্থান ছিল জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূলে আমরা যে বদ্ধপরিকর, তা আমাদের উন্নয়ন অংশীদারদের কাছে প্রমাণিত হয়েছে। ফলস্বরূপ, তারা ফিরে আসে এবং আমাদের উন্নয়নের যাত্রা অব্যাহত থাকে।'

তিনি আরও বলেন, তখন থেকে বাংলাদেশে জঙ্গিদের গ্রেপ্তার ও বিচার অব্যাহত রয়েছে, যার ফলে বর্তমানে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জঙ্গিবাদ নির্মূল না হলেও আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি যে, এটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।'

জেএমবি ও নব্য জেএমবির মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'জঙ্গি সংগঠনগুলোর কোনো তৎপরতা নেই।'

তবে তিনি জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়ার মতো নতুন জঙ্গি সংগঠনের উত্থানের বিষয়ে সতর্ক করেন, যাদের গ্রেপ্তার ও বিচারের জন্য পুলিশ ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছে।

ডিএমপি কমিশনার গোলাম ফারুক বলেন, 'জঙ্গিদমনে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম এবং র‌্যাবের মতো বিশেষায়িত ইউনিট প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া, জঙ্গিবাদের ঝুঁকি সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।'

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের কূটনৈতিক এলাকায় অবস্থিত হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় আগ্নেয়াস্ত্র, চাপাতি ও গ্রেনেড নিয়ে ৫ জঙ্গি ঢুকে পড়ে এবং সেখানে যারা ছিলেন, তাদের জিম্মি করে। পরবর্তীতে জঙ্গিরা ৩ বাংলাদেশি, ৭ জাপানি, ৯ ইতালীয় ও ১ ভারতীয় নাগরিককে হত্যা করে।

সেনাবাহিনীর কমান্ডোদের উদ্ধার অভিযানে জঙ্গিরা নিহত হয়। ১২ ঘণ্টার সংঘর্ষে ২ পুলিশ কর্মকর্তা ও ক্যাফের ১ শেফও নিহত হন। পরে রেস্তোরাঁর ১ আহত কর্মীও মারা যান।

২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ৭ জঙ্গিকে এ হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করে এবং তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ট্রাইব্যুনাল এ ঘটনাকে অপমানজনক ও বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র হননের লক্ষ্যে চালানো হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—রাকিবুল ইসলাম রিগ্যান ওরফে রাফিউল ইসলাম, রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ আসলাম হোসেন ওরফে র‍্যাশ, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মোহাম্মদ হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে সাগর, মামুনুর রশিদ রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ।

ট্রাইব্যুনাল মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাকে খালাস দেয়।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন।

Comments

The Daily Star  | English

ACC to get power to probe corruption by Bangladeshis anywhere, foreigners in Bangladesh

The Anti-Corruption Commission (ACC) is set to receive sweeping new powers under a proposed ordinance that will allow it to investigate corruption by Bangladeshi citizens, both at home and abroad, as well as by foreign nationals residing in the country. .The draft Anti-Corruption Commissio

48m ago