‘উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে আমরা নিজস্ব মেধা ও চিন্তার প্রয়োগ ঘটাব’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ের শাপলা হলে আজ রোববার ‘প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০২৩-২৪’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর ফেলোশিপের (পিএমএফ) ফেলোসহ উচ্চশিক্ষার্থীদের দেশের ব্যাপক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্যে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানের সঙ্গে নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাভাবনা প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।

বিশ্বব্যাপী শীর্ষ র‌্যাংকিংয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) আয়োজিত ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ১০ জনকে পিএইচডি ফেলোশিপ ও ৩৮ জনকে মাস্টার্স ফেলোশিপ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমরা কখনই অন্যের মডেলের ওপর নির্ভর করব না। দেশের সার্বিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে আমরা নিজস্ব মেধা ও চিন্তার প্রয়োগ ঘটাব।'

তিনি বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান, জলবায়ু, প্রাকৃতিক পরিবেশ, দেশবাসীর মানসিকতা, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণের জন্যে ফেলোদের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমত আমাদের দেশকে জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং অনুভব করতে হবে যেখান থেকে আপনি জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। দেশের উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরি করতে আপনাকে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জ্ঞানের সাথে দেশের প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করার জ্ঞানকে সমন্বয় করতে হবে যা টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ প্রতিটি খাতে উন্নয়নের জন্যে সরকারের পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সঠিক পরিকল্পনা যে দেশকে সার্বিক উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে পারে তা গত সাড়ে ১৪ বছরে তারা প্রমাণ করেছেন।

বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্যে এ পর্যন্ত ২৭৭ জনকে মাস্টার্স এবং ১০৮ জনকে এই পিএইচডি ফেলোশিপ দেয়া হয়েছে।

এই বৃত্তি পেতে হলে প্রত্যেক আবেদনকারীকে আগে নিজ যোগ্যতায় বিশ্বের ১০০ র‌্যাংকিংয়ের মধ্যে থাকা যে কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করতে হয়।

ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গর্ভন্যান্স ইনোভেশান ইউনিট (জিআইইউ)-এর আওতায় এই বৃত্তির জন্যে আবেদন করতে হয়। 

সকল খাতে সম্পদের সক্ষমতার উন্নয়ন ঘটাতে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী এই পিএমএফ চালু করেন।

জিআইইউকে পিএমএফ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

সরকারি কর্মকর্তা বিসিএস ও নন বিসিএস এবং বেসরকারি প্রার্থী এই তিন ভাগে বৃত্তিটি প্রদান করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর বৃত্তি পাওয়া এসব ফেলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে।

অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, এবং প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বক্তব্য রাখেন।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন জিআইইউর মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল লতিফ।

মাস্টার্স ও পিএইচডি ফেলোদের পক্ষে যথাক্রমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. শিবলী ইসলাম এবং গণস্বাস্থ্য ফাউন্ডেশনের গবেষণা সহকারী আফিফা আনজু তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

পিএইচডি ফেলো, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপসচিব ড. কেমএম আলমগীর কবির তার অনুভূতির কথা জানান।

শেখ হাসিনা জনগণের অর্থে বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশে ফিরে জনগণ ও দেশের কল্যাণে কী অবদান রাখছেন- তা সবসময় ভেবে দেখতে পিএমএফ ফেলোদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি আরো বলেন, 'বিদেশি উচ্চ শিক্ষা থেকে অর্জিত জ্ঞান ব্যবহার করে আপনারা দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কী করছেন- তা মনে রাখবেন।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সব ছেলে-মেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী, কারণ তারা বর্তমানে প্রযুক্তির যুগে বিশ্বের অনেক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমি আমাদের ছেলে-মেয়েদের বলতে চাই যে- তোমরা প্রতিভা বিকাশের জন্য প্রযুক্তির দ্বারা তৈরি সুযোগকে কাজে লাগাও।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এটি আমাদের লক্ষ্য এবং আমরা লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাই। আমরা পিছিয়ে পড়তে চাই না।

মেধাবীদের দেশের মশালবাহক আখ্যায়িত করে- তিনি বলেন, আমি মনে করি- মেধাবীরা তাদের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আলোর পথ দেখাবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে কারণ শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির উন্নতি ও উন্নতি সম্ভব নয়।

২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে ৮৮,১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা উল্লেখ করে- তিনি আরও বলেন, তার সরকার শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য ফেলোশিপ প্রদানসহ সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার মেরিটাইম, অ্যারোস্পেস, এভিয়েশন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মতো বিভিন্ন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে শিক্ষাকে বহুমাত্রিক করেছে।

তিনি বলেন, তার সরকার গবেষণা ও বিজ্ঞানকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং উচ্চশিক্ষার্থীদের গবেষণায় গুরুত্ব দিতে বলেন।

তিনি বলেন, গবেষণার মাধ্যমে তারা দেশের খাদ্যকে পর্যাপ্ত করে তুলেছেন।

তিনি বলেন, 'চিকিৎসা-বিজ্ঞানে গবেষণা খুবই কম। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানে আমাদের আরও গবেষণা প্রয়োজন রয়েছে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে ও আজকের তরুণরাই হবে স্মার্ট দেশ গড়ার সৈনিক।

শেখ হাসিনা বলেন, 'দেশের উন্নয়নের অদম্য গতি কেউ থামাতে পারবে না।'

Comments

The Daily Star  | English

SC Secretariat Ordinance: Judges may hold executive posts

Lower court judges will be able to hold executive positions in the law ministry as well as state entities even after the establishment of a Supreme Court secretariat aimed at keeping the judiciary free from the executive’s influence, says a draft ordinance.

4h ago