রংপুরে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জনসভা, ৮ রুটে বিশেষ ট্রেন

প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় সাড়ে ৪ বছর পর আগামী বুধবার রংপুর সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন বিকেলে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগের জনসভায় বক্তব্য দেবেন তিনি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের ৫৮টি উপজেলার প্রায় প্রতিটি থেকে প্রায় ৩-৪ হাজার মানুষ যোগ দেবেন এ জনসভায়।

আর এজন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছে ৮টি বিশেষ ট্রেনের। ট্রেনগুলো দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বুধবার রংপুর যাবে।

এ তথ্য নিশ্চিত করে রেলওয়ে পশ্চিম অঞ্চল জোনের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ট্রেনের ভাড়া দলের স্থানীয় নেতারা দেবেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে রংপুরে। এ সফরে প্রধানমন্ত্রী প্রায় ১ হাজার ২৪০ কোটি টাকার ২৭ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। 

এছাড়া, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার নির্মাণ, রংপুর জেলায় বিটাক কেন্দ্র স্থাপন, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়, রংপুর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অফিস ভবনসহ ৫ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এসব উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। প্রধানমন্ত্রী রংপুরকে যেভাবে উন্নয়নের মোড়কে সাজিয়েছেন, তা বিগত কোনো সরকার করতে পারেনি।'

এর আগে ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর রংপুর সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রংপুর থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা রংপুরে আসছেন।

এ কারণে জিলা স্কুল মাঠে আয়োজিত এ জনসভায় বিপুল সংখ্যক জনসমাগম ঘটাতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। স্কুল মাঠে নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। 

এ সফরকে সামনে রেখে পুরো রংপুর শহর ঢেকে গেছে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিশাল বিলবোর্ডে। রংপুরের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা হয়েছে তোরণ। সমাবেশ স্থলে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।  

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের আমলে রংপুরে রসিক গঠন, রংপুর মেট্রোপলিটন, রংপুরের পীরগঞ্জে মেরিন একাডেমি স্থাপন, ঢাকার সঙ্গে রংপুরের সংযোগে ৬ লেনের মহাসড়কসহ বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এছাড়া ক্যান্সার হাসপাতালসহ বেশ কিছু প্রকল্প উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। 

এসব উন্নয়নের মধ্যেও তিস্তা অববাহিকার লাখ লাখ মানুষের দুর্দশা লাঘবে তিস্তা মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর সফর থেকে নতুন করে উন্নয়নের ঘোষণা আশা করছে রংপুরবাসী। 

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগতম জানিয়ে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের মিছিল। ছবি: স্টার

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও উন্নয়ন বিশ্লেষক উমর ফারুক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশের অন্যান্য অঞ্চলের দিকে তাকালে রংপুর বিভাগের উন্নয়ন বৈষম্য ফুটে ওঠে। এ অঞ্চলের মানুষের জন্য উন্নয়ন বরাদ্দ কম, সরকারের তেমন কোনো মেগাপ্রকল্প নেই। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রীর সফরে পিছিয়ে পড়া রংপুর বিভাগকে এগিয়ে নিতে আরও বেশি উন্নয়নের ঘোষণা আসুক।' 

তার মতে রংপুর বিভাগ উন্নয়ন বোর্ড গঠন, তিস্তা মহাপরিকল্পনার জন্য অর্থ বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন, রংপুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, বন্ধ চিনিকল চালু ও ৪টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য অর্থ বরাদ্দ, রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, ওয়াসা গঠন, রংপুর সিটি করপোরেশনে প্রয়োজনীয় ও সম্মানজনক বাজেট বরাদ্দ, কর্মসংস্থানভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণে উদ্যোগ গ্রহণের আশা উচিৎ সরকারের পক্ষ থেকে।

তিস্তা অববাহিকার বাসিন্দাদের সংগঠন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাফিয়ার রহমান বলেন, 'ন্যূনতম উন্নয়ন বরাদ্দ পাওয়ায় রংপুরে দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি। তবে তিস্তা মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন রংপুরের কোটি মানুষের জন্য একটি সমাধান হতে পারে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে।'

রংপুর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম  ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর সফল করতে জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ কাজ করে যাচ্ছেন।'

রংপুরের ৮ জেলায় ৩৩টি সংসদীয় আসনের উল্লেখ করে সাবেক এই নেতা বলেন, 'আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাধ্যমে এই আসনগুলো পুনরায় তাদের দখলে নিতে চায়। এছাড়া আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক জোট জাতীয় পার্টিকে ৬টি আসনের মধ্যে ২টি দিয়েছে গত নির্বাচনে।'

জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবচেয়ে বড় দাবি তিস্তা মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন।' 

'প্রধানমন্ত্রী নিজেই রংপুরের উন্নয়নের রূপরেখা ঘোষণা করবেন,' যোগ করেন তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English

July charter implementation: Commission races against time to find out ways

Consensus Commission has yet to find a viable mechanism to ensure that the proposed constitutional reforms under the July charter will be implemented

9h ago