মৌলভীবাজার

পান চাষের পাশাপাশি গবাদি পশুপালনে স্বচ্ছলতা ফিরছে পুঞ্জিবাসীদের

পান চাষের পাশাপাশি গবাদি পশুপালনে স্বচ্ছলতা ফিরছে পুঞ্জিবাসীদের
ছবি: স্টার

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বালুকনা পুঞ্জির বাসিন্দা সুজন দফো। আগে শুধু পান চাষ করলেও এখন জীবিকার তাগিতে গরু পালনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। সুজন জানান, তিনি এর আগে কখনো গরু পালন করেননি। তবে গত কয়েক বছর ধরে পানের দাম কমে গেছে এবং পান খেত নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে।

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রাণিসম্পদ বিভাগ তাকে একটি গাভি দিয়েছিল। যেটি পালন শুরু করেন সুজন দফো। গাভিটির প্রতি মায়া লেগে যায় সুজনের। এক বছর পর বাচ্চা দেয়। পুরো বছর গরুর দুধ খাওয়ার পাশাপাশি, বিক্রিও করেন কিছু। পরে ওই গরুর বাছুরটি বিক্রিও করেন ৫০ হাজার টাকায়। এখন তার আরও একটি গরুর বাছুর আছে, যার বয়স ৮ মাস। 

সুজন জানান, গরু পালন করে তার বেশ লাভ হচ্ছে। পান চাষের পাশাপাশি আগে থেকে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করলে আরও লাভবান হতে পারতেন। এখন শুধু পানের ওপর ভরসা করতে হয় না। 

এ গল্প শুধু সুজন দফোর নয়। পুঞ্জিতে বসবাসকারী অনেক মানুষের। যারা ঝুঁকেছেন বিকল্প পেশায়। 

শুধু পান চাষের ওপর নির্ভর করায় সংসার চালাতে তাদের নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। মাঝেমধ্যেই পানের দাম কমে যায়, নানা ধরনের রোগেরও প্রাদুর্ভাব হয়। দুর্বৃত্তরা প্রায়শই পান গাছ কেটে দেয়, পুঞ্জির জমি দখল নিয়ে মামলাতো আছে। আর সঙ্গে আছে মহাজনের লোন। প্রতিনিয়ত এসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় পুঞ্জির বাসিন্দাদের। ক্রমেই এই সমস্যাগুলো বাড়ার কারণে পুঞ্জির মানুষের বিকল্প পেশায় আগ্রহ বাড়ছে।

গুজাছড়া পুঞ্জির বাসিন্দা নিকসন লামিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুধু পান চাষ করে সংসার চলে না। পানের উৎপাদনও দিন দিন কমছে। তাই আমিও বিনা খরচে গবাদি পশু পালন করছি। এটাই বরং বেশি লাভের।'

তিনি বলেন, 'প্রতিদিন গরুর দুধ বিক্রি করায় পরিবারের অভাব কিছুটা কমেছে।'

খাসি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রচার সম্পাদক সাজু মার্চিয়াং বলেন, 'সিলেট বিভাগে মোট ৯০টি পুঞ্জি (গ্রাম)। পান গাছের ঝুম চাষই আমাদের আয়ের একমাত্র উৎস ছিল। আমাদের অধিকাংশ মানুষই পান চাষের ওপর নির্ভরশীল। তবে এখন অনেকে বিকল্প পেশায় আগ্রহী হচ্ছেন।'

মৌলভীবাজার জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) সুবিমল লিন্ডোকিরি জানান, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বেরেঙ্গা পুঞ্জিতে গত ৮ মে বিভিন্ন জুম ক্ষেত থেকে প্রায় ৩ হাজার পান ও ৬০টি সুপারি গাছ কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। শুধু এই পুঞ্জিতেই নয়, প্রায় প্রতিটি পুঞ্জিতেই জুম দখলের জন্য হামলা মামলা বা পুঞ্জিদের ওপর হামলার ঘটনা রয়েছে।

কুলাউড়া উপজেলার লুটিজুড়ি পুঞ্জির বাসিন্দা রাম পাপাং বলেন, 'পুঞ্জিতে গবাদি পশু লালন-পালন অনেক সহজ এবং সাশ্রয়ী। গবাদি পশুগুলো অবাধে বিচরণ করে এবং পাহাড়ি অঞ্চলে পাওয়া প্রচুর প্রাকৃতিক ঘাস থাকায় গবাদি পশু পালন অনেক সহজ।'

পাহাড়ে অন্যান্য প্রচলিত কৃষি পদ্ধতির তুলনায় গবাদি পশু পালন আর্থিকভাবে অনেক বেশি লাভজনক। 

মৌলভীবাজারের গরু ব্যবসায়ী মিফতাউল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুঞ্জি এলাকায় অর্গানিক, খোলা মাঠে বেড়ে ওঠা গরুর ভালো চাহিদা রয়েছে। সহজে বেশি দামে বিক্রি করা যায়।'

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিঠুন সরকার জানান, পিছিয়ে পড়া পরিবারের লোকজনের আর্থিক সামর্থ্য, সঞ্চয় ও ভিন্ন কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষে ২০২০-২০২১ সালে ৭৪টি বকনা গাভি দিয়েছি। ২০২১-২০২২ সালে ৬১৮টি ভেড়া ও ২০২২-২০২৩ সালে ৭৭টি ষাড় গরু দেওয়া হয় যাতে তাদের জীবনযাপনে পরিবর্তন আসে। আগামী মাসে ৭০০ পরিবারকে ২০টি করে মুরগীর ছানা দেওয়া হবে।

সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির আর্থ-সামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ডা. অসীম কুমার দাস বলেন, 'মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর (ডিএলএস) "সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির আর্থ-সামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প" নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সমতল ভূমিতে বসবাসকারী পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের ২৯টি জেলার ২১০টি উপজেলায় সেটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়েছিল এবং ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Dozens of zombie firms still trading as if nothing is wrong

Nearly four dozen companies have been languishing in the junk category of the Dhaka Stock Exchange (DSE) for at least five years, yet their shares continue to trade on the country’s main market and sometimes even appear among the top gainers. 

2h ago