বন্ধ কারখানা খুলেছে, গণমাধ্যমে কথা বলায় শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ

আশুলিয়ার বন্ধ কারখানা খুলেছে। ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/স্টার

ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ের বন্ধ কারখানাগুলো আজ মঙ্গলবার খুলেছে।

আজ সকাল থেকে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর আওতায় ১ হাজার ৭৯২টি কারখানা মধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কারখানাগুলোর একটি ছাড়া সবকটি খুলেছে। সকাল থেকে এসব কারখানায় কাজ শুরু করছেন শ্রমিকরা। তবে কিছু কারখানায় আংশিক কাজ চলছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে আশুলিয়া শিল্পপুলিশ পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, 'আজ একটিমাত্র কারখানা ছাড়া বাকিগুলোতে কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে কিছু কারখানায় আংশিক কাজ চলছে। শ্রমিকরা কাজ না করায় নাবা নীট কারখানাটি এখনো বন্ধ রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।'

মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার জামগড়া, বেরন, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর, জিরাবো, কাঠগড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ কারখানার সামনে জড়ো হয়ে আছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।

কিছু কিছু কারখানার মূল ফটকে কারখানা খোলার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন কারখানার সামনে রয়েছে পুলিশ। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে জলকামান।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সোমবার রাতে কারখানার পক্ষ থেকে শ্রমিকদেরকে ফোন করে কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে।

সকাল ৯টার দিকে জামগড়া এলাকার বেশ কয়েকটি কারখানার সামনে বেশ কয়েকজন পোশাকশ্রমিককে কারখানার ফটকের সামনে জড়ো হয়ে থাকতে দেখা যায়।

মরজিনা নামে এক পোশাক শ্রমিক বলেন, 'যে মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে সেই মজুরিতে পরিবার নিয়ে চলা কষ্টকর হবে। তারপরও কাজ করতে হবে। কারখানা থেকে আমাদের কাজে আসতে বলেছে তাই এসেছি।'

গণমাধ্যমে কথা বলায় শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ

আন্দোলনের সময় গণমাধ্যমে কথা বলায় এক পোশাক শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে। পোশাকশ্রমিক সাবিনা আক্তার জামগড়া ছয়তলা এলাকায় অবস্থিত একটি কারখানায় কাজ করেন।

মঙ্গলবার সকালে জামগড়া ছয়তলা এলাকায় কারখানার সামনে সাবিনা আক্তারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গণমাধ্যমে আমি বলেছিলাম রুম ভাড়া ৩৫০০ টাকা, পেয়াজের কেজি ১২০ টাকা এই বেতনে চলবো কেমনে? বেতন বাড়াতে হবে। আমি কি খারাপ কিছু বলেছি? আজ আমাকে কারখানা থেকে ফোন করে বলা হলো তুমি বক্তব্য দিছো। তোমার চাকরি নেই। মামলা হয়েছে তুমি কারখানায় এসো না।'

'আজ আমি আমার নায্য দাবি করতে গিয়ে কারখানার মালিক আমার চাকরি নিয়ে গেল। আমি তো কোনো অন্যায় করিনি। আমি অন্যায় করলে আমাকে শাস্তি দিক,' বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পরেন সাবিনা।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি এসএম কামরুজ্জামান বলেন, পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় এ পর্যন্ত আশুলিয়া থানায় ১৭টি পৃথক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট ৬১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত অন্তত সাড়ে ৪ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।

এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের সাধারণ সম্পাদক, সারোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পোশাক শ্রমিকদের যেকোনো ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনের পর মালিকপক্ষ শ্রমিক ছাঁটাই করে থাকে। এটা অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। এটা একটি খারাপ প্র্যাকটিস। মালিকপক্ষকে এটা থেকে বেরিয়ে আসার অনুরোধ করছি।'

'এছাড়া আন্দোলনের সময় যারা কারখানা ভাঙচুর করেছে, অন্যায় করেছে তারা শ্রমিক না। তাদের পুলিশ খুজে বের করবে। আশুলিয়ায় অনেকগুলো মামলা হয়েছে। এসব মামলায় যেন কোনো শ্রমিককে হয়রানি করা না হয় সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করব। শ্রমিকরা আতঙ্কের মধ্যে আছে, ভয়ে আছে,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus, Charter, and Our Future

Yunus, Charter, and Our Future

Can the vision for 'New Bangladesh' ignore the poor, farmers, workers, youth, women, or employment and climate crises?

17h ago