অচেনা গাবতলী

আজ রাতে গাবতলীর প্রতিটি বাস কাউন্টারই প্রায় ফাঁকা ছিল। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পা ফেলার জায়গা থাকবে না—এটাই ছিল চিরচেনা চিত্র। কিন্তু এবারের ঈদযাত্রায় গাবতলীর চেহারা যেন অচেনা।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত গাবতলী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি বাস কাউন্টার ফাঁকা। বেশকিছু বাস বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য কাউন্টার ছেড়ে বের হলেও সিট খালি থাকায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী ডাকছে। বাসগুলো যাত্রীদের টানাটানিও করছেন তাদের বাসে তোলার জন্য।

বাসের চালক ও হেলপারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উত্তরবঙ্গের, বিশেষ করে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের যাত্রী পাচ্ছে না ওই রুটের বাসগুলো। সিট পূরণ করতে তারা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নিচ্ছেন বলেও দাবি করেন।

ভাড়া কম নেওয়ার এই দাবির সত্যতাও পাওয়া যায় কিছু সময়ের মধ্যেই।

যাত্রী না থাকায় বাসগুলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী খুঁজছে। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে একসঙ্গে গাবতলীতে অপেক্ষা করছেন ২২ জন যাত্রী। কথা বলে জানা যায়, তারা হাজারীবাগে একটি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।

এই ২২ জন চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে ভাড়া দিতে চাইছেন মাত্র ৩০০ টাকা করে। এমনকি একটি বাসের হেলপার তাদের বলছিলেন, '৪৫০ হইলে কন, ওস্তাদরে (বাসের চালক) রাজি করাই।'

প্রায় অর্ধেক ভাড়া দিতে চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ২২ জনের একজন বলেন, 'এতো টানাটানি করছে, তাই ভাড়া কম বলে দেখলাম। রাজি হলে ভালো, না হলে কিছু বেশি দিয়ে চলে যাব।'

সবসময় ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করেন জানিয়ে তারাও স্বীকার করেন যে, যাত্রী কম হওয়ার সুবিধা হিসেবেই তারা বেশ কম ভাড়ায় এই ঈদের সময়ে বাড়ি যেতে পারছেন।

রাজশাহীগামী ওয়াসিম ট্রাভেলসের সুপারভাইজার মো. মামুন দাবি করেন, 'ঢাকা থেকে রাজশাহীর সরকারি ভাড়া নির্ধারণ করা আছে ৮৫০ টাকা।'

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'গতকাল আমরা ১ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া নিয়েছি। অথচ আজ ৬০০ টাকা করে ডেকেও যাত্রী পাই না। ঈদের বাজারেও যাত্রী নেই, বুঝলাম না কি হলো।'

একই কথাই বলছিলেন ঢাকা থেতে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী রজনীগন্ধা পরিবহনের সুপারভাইজার সঞ্জু সরকার।

তিনি জানান, তার বাসে বেশিরভাগ যাত্রী তুলেছেন ৬০০ টাকা ভাড়ায়। বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করেও নিয়েছেন।

'গতকাল ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা ভাড়া নিয়েছি। আজ ভাড়া আর কার কাছ থেকে নেবো, যাত্রীই তো পাই না,' বলে সঞ্জু।

ভাড়া বেশি নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সঞ্জু বলেন, 'ঈদের সময় যাত্রী নিয়ে যাই, আসার সময় প্রায় খালি গাড়ি আসে। এদিক থেকে একটু বেশি ভাড়া নিয়ে খালি গাড়ির খরচটা পুষিয়ে নিতে হয়।'

যাত্রী কম থাকায় সময় মতো টার্মিনাল থেকে বাসও ছাড়েননি বলে জানান তিনি।

তবে, গাবতলীতে এখনো দক্ষিণের জেলাগুলোর যাত্রী রয়েছে। যদিও গতকালের চেয়ে এসব জেলার যাত্রী সংখ্যা কম থাকায় ভাড়াও কিছুটা কম।

নিজের তিন মেয়েকে নিয়ে যশোর যেতে গাবতলীতে আসা মমতাজ বেগম বলেন, 'গতকাল তো টিকিটই পাইনি। খবর নিয়ে দেখলাম ১ হাজার ২০০ টাকার নিচে কোনো বাসে সিট পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আজ এলাম।'

তিনি জানান, টিকিট একটু কম থাকলেও বিভিন্ন কাউন্টার তার কাছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া চেয়েছে প্রতিটি সিটের জন্য।

কাউন্টার ফাঁকা থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে দেশ ট্রাভেলসের মো. তনু বলেন, 'আমাদের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। এখন কাউন্টার ফাঁকা থাকলেও বাস ছাড়ার সময়ে যাত্রীরা চলে আসেন।'

 

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

2h ago